উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
নতুন ক্লাসে ওঠার আনন্দ
আনন্দ, দুঃখ, প্রত্যাশা, অভিজ্ঞতা, পারস্পরিক মেলবন্ধনে আবদ্ধ। ফলে অভিজ্ঞতায় আনন্দ বা দুঃখ দুটিই থাকে। নতুন ক্লাসে ওঠার আনন্দটাই আলাদা। আর সেই ক্লাসটা যখন নবম তখন আনন্দটা অন্যান্য ক্লাসের চেয়ে একটু বেশিই। মনের মধ্যে তাই আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের কলরোল। প্রথমে ফুলপ্যান্ট থেকেই শুরু করছি। সত্যি বলতে কী, ফুলপ্যান্ট পরে আমার দস্যিপনাটা বেড়েছে। হাফপ্যান্ট না পরে ফুলপ্যান্ট পরায় যেন আমার সম্মানটাও বেড়েছে। নতুন বইপত্রের গন্ধে চারিদিক ভরে উঠেছে। কেউ যখন কোন ক্লাসে পড়ি জিজ্ঞেস করছে, তখন ভুল করে বলেই ফেলছি, ‘ক্লাস এইটে পড়ি।’ নতুন ক্লাসে উঠে আমার অনেক নতুন বন্ধু হয়েছে। নতুন বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে খেলতে কখন যে টিফিন পিরিওডটা শেষ হয়ে যায়, বুঝতেই পারি না। যখন থেকে দেখতাম বড় দাদারা সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে, ভাবতাম আমিও কবে সাইকেল পাব। আজ সেই ইচ্ছাটাও পূরণ হতে চলেছে। মানুষের ধর্ম হল— মানুষ সর্বদাই রক্ষণশীল না থেকে নতুনের পিছনে ছুটে যেতে চায়, আমিও তার ব্যতিক্রম নই।
অয়ন সিংহ হালদার, নবম শ্রেণী,
সরিষা রামকৃষ্ণ মিশন শিক্ষামন্দির (উচ্চমাধ্যমিক)
নতুন বইয়ের মলাটের গন্ধ
ছোট থেকেই ভাবতাম কবে আমি বড় হব? ক্লাস টেনের দাদাদের মতো বড় হতে ইচ্ছে করত। এবার ক্লাস নাইনের পরীক্ষাটা খুব ভালো করে দিলাম। পরীক্ষা শেষে কয়েক দিন দারুণ মজা করলাম, ঘুরে, খেলাধুলো করে। তবে সব কাজের শেষে মনে হতো, কবে এবার দশম শ্রেণীতে উঠব? বহু দিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। অবশেষে জানুয়ারি মাসে নতুন ক্লাসে বসার সুযোগ পেলাম। মনে তো আনন্দের শেষ নেই। নতুন ক্লাস, ক্লাস টিচার, নতুন বইয়ের মলাটের গন্ধে বিহ্বল হয়ে পড়লাম। নতুন ক্লাসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ল দায়িত্ব। স্কুলের বহু অনুষ্ঠানের কাজও ভাগ করে দেওয়া হয় আমাদের। বেশ ভালো লাগছিল। স্যারেরা আমাদের পাশে বসিয়ে নানা বিষয় নিয়ে আলাপ, আলোচনা করেন। অন্য ক্লাসের চাইতে বাড়তি গুরুত্ব পাই। নতুনভাবে পড়াশোনা, কাজ, নতুন বই নিয়ে বেশ ভালোই আছি। নতুনভাবে জীবনকে জানছি, চিনছি এগিয়ে যাবার আনন্দে। তাই মনে হয়—Miles to go before I Sleep.
পত্রক বন্দ্যোপাধ্যায়, দশম শ্রেণী, শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল
শিক্ষকদের পড়ানোর ভঙ্গি
নতুনে আগ্রহ সবারই থাকে। জামাকাপড় থেকে নতুন জিনিস সবাই পেতে ভালোবাসে। আর প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া তো নতুন কিছু শেখার আশায়। প্রতিটি পরীক্ষা ও মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা তো নতুন ক্লাসে ওঠার জন্যই। সবচাইতে ভালো লাগে যে দিন নতুন বই আর খাতা পাই। ওই নতুন বইয়ের মিষ্টি গন্ধে লুকিয়ে থাকে কত অজানা রহস্য। কত কথা ও কাহিনী। সত্যি, আর সেই বই পড়ে যখন জানতে পারি নিজের দেশ, সমাজ ও মানুষজনদের— খুব আনন্দ হয়। ভালো লাগে এক-একজন শিক্ষকদের পড়ানোর ভঙ্গি। এই শিক্ষক, শিক্ষিকারা আমাদের মধ্যে আদর্শের বীজ বুনে দেন। প্রতিদিন পড়াশোনা বন্ধু-বান্ধবদের আচার-ব্যবহারের মধ্য দিয়ে কত কিছু শিখি। মুক্তি ঘটে একঘেয়েমি থেকে। আর যত নতুন ক্লাসে উঠি তত ছোটরা সম্মান করতে থাকে বড় দাদা বলে।
সৌমাল্য চৌধুরী, দশম শ্রেণী,
মিত্র ইনস্টিটিউশন (মেন)
নতুন ক্লাস, নতুন পরিবেশ
কিছুটা ভয়। কিছুটা উত্তেজনা, বারবার ঘাম হওয়া, শুকনো মুখ, ঘন ঘন জল পিপাসা, নতুন ক্লাস, অজানা পরিস্থিতি, এ সব মিলিয়ে নতুন নতুন ক্লাসে ওঠা। যেদিন প্রথম ক্লাসে উঠি আনন্দর পাশাপাশি একটা পিছুটান থাকে। একটা পরিবেশ ছেড়ে একটু আলাদা পরিবেশ। আর নতুন ক্লাস টিচার। তিনি কেমন জানতে চিনতে একটু সময় লেগে যায়। আর ভয় লাগে এই ভেবেও পড়ার চাপ কতটা হবে। তবে নতুন ক্লাসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বহু নতুন জিনিস পাওয়া যায়। ব্যাগ, বই, জুতো, ড্রেসসহ আরও কত কী? স্কুলে সিনিয়র বলে টিচাররা নানান বিষয়ে আলোচনা করেন, পাশাপাশি নানান দায়িত্ব পেয়ে মনে মনে বেশ খুশি হই।
জয়া দাশগুপ্ত, দশম শ্রেণী,
বেথুন কলেজিয়েট স্কুল
নতুন জগৎ
সব দিনগুলোর কথা মনে নেই। সেই কবে যে মা, বাবার হাত ধরে ভর্তি হয়েছিলাম নার্সারিতে। তারপর কত মাস, কত বছর কেটে গেছে। একটু একটু করে বড় হয়েছি। চিনতে শিখেছি কত বই, কত নতুন জগৎ। ছোট্ট থেকে আজও এই রেজাল্ট বেরনোর দিনটার অপেক্ষা করি। আমার মতো বাড়ির লোকেরা একইভাবে তাকিয়ে থাকে নতুন ক্লাসে ওঠার আনন্দে। সবসময় চেষ্টা করি ভালো রেজাল্ট করার। আর বাবা যখন বুকলিস্ট মিলিয়ে ব্যাগ ভর্তি বই আনেন। বইয়ের সেই লেখা, ছবি, ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে নতুন গল্পে মনটা ভরে ওঠে। হাসিটা চওড়া হয়। এগিয়ে চলার আনন্দে মন ভরে ওঠে।
মনামী ঘোষ, দশম শ্রেণী,
হোলিচাইল্ড ইনস্টিটিউট
আমার স্বপ্নের স্কুল
‘বাঁকুড়া জিলা স্কুল’ আমার স্বপ্নের স্কুল। গুটি গুটি পায়ে এসে ভর্তি হয়েছিলাম প্রথম শ্রেণীতে। এখানকার ইট, কাঠ, পাথরের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক। খুব ভালোবাসি আমার স্কুলকে। তবে প্রতি বছর নতুন ক্লাসে ওঠা আসে প্রথাগত নিয়মে। ক্লাসের প্রথম দিনটা কখনওই স্কুল যেতে মিস করি না। প্রথম ক্লাসের ক্লাস টিচারের মুখে রোলকলের জন্য অপেক্ষা করি। আমার কত রোল নাম্বার হল সেই দিকে চেয়ে থাকি। তবে মনে একটা ভয় থাকে, মানিয়ে নিতে পারব তো! নিজের বই খাতার সঙ্গে তাড়াতাড়ি পরিচিত হতে পারব তো! যদিও সহপাঠীরা সবই একই থাকে। কিন্তু নতুন সিলেবাস রপ্ত করতে সময় লাগে। কিন্তু নতুন শিক্ষকদের ভালোবাসা ও স্নেহ পেয়ে ভালোই আছি নতুন ক্লাসে। চেষ্টা করব স্কুলের সুনাম রাখতে।
ঋজু মণ্ডল, অষ্টম শ্রেণী,
বাঁকুড়া জিলা স্কুল
বিশেষ উপহার পাই
প্রতি বছরই পরীক্ষার পর মামাবাড়ি যাই। আর রেজাল্টের দিন ফিরে আসি। দিদিমা, মা, বাবা সবসময়ই বলে রাখেন ভালো রেজাল্ট করলে বিশেষ উপহার পাব। একটু হলেও উপহারের আশায় ভালো করে পড়াশোনা করি। বাড়ি ফিরেই স্নান, ঠাকুর পুজো সেরে মায়ের সঙ্গে স্কুলে যাই। ক্লাসের ঘণ্টা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনার পারদ বাড়তে থাকে। যখন স্যাররা ক্লাসে রেজাল্ট নিয়ে ঢোকে বুক কাঁপতে থাকে। ভালো রেজাল্ট না হলে পুরস্কার তো পাব না। তবে নির্ধারিত সময়ে রেজাল্ট হাতে পেয়ে মন নেচে ওঠে খুশিতে। উঠে গেলাম নতুন ক্লাসে। বাড়ল দায়িত্ব। সঙ্গে নতুন একটা ঘড়ি পেয়ে আরও বাড়ল নতুন ক্লাসে ওঠার আনন্দ। সেই আনন্দের রেশ ধরে চলবে আগামী বছরের পড়াশোনা।
তম্নোঘ দাস, অষ্টম শ্রেণী
উত্তরপাড়া রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়
ছাত্র জীবনে নতুন ক্লাসে ওঠার আনন্দ
আমি অন্বেষা, শতবর্ষের আলোকে আলোকিত কংসাবতী তীরে সুসজ্জিত আমার বৈষ্ণবচক মহেশচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। খুব মনে পড়ে বাবার হাত ধরে স্কুলে পা রেখেছিলাম পঞ্চম শ্রেণীতে। তারপর ষষ্ঠ থেকে সপ্তম, অষ্টম, নবম। এখন আমি দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। দেখতে দেখতে কখন এতগুলো বছর কেটে গেল বুঝতে পারলাম না। নূতনকে কার না ভালো লাগে, যেমন গাছের কচিপাতায়, ফোটাফুলে, নূতন সূর্যের প্রভাতি আলোয় মন পাতা থাকে তেমনি ভাবে আমার মন নূতনকে ভালোবাসে। সেই অনুভূতি ফিরে ফিরে পাই পরিবারে, পরিধেয়ে কিংবা নূতন শ্রেণী কক্ষের উত্তরণে। যখন আমি নবম শ্রেণীতে তখন দূর থেকে দেখতাম দশম শ্রেণীকে। ভাবতাম কবে যাব দশমে। যেদিন সত্যিই দশম শ্রেণীতে প্রথম এলাম তখন অভিভূত হলাম। পেলাম নব বিষয়, নব কক্ষ ও অনেক নূতন বিষয় শিক্ষককে, পেলাম সরস্বতী পূজার দায়িত্ব। আমি সানন্দিত হলাম। সব পাওয়া ধন্য করে আমি ধন্য হলাম।
অন্বেষা মান্না, দশম শ্রেণী, বৈষ্ণবচক মহেশচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়