উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে: একটি প্রধান প্রতিপক্ষ আমূল রূপান্তরের ভিতর দিয়ে যেতে পারে, তাতে ভালো মন্দের যে-কোনোটা হতে পারে, এবং সেই দলের নতুন অবতার-এ নির্বাচনী যুদ্ধে প্রবেশে অতীতের সুযোগ নাও মিলতে পারে। ২০১৯-এ সেটাই ঘটেছে।
২০১৪-র ক্ষমতাসীন দল (কংগ্রেস) এবার প্রধান চ্যালেঞ্জার হয়ে উঠেছে এবং ২০১৪-র চ্যালেঞ্জার (বিজেপি) এবার ক্ষমতাসীন দল। বাহ্যত, দুই প্রধান প্রতিপক্ষের অবস্থান এই যে উল্টে যাওয়া, তার মধ্যেও একটা ‘ট্যুয়িস্ট’ লক্ষ করার আছে; কারণ, ২০১৯-এর বিজেপি আর ২০১৪-র বিজেপি এক নয়। ২০১৪-র বিজেপির একটা দলীয় অবয়ব ছিল, অন্যদিকে ২০১৯-এর বিজেপি হল একব্যক্তির প্রদর্শনী। নরেন্দ্র মোদি বিজেপির সমস্ত কাঠামো উপেক্ষা করেছেন এবং স্বয়ং হয়ে উঠেছেন দল। তার ফলে লড়াইয়ের ধরনটা এবার অন্যরকম। ২০১৪-র লড়াই ছিল বিজেপি বনাম কংগ্রেস আর এবার সেটা হয়ে গিয়েছে মোদিজি বনাম কংগ্রেস।
অর্থ এবং ক্ষমতা
মোদিজির পিছনে রয়েছে অর্থ, ক্ষমতা আর রাজনৈতিক কর্তৃত্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর জোট। অর্থের কথাটা পাড়ি। এক একটা মোদি র্যালির খরচ কম করে ১০ কোটি টাকা এবং তিনি দিনে তিন-চারটি করে তা করছেন। এই যে বিপুল খরচ তার এক ভগ্নাংশেরও কৈফিয়ত দেওয়া হয় না এবং মঞ্চে আসীন প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসেবেও যদি এই খরচ যুক্ত করে দেখানো হয় তো আমি অবাকই হব। রাষ্ট্র ক্ষমতায়, এটা ভালোমতো জানা আছে যে মোদিজি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের এড়িয়ে গিয়েছেন এবং রাষ্ট্র ক্ষমতার সমস্ত যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করেন—যেমন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, রাজস্ব দপ্তর এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলো। রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রসঙ্গে বলতে হয় যে, তাঁরটাই একমাত্র কণ্ঠ যেটা বিজেপির অন্দরে রাজ করে—জোট তৈরির বেলা, প্রার্থী বাছাই, নির্বাচনী কৌশল এবং মানুষকে কোন কাহিনী খাওয়ানো হবে সেটা ঠিক করে দেওয়া। বিখ্যাত ব্লগ-লেখকের একমাত্র কাজ হল ‘এক্স-পোস্ট জাস্টিফিকেশন’ জোগান দেওয়া।
অর্থ এবং ক্ষমতার বিচারে বিজেপির সমকক্ষ কংগ্রেস নয়। যাই হোক, কংগ্রেস এগিয়ে চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে। নির্বাচনী মরশুমের গোড়ায় কংগ্রেস মানুষের কিছু আকুল আকাঙ্ক্ষার কথা উপলব্ধি করেছে—কম হইচই, বেশি নিরাপত্তা, প্রচুর কর্মসংস্থান, কৃষকদের সুরাহা এবং গরিবের কল্যাণ। মানুষের কথা শোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। মানুষের ওইসব কণ্ঠই ইতিমধ্যে আমাদের কিছু করার আইডিয়া জুগিয়েছে এবং তার থেকেই উঠে এসেছে ভারতীয় রাজনীতির নির্বাচনী ইস্তাহারগুলোর সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলি।
২ এপ্রিল কংগ্রেসের ইস্তাহার প্রকাশের পর লড়াইটা মোদিজি বনাম কংগ্রেস আর রইল না; লড়াইটা পাল্টে গেল মোদিজি বনাম কংগ্রেসের ইস্তাহারে। মোদিজির যে-কোনও একটি ভাষণ শুনুন, তাহলেই এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। মিথ্যাচার এবং গান্ধী পরিবারকে কুৎসার কোটা ফুরিয়ে গেলেই মোদিজি কংগ্রেসের ইস্তাহার নিয়ে পড়েন, কিছু কাল্পনিক অশরীরী খাড়া করেন আর সেগুলোকে বধ করার ভান করেন। কংগ্রেসের ইস্তাহার প্রকাশের দিন কয়েক বাদে বিজেপির ইস্তাহার প্রকাশ হলেও মোদিজি সেটা নিয়ে টুঁ শব্দটিও করেন না এবং আমার ধারণা, ওঁদের ইস্তাহারটি বিশেষভাবে বিস্মৃতির আড়ালে চলে যাবে। কংগ্রেসের ইস্তাহারের বিষয়বস্তুর জোশটা মোদিজি টের পেয়ে গিয়েছেন।
কল্পনাকে ধরেছে ইস্তাহার
তামিলনাড়ুতে দু’সপ্তাহের নির্বাচনী প্রচারের ধকল সয়ে সবে ফিরেছি এবং আপনাদের জানাতে পারি তামিল ভোটারদের কল্পনার যতটা আমার চোখে ধরা পড়েছে। প্রথম ছয়টি হল:
১. দারিদ্রসীমার নীচের পরিবারগুলিকে বছরে ৭২ হাজার (মাসে ৬০০০) টাকা;
২. কৃষিঋণ মকুব (ডিএমকে এর সঙ্গে যোগ করেছে ছোট অঙ্কের গহনার ঋণ);
৩. একশো দিনের কাজের গ্যারান্টির স্কিমটাকে দেড়শো দিনের করা;
৪. লক্ষ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস উৎপাদনে ন’মাসের ভেতর ২৪ লক্ষ সরকারি চাকরির বন্দোবস্ত;
৫. মহিলা, দলিত, তফসিলি জাতি, তফসিলি জনজাতি, বনবাসী, সাংবাদিক, লেখক, পণ্ডিত, এনজিও এবং সরকারি ক্ষমতার (বিরোধী নেতা ও প্রার্থীদের ঘরে আয়কর তল্লাশিটাই যুক্তিতর্ক রুখে দেওয়ার প্রমাণ) অপব্যবহারের দরুন যে-সমস্ত মানুষ বিরক্ত হয়ে উঠেছেন তাঁদের সকলের নিরাপত্তা; এবং,
৬. তামিল ভাষা, জাতি, সংস্কৃতি, মনীষী এবং ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা-মর্যাদা।
নিঃসন্দেহে, অধিকাংশ পছন্দের প্রতিশ্রুতি হল জনকল্যাণ সম্পর্কিত। আর এই কারণে মানুষ মনে করে যে প্রতিরক্ষা এবং অর্থনীতি হল নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব-কর্তব্য এবং কতকগুলো জটিল বিষয়—এগুলো নির্বাচনী প্রচারে বিতর্কের কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এসব গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তার মূল্য তাকে দিতে হবে (উদাহরণ, বিমুদ্রাকরণের সাজা মানুষ মোদি সরকারকে দেবে)।
আইডিয়ার ক্ষমতা
ফিল্ড রিপোর্টগুলো যদি একেবারে ভুল না হয় তবে কংগ্রেসের ইস্তাহার এবং রাহুল গান্ধীর সংযমী কণ্ঠে প্রতিটি আইডিয়া নিয়ে স্পষ্ট উচ্চারণ তামিলনাড়ুতে ডিএমকের নেতৃত্বাধীন জোটকে এক বিরাট জয় এনে দেবে। পাশাপাশি, কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি এবং ডিএমকের প্রতিশ্রুতির চতুর মিশ্রণ দ্বারা এম কে স্ট্যালিন দেখিয়ে দিয়েছেন ‘কল্যাণ’-এর আইডিয়ার জোর কতটা।
এটা এখনও নির্বাচনের গোড়ার পর্ব এবং মাত্র দু’দফার ভোট (১৮৬ আসন) নেওয়া হয়েছে। কঠিন দুটি দফা হল—তিন (১১৫টি আসন) আর চার (৭১টি আসন)—আইডিয়ার লড়াইটা নির্বাচনী রাজনীতিকে হিন্দি বলয়ে টেনে নিয়ে যাবে।
‘সম্পদ এবং কল্যাণ’ হল মানুষের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা। ভারতের ছোট ছোট শহর আর গ্রামে পা রাখলে মোদিজি এটা বুঝতে পারতেন, কিন্তু তিনি উড়ে বেড়াতে পছন্দ করেন। এই যে ‘মেসেজ’—এর সম্ভাবনার দিকটি যদি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অনুধাবন করে এবং দেশের প্রান্তে প্রান্তে তা ছড়িয়ে দেয় (এমনকী পৃথক পৃথক ভাবেও)—তবে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রত্যেকের পৃথক পৃথক লড়াইতেও জয় হবে। আমি আমার ‘ফিঙ্গার ক্রসড’ রাখলাম (যা আমরা চাই তেমন কিছুই ঘটবে বলে আশা রাখছি)।