উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
সাজ্জাদ আফগানির পর মাসুদ আজহার তার দল জয়েশ-ই-মহম্মদের কাশ্মীর চিফ হিসেবে নিয়োগ করল কারি ইয়াসিরকে। যে নিজেই এক যোদ্ধা। একাধিকবার সাউথ কাশ্মীরের স্টোন পেল্টিং যুবকদের ভিড়ে মিশে গিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমাও ছুঁড়েছে। ছুঁড়েছে গ্রেনেডও। লোকাল ছেলেরা একটু ঘাবড়ে গিয়েছিল। কারণ তাদের একমাত্র অস্ত্র ছিল পাথর। এভাবে বোমা, গুলি ছোঁড়ার কথা নয়। তাহলে ব্যাপারটা অন্য দিকে টার্ন নেবে। কিন্তু কারি ইয়াসির শুধু যে বিক্ষোভের সময় গোপনে মিছিলে ঝুকে পড়ে পুলিস, সেনাকে আক্রমণ করত তাই নয়। সে প্ল্যান করত কবে কোথায় কোথায় এরকম পাথর ছোঁড়া কর্মসূচি হবে। সেইমতোই কুপওয়াড়ার লোলাবে মিটিং ডেকেছিল সে। পরবর্তী প্রোগ্রামের জন্য। গোপন মিটিং। লোকালিটির মধ্যেই একটি মেডিকেল শপের পিছনে। যাতে কারও সন্দেহ না হয়। অথচ সেই গোপন খবরও জানাজানি হয়ে গেল। মিটিং এর মধ্যে ঢুকে তাকে খতম করে দিল ভারতের সিকিউরিটি ফোর্স। কীভাবে খবর পেল সিকিউরিটি ফোর্স? এখানেও তাই। এক কাশ্মীরি যুবক ছিল সেনাকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ার মাস্টারমাইন্ড। সে প্রতিটি বিক্ষোভ মিছিলেই থাকত। সবথেকে অ্যাক্টিভ। তাকে টার্গেট করেছিল কাজি ইয়াসির। তাকে ডেকেই প্ল্যান করে চলেছিল সে। এবং সেই ছেলেটিকেই দায়িত্ব দেওয়া হল একের পর এক স্টোন পেল্টিং প্রোগ্রামের। ভুল করেছিল কাজি ইয়াসির। কারণ ওই ছেলেটি ছিল ভারতের আইবি স্পাই। ভারতের ইনটেলিজেন্স ব্যুরো কাশ্মীরের পাথর ছোঁড়া ক্ষুব্ধ যুবকদের দলে গোপনে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। কাজি ইয়াসির খতম। কিন্তু কাশ্মীরকে তো ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তাই ভাওয়ালপুরে বসে মাসুদ আজহার একের পর এক নতুন রিক্রুট করে চলেছে নতুন কাশ্মীর চিফ হিসেবে। সেই কাজটিতে তাকে সাহায্য করে হিজবুল মুজাহিদিন। একটি ঝকঝকে তরুণ সবথেকে সক্রিয় এই রিক্রুটমেন্টে। তার নাম বুরহান ওয়ানি। অতএব কারি ইয়াসিরের পর নতুন কাশ্মীর চিফ হিসাবে উঠে এল এক যুবক। আদিল পাঠান। কিন্তু সে কাশ্মীরের নয়। দেখে মনে হয় পাকিস্তানি। আর তার সবথেকে বড় নির্ভর হল এক বন্ধু। মাঝেমধ্যেই উধাও যায়। আর কোথায় যেন যায় সে । সেই ছেলেটিও কাশ্মীরের না। আবদুল রেহমান। আদতে মায়ানমারের বাসিন্দা। চমৎকার ঠান্ডা মাথা। তার কাজ হল ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে স্লিপার সেল তৈরি করে আনা। শুধুই সীমান্ত পেরিয়ে কাউকে পাঠানো হলে বারংবার ধরা পড়ে যেতে হবে। লাভ হবে না। ম্যান পাওয়ার নষ্ট। তাই মধ্যপ্রদেশ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক,অসম সর্বত্র স্লিপার সেল এসে এসে পাঠানকোটে অনেক আর্মস সাপ্লাই করে যায়। সেটা জম্মু হয়ে ঢুকে পড়ে কাশ্মীরের ভিতরের দিকে।
পরিচিত জায়গায় আর নয়। নতুন চিফ ঠিক করেছে এবার বেস তৈরি হবে গ্রামে গ্রামে। সেইমতোই সে বিশ্বস্ত ৬ জনকে নিয়ে ত্রাল এলাকার কেটি গ্রামে গেল। এই হাইড আউটের সন্ধান দিয়েছে উসমান। লক্ষ্য এখানে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে একটা বাড়ি কেনা হবে। সেটা হোক হাইড আউট। গোপনে ওপার থেকে আসা জঙ্গিরা কিছুদিন এখানে থাকবে। গ্রামের নাম আরিপাল। রাতে সেই বাড়িতে থাকা হল। মিটিং শেষ। সবেমাত্র ভোর হচ্ছে। সকাল সাড়ে চারটে। নিস্তব্ধ দক্ষিণ কাশ্মীরের গ্রামে হাওয়া বইছে। সেই হাওয়া ভেদ করে অসংখ্য খসখস শব্দ। সকলেই সচকিত। না। পালানোর পথ নেই। ফর্টি টু রাষ্ট্রীয় রাইফেলস, থার্টি ফাইভ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস, স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ বদগাঁও, স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ ত্রাল আর সিআরপিএফ গোটা গ্রাম ঘিরে ফেলেছে। দিশাহারা আদিল পাঠানের সঙ্গে লোকাল যুবক মাদান বাইরে বেরিয়ে এল। সামনেই কার্বাইন বাগিয়ে বসে আছে মেজর সোনকর। এক দৃষ্টিতে। পিছন থেকে এসেই আবদুল রেহমান গুলি চালালো। উসমান...উসমান..উসমান..। আদিল চিৎকার করছে। উসমানকে পিছনের দরজা খুলতে বলছে সে। কিন্তু উসমান কোথায়? নেই। মাদান পায়ে গুলি লাগা অবস্থায় পালিয়ে গেল পিছনের জঙ্গলে। রক্তক্ষরণ হচ্ছে তার। সে চুপ করে ঘন জঙ্গলের আড়ালে শুয়ে আছে। আচমকা পিছনে তাকাতেই চক্ষুস্থির। স্নিফার ডগ। রক্ত শুঁকে ঠিক চলে এসেছে। পিছনেই দু’জন জওয়ান। হাতে কালাশনিকভ। শেষ চেষ্টা করেও লাভ হল না। স্থির হয়ে গেল মাদান। আগেই মারা গিয়েছে আদিল আর রেহমান। উসমান কোনওমতে পালাতে পেরেছে। এবং পালিয়ে হাসছে। কেন? কারণ উসমানও একজন স্পাই ইন্ডিয়ান সিকিউরিটি ফোর্সের। জঙ্গি সেজে ঢুকে পড়েছিল জয়েশের কাশ্মীর সেলে।
একটি দু’টি নয়। এভাবে একের পর এক নিজের দলের অন্তর্ঘাতেই খতম হয়েছে মাসুদ আজহারের অনেক কমান্ডার। জঙ্গি বনাম পুলিশের এ যেন এক নিরন্তর চোরপুলিশ খেলা। নার্ভের লড়াই। মাসুদ আজহার বারংবার চাইছে কাশ্মীরের মধ্যে থেকেই লোকাল যুবক রিক্রুট করে জঙ্গি হামলা করাতে। আর পাল্টা ভারতের সিকিউরিটি ফোর্স আর গোয়েন্দা বাহিনী মাসুদের গ্রুপেই সেই লোকাল মানুষদের ঢুকিয়ে দিয়েছে স্পাই হিসেবে। সবথেকে ইন্টারেস্টিং ভূমিকা নিয়ে নেয় ডাবল এজেন্টরা। যেমন নূর মহম্মদ তান্ত্রে। কোড নেম নূর তান্ত্রে ডিকি। সে জয়েশের জঙ্গি। আবার তার সঙ্গে গোপন যোগাযোগ ছিল সেনাবাহিনীর। উভয়পক্ষকেই সে গোপন খবর দিয়েছে। উভয় পক্ষই ভাবছে নূর আমাদের লোক। এভাবেই সে টানটান উত্তেজনার এক জীবন কাটিয়েছে। শুধু একবারই ধরা পড়ে গেল। একটি অপারেশনের আগে সে যে পুলওয়ামা থেকে শ্রীনগরে এসে জয়েশ এজেন্টকে গোপন অভিযানের কথা জানিয়ে দিয়েছে সেটা জেনে ফেলল ভারতের ইনটেলিজেন্স ব্যুরো। ফোন ইন্টারসেপশন করে। আর তারপরই খবর পাওয়া গেল জঙ্গিদের সঙ্গে একটি এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে নূর। বেইমানির কোনও ক্ষমা নেই এই চরম টেনশনের জগতে। আমার স্পাইকে শত্রুপক্ষ যদি তাদের স্পাইতে পরিণত করে ফেলে সেটা হবে চরম পরাজয়। তাই তাকে সরিয়ে দেওয়াই নিয়ম এই অবিরত জয় পরাজয়ের যুদ্ধে।
মাসুদ আজহার মরিয়া হয়ে ভারতকে প্রবল আঘাত দিতে মনস্থ করেছিল যখন সিআরপিএফ বাহিনী মাসুদের সবথেকে বড় ভরসা মুফতি ওয়াকসকে খতম করে দিল অবন্তীপোরায়। কে সে? সে হল আফজল গুরু স্কোয়াডের জন্মদাতা। যে স্কোয়াড সঞ্জুয়ান আর্মি ক্যাম্পে হামলা করে ভারতের ৬ জন সেনাকে হত্যা করেছিল। সেখানেই শেষ নয়। ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট পুলওয়ামায় বিএসএফ ক্যাম্পে আর লেথপোরায় সিআরপিএফ ট্রেনিং ক্যাম্পে হামলা চালালো জয়েশ। কখনও ৬ জন, কখনও পাঁচজন জওয়ান শহিদ হলেন। জয়েশ-ই-মহম্মদের মোডাস অপারেন্ডি হল সাধারণত সুইসাইড স্কোয়াড। গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়ে হামলা। গুলি আর বিস্ফোরক। পার্লামেন্ট অ্যাটাক থেকে আজকের পুলওয়ামা। সব এক রীতি। কিন্তু ২০১৮। এই প্রথম সম্পূর্ণ নতুন এক প্ল্যান নিল মাসুদ। স্নাইপার অ্যাটাক। নিখুঁত লক্ষ্যে পাহাড় জঙ্গলের আড়াল থেকে সেনাকে লক্ষ্য করে গুলি। এবং পালিয়ে যাওয়া। যাকে বলা হয় হিট অ্যান্ড রান! একের পর এক এরকম হামলা হল। কে এই স্নাইপার স্পেশালিস্ট? এবারও এক স্পাই খবর দিল স্নাইপার টিমের। টিম যাচ্ছে অনন্তনাগে। সাদা এসইউভি ভাড়া করে। অপারেশনে। ঠিক খবর। সিকিউরিটি ফোর্স নিঃশব্দে ফলো করে সেই গাড়িকে ব্লক করে দাঁড়ালো। ২০১৮। ৩১ অক্টোবর। গোটা স্নাইপার স্কোয়াড খতম। তার মধ্যে ব্লু শার্ট আর ধুসর জ্যাকেট পরা ছেলেটি কে? সেই সেরা স্নাইপার। উসমান হায়দার। অনেক দূরে পাকিস্তানের ভাওয়ালপুরের এক সাদা প্রাসাদের আড়ালে ব্ল্যাক ক্যাট পরিবৃত রুমে থাকা মাসুদ আজহারের কানে পৌঁছলো। তার দৃষ্টি শূন্যে । উসমান হায়দার খতম? কে উসমান? মাসুদের নিজের দিদির ছেলে! বদলা চাই! মাসুদের চোখ জ্বলে উঠল। সেই ৩১ অক্টোবর মাসুদের মস্তিষ্কে জন্ম হল একটি ভয়ংকর প্ল্যান। একটি লাল মারুতি ইকো। পাকিস্তানের দখলে থাকা কাশ্মীরের চাকোটি থেকে কাশ্মীরের সালেমপুরে আসছে লাইন দিয়ে ট্রাক। সেইসব ট্রাকে থাকে লংকা, ড্রাই ফ্রুট। সেসবের আড়ালে চারমাস ধরে এল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এবং আরডিএক্সের স্যাম্পল। মাত্র ১৯ বছরের এক তরুণকে বলা হল জন্নত যাবে? যাবে। কাশ্মীরের পুলওয়ামার তরুণকে মগজ ধোলাই করেছে কে? গাজি বাবা। আফগানিস্তানের লড়াই করেছে যে। তার কাজই হল কাশ্মীরের রিক্রুটমেন্ট। সেই মাত্র একটি তরুণ সেদিন মারুতি ইকো নিয়ে অবন্তীপোরায় সোজা ঢুকে পড়ল সিআরপিএফ কনভয়ে। শহিদ হলেন ভারতের বীর জওয়ানেরা! কিন্তু কোথা থেকে কন্ট্রোল করা হল এই গোটা অপারেশন? পাকিস্তানের অভ্যন্তরে থাকা বালাকোট আর জাবা টপের পাহাড় আর জঙ্গলের আড়ালে থাকা আলফা ওয়ান, টু আর থ্রি ক্যাম্প থেকে। কীভাবে জানা গেল? পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অন্দরেই থাকা জয়েশ-ই-মহম্মদের সঙ্গে যোগসূত্র থাকা ইনফর্মার আর স্পাই গোপনে ইনপুট দিয়েছে। আর সেটা কনফার্ম করল ন্যাশনাল টেকনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (এনটিআরও) স্যাটেলাইট ইমেজিং।
ঠিক ১২ দিন পর। ২৬ ফেব্রুয়ারি। রাত দেড়টা! গোয়ালিয়র এয়ারবেস থেকে মধ্যরাতের নিস্তব্ধতায় উড়ল ৬টি মিরাজ-২০০০ ফাইটার জেট। যেগুলির অন্দরে রয়েছে ইজরায়েলের স্পাইস-২০০০ স্মার্ট বম্ব! শুরু হল সার্জিক্যাল স্ট্রাইক টু....। অপারেশন জয়েশ...।