বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
বৈদিক যুগ থেকে পৌরাণিক যুগে এসে আমরা দেখি, তখনো ঐ প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলছেন: ‘‘সূত্রে মণিগণা ইব’’—মালার মধ্যে বিভিন্ন রত্ন-মাণিক্য যেন। অর্থাৎ তিনি স্বীকার করছেন যে, মালার মধ্যে নানা বর্ণের, নানা ধরনের রত্ন থাকে, কিন্তু যখন তাদের গাঁথা সম্পূর্ণ হয় তখন সব রত্ন মিলে একটি রত্নমালার আকার গ্রহণ করে এবং সকলের আনন্দের কারণ হয়। নানা তো থাকবেই, কিন্তু নানার মধ্যে এক-কে খোঁজা এবং দেখার মধ্যেই নিহিত যথার্থ সুখ, যথার্থ আনন্দ। ভারতবর্ষের চিরায়ত ঐতিহ্য এবং সাধনা ঐ সংহতির সন্ধান ও রূপায়ণের ঐতিহ্য ও সাধনা।
পৌরাণিক যুগ থেকে ঐতিহাসিক যুগে আসার পরেও এই ঐতিহ্য ও সাধনার ধারা অব্যাহত ছিল। তবে মধ্যযুগে এবং আধুনিক যুগে মানুষ সঙ্ঘর্ষের মধ্যে, বিরোধের মধ্যে জটিল থেকে জটিলতর-ভাবে জড়িয়ে পড়েছে। জীবনে সর্বত্রই ঐ জটিলতা ছায়া বিস্তার করেছে। আধুনিক কালে বিরোধ এবং বিসংবাদের প্রকাশ ভয়াবহ রূপ ও মাত্রা লাভ করেছে। অসহিষ্ণুতা এবং অনৈক্য আজ সর্বব্যাপী—দেশে দেশান্তরে। এই সমস্যা আজ শুধু একটি দেশের সমস্যা নয়, গোটা পৃথিবীর সমস্যা। ব্যক্তিজীবন বিপর্যস্ত, পরিবার-জীবন বিধ্বস্ত। সমাজজীবন, জাতীয় জীবন, আন্তর্জাতিক জীবন—সর্বত্র ঐ বিপর্যয় বিপজ্জনকভাবে প্রতিফলিত। ফলে সংহতির সমস্যা আজ যুগসমস্যা ও বিশ্বসমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ জানতেন, সংহতির চেতনা একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মূল্যবোধ। ব্যক্তিমানুষ যদি এই মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত না হয়, ব্যক্তিমানুষ যদি এই মূল্যবোধের অনুশীলন না করে তা হলে তার প্রভাব পড়ে পরিবারে। পরিবার থেকে তা সংক্রামিত হয় সমাজে এবং সেখান থেকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে। তখন পরিবার, সমাজ, দেশ, পৃথিবী তাদের বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। সেজন্য ভবিষ্যতে যারা ত্যাগের আদর্শে জীবন উৎসর্গ করবেন, শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে আগত সেই যুবকবৃন্দকে তিনি সংহতির আদর্শে উজ্জীবিত করতেন। তিনি তাঁদের একসূত্রে বেঁধে দেওয়ার জন্য দিবারাত্র সচেষ্ট থাকতেন। এই বিষয়ে তাঁর ব্যগ্রতার অন্ত ছিল না।