বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
জানা গিয়েছে, মাঘী অমাবস্যার দিন থেকে এই উৎসবের কার্যত সূচনা হয়ে যায়। ওইদিন ভক্তরা মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে গঙ্গার ধারে ক্ষৌরকর্ম ও স্নান করে গ্রামে আসেন। এবার ৬১ জন ভক্ত হয়েছেন। যার মধ্যে প্রধান ভক্তকে দিয়াসিন বলা হয়। ওইদিন থেকেই তাঁরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সম্পূর্ণ উপবাস থাকেন। রাত্রে বুড়ো শিব মন্দিরে পুজো দিয়ে ফল ও দুধ ছাড়া অন্য কোনও খাবার খান না। চতুর্থীর রাতে বুড়ো শিব মন্দিরে ভক্ত প্রতিষ্ঠা হয়। এদিন সকালে বুড়ো শিবের সামনে ভক্তি ভরে প্রণাম করে ‘কাচ বন্ধন’ হয়। পরে উত্তরবাহী পাগলা নদীতে স্নান করতে যান ভক্তরা। ঢাকের বাজনা আর কয়েক হাজার মানুষের কলরবে গোটা গ্রাম মুখরিত হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে ভক্তের ঝোঁক আসে। তখন তাঁরা মৃতপ্রায় অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে শিবের ঘটের জল ছিটিয়ে তাঁদের চেতনা ফিরিয়ে আনা হয়। ফের সকল ভক্ত একসঙ্গে নদীতে স্নান করতে নেমে শিব শিলা তুলে এনে পাড়ে পুজো করেন। কোমরে বাঁধা তুলসী পাতা দিয়ে তাঁরা পুজো নিবেদন করেন। অন্যান্য জায়গায় বেলপাতা দিয়ে শিবের পুজো হলেও বুড়ো শিব তুষ্ট হন তুলসী পাতায়।
দুপুরের দিকে শিব মন্দির প্রাঙ্গণে তৈরি করা উঁচু মঞ্চে দিয়াসিনকে জড়িয়ে ধরে তাঁর জিভ বড় সূচ দিয়ে ফুঁড়ে দেন গ্রামের কর্মকাররা। সেই সময় হাজার হাজার মানুষের জয়ধ্বনি ও প্রচুর ঢাকের আওয়াজে এক আধ্যাত্মিক আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। এরপরই শুরু হয় ষষ্ঠীর ব্রতকথা। তারপর সকলে উপস্থিত হয় খ্যাপাকালী মন্দির প্রাঙ্গণে। সেখানে তিনটি কলাগাছ দিয়ে তৈরি কাঠামোয় তিনটি পাঁঠা বলির খড়্গ সাজানো থাকে। দিয়াসিন দৌড়ে এসে লাফ দিয়ে সেই খড়্গ’র উপর দাঁড়িয়ে পড়েন। ওই অবস্থায় পুরো গ্রাম প্রদক্ষিণ করে তাঁকে খ্যাপাকালী মন্দির প্রাঙ্গণে ফিরিয়ে আনা হয়। পরে অগ্নিকুণ্ডে ভক্তদের ঝাঁপানোর মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হয়। মুর্শিদাবাদ থেকে উৎসব দেখতে আসা ত্রিলোচন দাস বলেন, যতই কাজ থাকুক, এই দিনটিতে ভক্তমারা উৎসব দেখতে আমি পাইকর আসি। খ্যাপাকালী ও বুড়ো শিব খুব জাগ্রত।
এদিকে বুড়ো শিব মন্দির প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাচীন দেবদেবীর মূর্তি সংরক্ষণের জন্য সরকারি উদ্যোগে মিউজিয়াম তৈরির দাবি তুলেছেন গ্রামবাসীরা। কারণ, বহু মূল্যবান কষ্টিপাথরের এই মূর্তিগুলি এলাকার অনেক অজানা ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে সেগুলি অচিরেই নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। পাইকর গ্রাম ঢোকার মুখে রয়েছে আড়াই ফুট লম্বা ও দেড় ফুট উচ্চতার কালো পাথরের একটি ষাঁড়ের মূর্তি। গ্রামবাসীরা সেটিকে লোহার গ্রিল দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। মন্দিরে প্রায় তিন ফুট উঁচু বেদির উপর পাঁচ মিটার অংশজুড়ে ৫০টির বেশি ছোট বড় মাপের কষ্টিপাথরের শিলা মূর্তি রয়েছে। গ্রামের ষষ্টিতলায় প্রাচীন বট গাছের নীচে প্রচুর ভাঙা মূর্তি ও বেশ কয়েকটি দেবী মূর্তি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেখানেই রয়েছে চেদি রাজ কর্ণ’র বিজয় স্তম্ভ।
গ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মী রূপনাথ রায়, পাইকরের ইতিহাস গবেষক দীনবন্ধু দাস বলেন, সরকারি উদ্যোগে এই ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনকে সংরক্ষিত করা উচিত। এলাকায় রয়েছে নরসিংহ মূর্তি। রাজা কর্ণদেব ও বিজয়সেনের আমলের দু’টি শিলালিপি এখানে রয়েছে। শিলালিপির অক্ষরগুলি উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রচলিত আদি বাংলার। এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণ করা হোক। খ্যাপাকালী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত নারায়ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, সেন ও পাল বংশ থেকেই এই ভক্তমারা উৎসব হয়ে আসছে। টোকিও ইউনির্ভাসিটি থেকে এই উৎসব নিয়ে গবেষণা করতে এসেছেন সিবুয়া টুসহিকি। তিনি বলেন, বহুদিন আগে এই উৎসবের কথা শুনেছি। এদিন সবকিছু চাক্ষুষ করলাম। ভারতের আঞ্চলিক উৎসবের উপর গবেষণা করতেই আমার এখানে আসা।