উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
তোজোর আঁকিবুকি বা তিন্নির অজানা ভাষায় দুর্বোধ্য লেখা— এসবের মাধ্যম ছিল কিন্তু ‘কলম’। আর বন্ধুরা ছেলেবেলার এই কীর্তিগুলির সঙ্গে কমবেশি তোমরা সবাই পরিচিত। সেই ছোট বয়স থেকেই কলমকে মাধ্যম করে আমরা আমাদের মনের ভাব ফুটিয়ে তুলি। যদিও সেই সব কল্পনার ইন্দ্রজাল আমাদের বাড়ির বড়দের কতটা বোধগম্য হয়, তা অবশ্য বলা যায় না।
আঁকিবুকি কাটার অভ্যাস অবশ্য আজকের নয়। জানো তো বন্ধুরা- সেই আদিমকালেও মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করত গুহার দেওয়ালে পাথর দিয়ে খোদাই করে। ঐতিহাসিকদের মতে, লেখার এই মাধ্যমটিই ধীরে ধীরে ‘কলম’ হয়ে ওঠে। যার সূত্রপাত হয়েছিল যিশুখ্রিস্টের জন্মের কমপক্ষে ৩০০০ বছর আগে মিশরীয় সভ্যতায়। আজও তার নিদর্শন মেলে। সেকালে সামুদ্রিক গাছের ডালপালা দিয়ে এক বিশেষ ধরনের তুলি বা ব্রাশ (অনেকটা আমাদের খাগের কলমের মতো) তৈরি করা হয়। সেই সব বিশেষ কলম দিয়ে সেই সময়ের মানুষ নিজেদের কথা, নিজেদের জীবনের কথা, সমাজ-ধর্ম-সংস্কারের কথা পরবর্তী পৃথিবীর জন্য লিখে রেখে গিয়েছেন। কালের নিয়মে যার অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছে। কিছু আছে। কিন্তু সেই সব ভাষা এখনও পড়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। যেদিন হবে, হয়তো মানব সভ্যতার ইতিহাস অন্যরকম হবে। যাইহোক, সে সব নিয়ে পরে কোনওদিন বিস্তারে আলোচনা করা যাবে।
ছোট্ট বন্ধুরা, কালের নিয়মে এরপর হাজির হয় শক্ত ধাতুর বা লোহার তৈরি এক ধরনের লেখনী। আমাদের বর্তমান ‘কলম’-এর পূর্বপুরুষ এই ধাতব লেখনীর জন্ম আনুমানিক যিশুখ্রিস্টের জন্মের প্রায় ১৩০০ বছর আগে। বুঝতেই পারছ, কলমের বয়স কত। রোমান সভ্যতার গোড়ার দিকে এই ধরনের কলম ব্যবহার হতো। তবে এই কলমের জন্য তখনও কালির আবিষ্কার হয়নি। লোহার কলম দিয়ে মোমের পাটাতন খোদাই করে বিশেষ পদ্ধতিতে লেখালেখি বা ছবি আঁকা চলত। সমসাময়িক কালে আমাদের এশিয়া মহাদেশেও ওই রকম কলমের প্রচলন ছিল। তবে, লোহার নয় কলমগুলি ব্রোঞ্জের তৈরি হত বলে শোনা যায়। এরপর মানব সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে কলমেরও পরিবর্তন হল। লোহার পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি হল পেন। চীনে এইরকম কলম ব্যবহার হত। পাশাপাশি, উট এবং ইঁদুরের লোম দিয়েও তুলি তৈরি হত বলে জানা যায়।
এইভাবে চলতে চলতে হাজার বছর পেরিয়ে কলমের চেহারায় আসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। পঞ্চম বা ষষ্ঠ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এক ধরনের কলমের আবিষ্কার হয়েছিল বলে ঐতিহাসিকদের মত। ওই কলম তৈরি হয় রাজহাঁসের পালক দিয়ে। ওই বিশেষ ধরনের লেখনীর অগ্রভাগ সুচালো এবং পশ্চাৎভাগে পাখির পালক গোঁজা। সেই সময় থেকেই শুরু হল কালির ব্যবহার। ছোট বন্ধুরা কলম এবং কালির উপর ভর করে মানব সভ্যতায় এক বিরাট বিপ্লব সেই সময়ই ঘটে গেল। ধীরে ধীরে পালকরূপী কলমের অগ্রভাগ শক্ত ধাতুর নিবে পরিণত হল। জানা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে আধুনিক পেনের আবিষ্কার হয়। জোশেফ এবং জর্জ বাইরো ১৯৪৩ সালে জনসমক্ষে এই অভিনব কলম নিয়ে আসেন।
এইভাবে শুরু হল কলমের জয়যাত্রা। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন কোম্পানি এবং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কলমের আধুনিক রূপান্তর হল। বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই কলম। আবারও এটাও সত্য, ইতিহাস থেকে আবিষ্কার- সবই গ্রন্থিত হয়েছে এই কলমের মাধ্যমে। পৃথিবীর সব যুগান্তকারী আবিষ্কার বা সাহিত্য-সবের পিছনে কলম। আধুনিক কম্পিউটারের সঙ্গে যতই বিবাদ থাকুক না কেন, পড়ার টেবিলে রংচটা ওই কলমগুলি আমাদের শৈশবের সাক্ষী।