উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
দশম শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের সামনে ঠিকঠাক আর ন’টি মাস সময় রয়েছে শিক্ষার্থী-জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য। যদিও আপাতদৃষ্টিতে মাধ্যমিক পরীক্ষা ‘আসছে বছর’, কিন্তু ইতিমধ্যেই বহু স্কুলে দশম শ্রেণীর প্রথম পার্বিক অভীক্ষাটি শেষ। অতএব, আর দেরি নয়, চলো মাঠে নামি!
যুগপরিবর্তনে পাঠ্যক্রমের যতই বদল ঘটুক, বাংলা পরীক্ষায় নিশ্চিত নম্বরপ্রাপ্তিতে চিরদিনের ভরসা জোগায় ব্যাকরণ। তাই আজ প্রথম ভাষার প্রস্তুতির গোড়ার কথা বলব ব্যাকরণ নিয়েই।
বর্তমানে মাধ্যমিক পরীক্ষার বাংলা প্রথম ভাষার প্রশ্নে ব্যাকরণে মোট বরাদ্দ ষোলো নম্বর। প্রশ্নপত্রে ১.১০—১.১৭- এই ৮টি বহুবিকল্পীয় প্রশ্ন এবং ২.৪ এর ৮টি অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থাকে। এই দুটি ক্ষেত্রের বিশেষত্ব অনুযায়ী প্রস্তুতি পরিকল্পনা আলোচনার আগে আমরা ব্যাকরণের সামগ্রিক পাঠ্যসূচি ও তার অধ্যয়ন কৌশলটি দেখে নেব।
প্রথম অধ্যায় কারক ও অকারক সম্পর্ক। কারকের বিবিধ শ্রেণী বিভাজন, তাদের উদাহরণ ও সংজ্ঞা এবং পরস্পরের তুলনা ও পার্থক্য যত্নশীল পাঠ ও অনুশীলনে আয়ত্ত করতে হবে। যদিও পূর্বের নিচু শ্রেণী থেকেই এই অধ্যায়ের পাঠের অভ্যাস আছে শিক্ষার্থীদের। তবুও মনে রাখতে হবে এটি দশম শ্রেণী। তাই অধীত বিষয়কে যুক্তিযুক্ত বিশ্লেষণ ও প্রমাণের দ্বারা প্রতিষ্ঠার ক্ষমতাই কাম্য। ছোট্ট একটা উদাহরণ লক্ষ করো: ‘অন্ন যেতেছে লুটিয়া’—এই বাক্যে কর্তা কে? সাধারণভাবে আমরা জানি ক্রিয়াকে ‘কী’ দিয়ে প্রশ্নে যে উত্তর পাই তা ‘কর্ম’। তাহলে? এক্ষেত্রে মনে করে দেখো, ব্যাকরণে যে কর্ম সেও কর্তৃপদের ন্যায় ক্রিয়া সম্পাদন করলে ‘কর্তা’ বলে বিবেচিত হয়। অতএব ‘অন্ন’ পদটি এই বাক্যে কর্তা, বলা ভালো ‘কর্ম-কর্তা’। সুতরাং, এই অধ্যায়ের এমন বিশেষ প্রয়োগগুলি—ব্যতিহার কর্তা/কর্ম, সমধাতুজ কর্তা / কর্ম / করণ, অক্ষুণ্ণ কর্ম, ঊহ্য কর্তা ও অনুক্ত কর্তার পার্থক্য, নির্ধার সম্বন্ধ, বিভক্তি ও অনুসর্গের প্রকারভেদ স্মরণে রেখো।
দ্বিতীয় অধ্যায় সমাস। বিভিন্ন পরিভাষা ও ব্যাখ্যা (ব্যাসবাক্য,
সমস্যমানপদ, পূর্বপদ, পরপদ, উপপদ, উপমান, উপমেয়, উপমিত ইত্যাদি) নিবিড় ও যুক্তিগ্রাহী পাঠানুশীলনে আয়ত্তে রাখো। ‘দশানন’ কেন দ্বিগু না হয়ে বহুব্রীহি সমাস হবে তা এই যুক্তিই নির্ভুল চিনিয়ে দেবে। নইলে কেবল দশটি মাথার (আনন) সমাহারে যত্র তত্র রাবণদর্শন করতে হবে—এই মজা কি ব্যাকরণ ছাড়া আর কেউ দিতে পারে?
তৃতীয় এবং চতুর্থ অধ্যায় যথাক্রমে বাক্য ও বাচ্য। যোগ্যতা-আকাঙ্ক্ষা-আসত্তির ত্রিবিধ শর্ত, উদ্দেশ্য-বিধেয়গত স্বচ্ছ ধারণা, বাক্যের অর্থগত ও গঠনগত শ্রেণী বিভাগ ও রূপান্তর, যোজকপদ, স্বাধীন/প্রধান/অপ্রধান খণ্ডবাক্য, বাচ্যান্তর, লুপ্তকর্তা/সম্বন্ধকর্তা ভাববাচ্য, কর্মকর্তৃবাচ্য, ঘটক কর্তৃবাচ্য ইত্যাদি নিয়মিতভাবে অনুশীলন করতে হবে।
মনে রেখো ১.১০ থেকে ১.১৭ দাগ নম্বরের বহুবিকল্পীয় প্রশ্নগুলি সাধারণত জ্ঞান ও বোধমূলক হয়। যেমন, ‘বাঁশি বাজে’—এটি একটি (ক) সম্পাদক কর্তৃবাচ্য (খ) অসম্পাদক কর্তৃবাচ্য (গ) লুপ্তকর্তা ভাববাচ্য (ঘ) গৌণ কর্মকর্তৃবাচ্য—এর উত্তর জ্ঞান ও বোধের দ্বারাই অধীত অধ্যায় থেকে খুঁজে বার করতে হবে।
অন্যপক্ষে ২.৪ দাগ নম্বরের অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলি হয় মূলত প্রয়োগমূলক। যেমন, ‘হিংসার দ্বারা মহৎকার্য সাধিত হয় না’ (কর্তৃবাচ্যে রূপান্তরিত করো)—এটি অধীত জ্ঞানকে প্রয়োগ করতে হবে নিজের ক্ষমতায়।
অবশ্যই এর অন্যথাও হতে পারে। তবু ব্যাকরণের নিত্যদিনের চর্চায় প্রশ্নানুযায়ী সমাধানে এই বিশেষ দিকটি মনে রেখো।
আশাকরি আগামী প্রস্তুতির দিনে তোমরা পাঠ্য ব্যাকরণ অংশটি খুঁটিয়ে পড়ে, ঘড়ি ধরে টেস্ট পেপার্স সমাধান করে যথাযথ জ্ঞান-বোধ ও প্রয়োগের দক্ষতায় পূর্ণ নম্বরের সাফল্যে ভরে উঠবে। তাই বাংলায় বেশি নম্বরপ্রাপ্তির জন্য ব্যাকরণকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিটি অধ্যায় মনোযোগ দিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে হবে।