উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
সাগর দাস: বিষণ্ণ এক সোমবারের বিকেলে পুড়ে ছাই হয়ে গেল প্যারিসের এক অরণ্যের ইতিহাস। ‘দ্য ফরেস্ট’— এই নামেই নোৎরদম গির্জাকে ডাকতেন স্থানীয়রা। ইউরোপের রোমাঞ্চকর শহর প্যারিসের বুকে সাড়ে ৮০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বিখ্যাত এই গির্জাটি পর্যটকদের কাছে তীর্থস্থানের মতো। প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ পর্যটক এই গির্জা পরিদর্শন করেন। সাড়ে ৮০০ বছরের ইতিহাস ৪ ঘণ্টায় মাটিতে। যদিও সাড়ে ৮০০ বছরে আরও বেশ কয়েকবারই এর উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে নানা ঝড়-ঝঞ্ঝা।
দশম শতকে নবশক্তিতে বলিয়ান ইউরোপের প্রাণকেন্দ্র হয়ে যায় প্যারিস। মূলত ব্যবসাই ছিল এই নগরীর চালিকাশক্তি। যদিও সে সময় আধ্যাত্মিকতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবেও সুখ্যাতি বাড়ছিল এই নগরীর। বীর শহিদ সেন্ট ডেনিসকে কেন্দ্র করে একটি পবিত্র ভাবমূর্তি গড়ে উঠছিল সেখানে। জানা যায়, তৃতীয় শতকের মাঝামাঝি সময়ে এক যুদ্ধে ডেনিসের মাথা ছিন্ন হয়ে যায়। মুণ্ডহীন ডেনিস তার ছিন্ন মস্তকটি এক হাতে তুলে নেন এবং এই অবস্থায়ই প্রায় ৬ কিলোমিটার দৌড়ে প্যারিসে ফিরে আসেন। নগরীর যে জায়গাটিতে তিনি এসে থেমেছিলেন সেখানেই দ্বাদশ শতকে তার সম্মানে একটি রাজপ্রাসাদ তৈরি করা হয়। এই নির্মাণকাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন প্যারিসের তৎকালীন বিশপ মরিস ডি সুলি। পরে এর অনুপ্রেরণায় সুলি আরও একটি স্থাপত্য তৈরির পরিকল্পনা করেন, যা হবে বিশাল এবং গাম্ভীর্যপূর্ণ একটি গির্জা। এই গির্জাটি উৎসর্গ করা হবে মাতা মেরিকে। সেই সময় তার এই বিশাল উদ্যোগ নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করেছিল। তবুও ১১৬০ সালে এক স্থপতির সঙ্গে তিনি চুক্তি করেন। ১১৬৩ সালে এই নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণের উদ্বোধনী দিনে উপস্থিত ছিলেন সে সময়ের পোপ তৃতীয় আলেকজান্ডার।
নোৎরদম ক্যাথিড্রাল নির্মাণকাজ সম্পন্ন হতে লেগেছিল প্রায় ২০০ বছর। বিশপ সুলির ১১৯৬ সালে মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর আরও দেড়শ বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল ঐতিহাসিক নোৎরদম গির্জা গড়ে উঠতে।
১২৪০ সালের দশকে গির্জার মূল অংশটি নির্মাণ করা হয় এবং পশ্চিম পাশের সম্মুখভাগের দু’টি টাওয়ারের নির্মাণকাজও শেষ হয়। সে সময় নির্মাণকাজের প্রধান ছিলেন জিন ডি শেলাস। শেলাসের পর নির্মাণকাজ এগিয়ে চলে পিয়েরে ডি মন্ট্রিলের নেতৃত্বে। সেই সময় গির্জার উপরের টাওয়ারগুলোর নির্মাণকাজ শুরু হয়। মন্ট্রিল নির্মাণকাজে বেশ কিছু শৈল্পিক নিদর্শন যোগ করেন। গির্জার উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিম দেওয়ালে গোলাপ আকৃতির বিশাল জানালার নকশা করা হয়। ১৩০০ সালের পর গির্জার নির্মাণকাজের নেতৃত্বে আসেন আর্কিটেক্ট জিন রেভি। তিনিও বেশ কিছু অভিনবত্ব যোগ করেন এবং গির্জার ছাদ, দেওয়াল ও পরিকাঠামো মজবুত করায় মনোযোগ দেন। এভাবেই গির্জা নির্মাণের পৌনে দুই শত বছরের পরিক্রমা শেষ হয় এবং বিশ্বের বুকে এক অনন্য স্থাপনা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে নোৎরদম ক্যাথিড্রাল।
ফরাসি রাজতন্ত্র শুরু থেকেই এই গির্জার প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি। তাই নতুন রাজাদের অভিষেকের ক্ষেত্রে এই গির্জাকে ব্যবহার না করে ঐতিহ্যগতভাবে প্যারিস থেকে ৮০ মাইল উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত রাইমসের প্রধান গির্জাকে ব্যবহার করা হতো। আর রাজাদের মৃত্যুর পর ব্যাসিলিকা অব সেন্ট ডেনিসে সমাহিত করা হতো। ফ্রান্সের মধ্যযুগীয় রাজতন্ত্রের একমাত্র রাজা ছিলেন সপ্তম হেনরি, প্রথমবারের মতো যার রাজ্যাভিষেক হয়েছিল নোৎরদম ক্যাথিড্রালে। তবে, তিনি ফরাসি ছিলেন না, ছিলেন ইংরেজ। শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধের সময় ইংরেজরা ফ্রান্সের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে ১৪৩১ সালে হেনরিকে ফ্রান্সের সিংহাসনে বসিয়েছিল।
তবে, শতবর্ষের ব্যবধানে এই গির্জার কদর ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। শহরের আইকনে পরিণত হতে থাকে এই স্থাপত্য। এক সময় সমাজের নিম্নস্তরের মানুষদের বাৎসরিক খানাপিনার আয়োজন করা হতো এখানে। দ্বাদশ শতকের পর থেকেই ফ্রান্সে বুদ্ধিমত্তা চর্চার বিকাশ ঘটতে শুরু করে। বিখ্যাত দার্শনিক পিটার অ্যাবেলার্ড প্যারিসের ক্যাথিড্রাল স্কুল নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। এই বিদ্যালয়টি গির্জার নির্মাণকাজ শুরু হওয়ারও আগে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিখ্যাত এই স্কুলের খ্যাতির সঙ্গে নোৎরদম ক্যাথিড্রালের নামও চারদিকে ছড়াতে শুরু করে। ওই স্কুলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্ররা প্যারিসে ভিড় করতে শুরু করে এবং দর্শনচর্চাও চলতে থাকে সমান তালে। তবে, অনেক ছাত্রই পড়াশোনা করার কোনও খরচ না নিয়ে প্যারিসে পা রাখত। ফলে বেঁচে থাকার জন্য তাদের অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তি থেকে শুরু করে চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ত। এ ধরনের মানুষকে তখন গোলিয়ার্ড বলে অভিহিত করা হতো। তারা মদের দোকান এবং পতিতালয়গুলোতে ঘন ঘন যাতায়াত করত। অবস্থা এমন দাঁড়াল যে, নোৎরদম ক্যাথিড্রালও অনেকাংশে কলঙ্কিত হতে শুরু করল। শেষ পর্যন্ত প্যারিসের তৎকালীন বিশপ ছাত্র অনুপ্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে ঐক্যমত ঘোষণা করেন। ১২১৫ সালে কার্ডিনাল রবার্ট ডি কুরিও একটি ডিক্রি জারি করেন। ওই ডিক্রি অনুযায়ী, নোৎরদমে পড়াশোনা স্থগিত করা হয় এবং এই বিদ্যালয়ের সভ্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। ১৩১৪ সালে এই চক্রের নেতা জ্যাক ডি মলিকে পুড়িয়ে মারা হয়।
অষ্টাদশ শতকে মানুষের স্থাপত্য রুচি আমূল বদলে যায়। চতুর্দশ লুইসের রাজত্বের সময় প্রাচীন স্থাপনা নোৎরদম ক্যাথিড্রালে নানা ধরনের বিতর্কিত সংস্কারকাজ করা হয়। অনেকেই বলে থাকেন, ওই সংস্কারের মাধ্যমে ক্যাথিড্রালের ঐতিহাসিক সৌন্দর্যের ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়, যা অনেকটা বিকৃতির শামিল। সে সময় ভিতরের অনেক স্থাপনাই সরিয়ে ফেলা হয়। গির্জার জানালায় ব্যবহৃত গাম্ভীর্যপূর্ণ প্রাচীন গ্লাসগুলোকে সরিয়ে স্বচ্ছ গ্লাস লাগানো হয়। তবে, গোলাপ নকশার জানালার কাচগুলো আগের মতোই রাখা হয়। ঘোড়ার গাড়ি চলাচলের সুবিধার্থে সদর দরজার মাঝামাঝিতে অবস্থিত একটি বিশাল পিলারও ভেঙে ফেলা হয়।
ক্যাথিড্রালের উপর সবচেয়ে বড় আঘাত আসে ১৭৮৯ সালে। ফরাসি বিপ্লবের সময় এই গির্জাকে রাজতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং এর ভিতরে লুটপাট চালানো হয়। ক্যাথিড্রালের ভিতরে ‘গ্যালারি অব কিংস’-এ ২৮টি স্ট্যাচুর শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলা হয়। উন্মত্ত মানুষ তখন ভেবেছিল এগুলো ফরাসি রাজতন্ত্রের ক্রমবিন্যাস। আসলে এগুলো ছিল জুডিয়া এবং ইজরায়েলের প্রাচীন রাজাদের প্রতিমূর্তি। ক্যাথিড্রালের অনেক নকশাই ধ্বংস করে দিয়েছিল বিদ্রোহীরা। বেশ কিছু ব্রোঞ্জের তৈরি বহু মূল্যবান স্ট্যাচু ধ্বংস ও লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাদের নকশায় ব্যবহৃত সিসাও খুলে নিয়ে যায় তারা, এগুলো দিয়ে বুলেট বানানোর জন্য। বিশাল আকৃতির ঘণ্টাগুলো গলিয়ে ফেলা হয় কামান বানানোর জন্য। কেবল দক্ষিণের টাওয়ারে ঝুলানো ১৩ টন ওজনের ইমানুয়েল নামে ঘণ্টাটি বিদ্রোহীদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল।
ফরাসি বিপ্লবের সময় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়, তা ছিল অপূরণীয়। বহু বছর নোৎরদম ক্যাথিড্রাল পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ভাঙা জানালা দিয়ে ভবনের কোনায় কোনায় বাসা বানিয়েছিল অসংখ্য পাখি।
অবশেষে ১৮০১ সালে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সরকারের দৃষ্টি পড়ে এই ক্যাথিড্রালের উপর। শুরু হয় এটিকে পুনঃসংস্কারের কাজ। ১৮০৪ সালের মধ্যে এর চেহারা এমনভাবে ফিরিয়ে আনা হয় যে, এই গির্জার ভিতরেই ফ্রান্সের রাজা হিসেবে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়।
ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝিতে ঔপন্যাসিক ভিক্টর হুগোর হাত ধরে স্বমহিমায় আবির্ভূত হয় নোৎরদম ক্যাথিড্রাল। ফরাসি রোমান্টিসিজমের নেতৃস্থানীয় লেখক ভিক্টর হুগো মধ্যযুগীয় গথিক শৈলীকে মানুষের মনে আবারও ফিরিয়ে এনেছিলেন। এই ক্যাথিড্রালকে কেন্দ্র করে ১৮৩১ সালে প্রকাশিত হয় তার একটি ব্লকবাস্টার উপন্যাস। পরবর্তী সময়ে এই উপন্যাসের ইংরেজি সংস্করণের নাম হয় ‘দ্য হেঞ্চবেক অব নোৎরদম’। উপন্যাসে মধ্যযুগে প্যারিসের টালমাটাল অবস্থাকে ফুটিয়ে তোলেন হুগো। নোৎরদম ক্যাথিড্রালের যে বর্ণনা করেছিলেন হুগো, পরবর্তী সময়ে সেই বর্ণনা ধরেই এর সৌন্দর্যবর্ধণের কাজ করা হয়। নতুন রূপে ফিরে আসে নোৎরদম ক্যাথেড্রাল। হুগোর উপন্যাস প্রকাশের পরবর্তী তিন দশকে আমূল বদলে যায় ক্যাথিড্রাল। এই সংস্কারকাজের নেতৃত্ব দেন আর্কিটেক্ট ইগুয়েঁ ভায়োলেট-লি-দ্যুক। তিনি নোৎরদমের পুরনো শক্তি এবং সৌন্দর্য দুটোই ফিরিয়ে আনেন। ধ্বংস হয়ে যাওয়া পশ্চিমের অংশ, কিংস অব গ্যালারি ঠিক করা ছাড়াও নতুন বেশ কিছু সৌন্দর্য যোগ করেন ইগুয়েঁ। এভাবেই ফ্রান্স তথা ইউরোপের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ শহর প্যারিসের মাথায় আবারও মুকুটের মতো শোভা পেতে থাকে নোৎরদম ক্যাথিড্রাল। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও অক্ষত ছিল এই ক্যাথিড্রাল।
নোৎরদম গির্জাটি একশো মিটার লম্বা। প্রায় দশ মিটার উঁচু। ‘নেভ’ বা মাঝের অংশের প্রস্থ সবচেয়ে বেশি। প্রায় ১৩ মিটার। গথিক স্থাপত্যতে তৈরি এই ধরনের গির্জার একটা বৈশিষ্ট্য হল, লম্বাটে গঠনের মাঝ বরাবর একটি অংশ (ট্রানসেপ্ট) দু’দিকে বাহুর মতো বেরিয়ে থাকে। উপর থেকে দেখলে মনে হবে যেন একটা ক্রুশ। নোৎরদমের ওয়েবসাইট থেকে জানা গিয়েছে, মধ্যযুগীয় গির্জাটির বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদা ভাবে তৈরি করে জোড়া হয়েছে। প্রথমে ভিত ও দেওয়াল। পরে ছাদটি আলাদা করে বানিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছে। এই ছাদের নকশাই সবচেয়ে তাক লাগানো। গথিক রীতিতে তৈরি এই ছাদটি কাঠ দিয়ে কোনাকুনি বেশ খানিকটা উঁচু করা। কাঠগুলি আকাশের দিকে ৫৫ ডিগ্রি কোণে হেলানো। যার মোট ওজন প্রায় ২১০ টন। ছাদ শক্তপোক্ত করতেই ওকের গুঁড়ি ব্যবহার করা হয়েছিল। সোমবারের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে এই অংশ। ফলে পুরো ছাদই ধসে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আগুন লাগার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধসে যায় ছাদের শঙ্কু আকৃতির স্পায়ার অংশটি। ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দু’ধারের কয়্যার ও মাঝের নেভ অংশ। তবে গির্জার যে মিনার দুটি প্রায় ৬৯ মিটার লম্বা, সেই ‘বেল টাওয়ার’ দু’টি বেঁচে গিয়েছে আগুনের হাত থেকে। প্যারিসের আইফেল টাওয়ার তৈরি হওয়ার আগে পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮৮৯ সাল পর্যন্ত এটিই ছিল প্যারিসের সবচেয়ে উঁচু স্থাপত্য। সুউচ্চ নোৎরদম স্থাপত্য দুনিয়ার বিস্ময়। চারটি তলায় তৈরি। বিশাল বাড়ির তিন তলায় কারুকাজ খচিত গোল ছাদ বা অকুলি। যা ভিতর থেকে দেখা যেত। তার উপরে অংশেই স্পায়ার। সদর থেকে বিস্তৃত মাঝখান পর্যন্ত নেভ অংশের ছাদে পাখামেলা প্রজাপতির মতো নকশা কাটা। ওই নকশা অপেক্ষাকৃত পাতলা দেওয়ালের উপরে ছাদটাকে পোক্ত ভাবে ধরে রাখে। গির্জার দেওয়াল অনন্য নকশা ও রঙিন কাচে সাজানো। তবে বেশ কিছু রঙিন কাচ ও চূড়া পরবর্তী কালে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। কালগর্ভে হারিয়ে গিয়েছে অনেক কারুকাজ।