উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
তামিল গেরিলা যুদ্ধের সময় বিস্ফোরণ ছিল নিত্য সঙ্গী। টার্গেট করা হতো সরকারি যানবাহন, বাসস্ট্যান্ড, রাস্তার মোড়-জংশন। ভয়ে সরকারি যান ব্যবহার করতে পারত না সাধারণ মানুষ। তিন দশকের সেই গৃহযুদ্ধে ইতি পড়েছে ২০০৯ সালে। সবমিলিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১০ হাজার মানুষ। ‘ইস্টার সানডে’র বিস্ফোরণ ও তার মৃত্যুমিছিল সেই স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৩০০ জন। জখম কয়েকশো। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিস্ফোরণে জখম আট শিশুকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন শান্তা প্রসাদ। রক্তাক্ত সেই স্মৃতির কথা স্মরণ করে তিনি বলেছেন, ‘আমার মেয়ের মতোই তাদের মধ্যে দু’জন বালিকা ছিল। যাদের বয় ছয় ও সাত। ওদের জামা-কাপড় রক্তে ভেসে যাচ্ছে। নতুন করে এই হিংসা আর সহ্য করা যাচ্ছে না।’ দেশের রাজধানী কলম্বোর বিভিন্ন প্রান্তে নাশকতার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সাফাইকর্মীদের মধ্যেও। মালতী বিক্রমা নামে এক সাফাইকর্মীর কথায়, ‘রাস্তায় পড়ে থাকা কালো প্লাস্টিক ব্যাগে হাত দিতে ভয় পাচ্ছি।’
কিছু দোকান-বাজার, সরকারি যানবাহন চললেও বিস্ফোরণের জেরে সোমবার বন্ধ ছিল স্কুল, কলেজ, শেয়ার বাজার। কিন্তু, জীবনযাত্রা তো আর থেমে থাকে না। যেমন সচল ছিল গেরিলা যুদ্ধে তিন দশকে। আর তাই পরিজনের শোক সামলে জীবিকার তাড়নায় টুক-টুক নিয়ে রাজধানীর রাস্তায় বেরতে বাধ্য হয়েছেন ইমতিয়াজ আলি। সিনামন গ্র্যান্ড হোটেল হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তাঁর ভাইপো। আগামী সপ্তাহেই তাঁর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। পরিবর্তে বাড়িতে নেমে এসেছে শ্মশানের শূন্যতা।
একইভাবে ট্র্যাজেডিকে উপেক্ষা করে সপ্তাহের প্রথম দিনে কাজে যোগ দিয়েছেন ৫০ পেরনো নুওয়ান সমরবীরা। তাঁর কথায়, ‘গৃহযুদ্ধের সময় আমরা এতটাই হিংসা দেখেছি যে, আমাদের তা অভ্যেসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। বর্হিবিশ্বে এই হিংসা আরও বেশি। কিন্তু, এখানে জীবনযাত্রা সচল।’ ইস্টারের প্রার্থনার সময় প্রাণহারানো মানুষগুলোর স্মরণে এদিন সেন্ট সেবাস্তিয়ান গির্জায় হাজির হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে এক মা তাঁর সন্তানকে নিয়ে কাপে করে গির্জার নিরাপত্তারক্ষীদের চা দিচ্ছিলেন।
রবিবারের হাড়হিম করা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন হামলার শিকার শাংগ্রি লা হোটেলের প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক ভারতীয় নাগরিক। আকশাত শরফ নামে ওই ব্যক্তির কথায়, ‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিকট শব্দ। কেঁপে উঠল আমাদের হোটেল। এরপরেই দ্বিতীয় বিস্ফোরণ। চার তলায় গিয়ে দেখি সিঁড়ি দিয়ে রক্তের বন্যা বইছে। দেখি, কয়েকজনের শরীরে কাচ ভেঙে ঢুকে গিয়েছে। শেফের সাদা অ্যাপ্রোন রক্তে ভিজে যাচ্ছে।’
স্বজনহারাজের সান্ত্বনা দিতে হাজির ছিলেন বুদ্ধ সন্ন্যাসীরা। যিশুর চরণে ফুল দিতে গির্জায় এসেছিলেন চার্চিল করুণারত্নে নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘সকালে ঘুম ভাঙতেই শুধু মনে হচ্ছে, কেমন করে ওঁদের পাশে দাঁড়াব? কী করলে ওঁদের একটু সুরাহা হবে! আর সেকারণেই গির্জায় ছুটে আসা।’ তিন সন্তানের বাবা বলে চলেছেন, ‘রক্তাক্ত কলম্বোর ছবি আমার ছেলে-মেয়েরা টিভিতে দেখেছে। ওরা গির্জায় যেতে ভয় পাচ্ছে। আমাকে বারবার একটা প্রশ্নই করে যাচ্ছে, বাবা ভগবান তাহলে কোথায়?’