বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
এদিকে সোমবারই বিধায়কের বাড়িতে আসেন সংসদ সদস্য মমতাবালা ঠাকুর ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁরা নিহত বিধায়কের বাড়িতে যান। মতুয়ারা বরাবর শাসক দলের পক্ষেই থাকে। মতুয়াদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠাকুরবাড়ির বড়বউ মমতাবালা ঠাকুর। তিনি বলেন, সত্যজিৎ সক্রিয়ভাবে মতুয়াদের নিয়ে আন্দোলন করছিলেন। নদীয়ায় দু’টি সভাও করেছেন। তাতে বিপুল মতুয়া সমাগম হয়েছিল। এই খুনের পিছনে চক্রান্ত রয়েছে বিজেপির। সত্যজিৎ আমাদের মতুয়া পরিবারেরই ছেলে। তার চলে যাওয়া আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি।
তবে মতুয়াদের মধ্যে বিভাজনও ঘটেছে। একটা অংশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মমতাবালার বিরোধী বলে পরিচিত শান্তনু ঠাকুর। যিনি এখন কট্টর বিজেপি। শান্তনুর অনুগামী নদীয়াতেও রয়েছে। তাঁর অনুগামীরা গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই সভা সমিতি শুরু করেছে। কারণ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সীমান্ত এলাকায় শাসক দলের ফল ভালো হয়নি। তুলনায় গেরুয়া শিবিরের রেজাল্ট ভালো হয়েছে। নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের অনেকে তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মতুয়াদের একাংশও শাসক দলের বিপক্ষে গিয়েছে। এই মতুয়া মতাবলম্বীদের ভোট পেতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। গত বছরের অক্টোবর মাসে কৃষ্ণগঞ্জের স্বর্ণখালিতে একটি সভা করেছিল বিজেপি। ওই সভার আয়োজক ছিল মতুয়া মহাসংঘ। বকলমে সভার আয়োজক বিজেপি। ওই সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং, বিজেপি নেতা মুকুল রায় সহ অন্যান্য নেতারা।
স্বর্ণখালিতে বিজেপির ওই সভাকে হালকাভাবে নেয়নি শাসক দলের নেতারা। কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া মাঠে বিজেপির পাল্টা সভা করে তৃণমূল। সভার আয়োজক ছিল মতুয়া মহাসংঘ। সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ জেলার নেতারা। তবে সেই সভা সেভাবে সফল হয়নি। ঠাকুরনগরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভায় এই জেলা থেকে বহু মতুয়া মতাবলম্বী যোগ দিয়েছিলেন।
মতুয়াদের ভোট ব্যাঙ্ক কোনওভাবেই খোয়াতে চায় না তৃণমূল। কয়েক মাস আগে মতুয়া উন্নয়ন পর্যদ গড়েছে রাজ্য সরকার। উত্তর ২৪ পরগণার হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাম্পাস কৃষ্ণনগরে গড়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর নদীয়া জেলায় তৃণমূলের তরফে মতুয়াদের কাছে টানার জন্য সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসকে। তিনি নিজেও একজন মতুয়া মতাবলম্বী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই অসমের এনআরসি রিপোর্টের প্রতিবাদে আন্দোলন হয়েছে জেলায়। জেলার বিভিন্ন রেল স্টেশনে একাধিকবার অবরোধ করা হয়েছে।
নদীয়া জেলায় মতুয়াদের যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, সেই সত্যজিৎ বিশ্বাসই খুন হলেন। এই মুহূর্তে শাসক দলে নদীয়া জেলায় মতুয়াদের নেতৃত্ব দেওয়ার তেমন কেউ নেই। রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা ভোটের মুখে শাসক দল চাপে পড়ল। কাকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে? সত্যজিতের বিকল্প কেউ না থাকায় শাসক দলের নেতারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
সোমবার নিহত দলীয় বিধায়কের বাড়িতে আসেন সংসদ সদস্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক বলেন, এই জেলার মতুয়া সংগঠনের অন্যতম মুখ ছিলেন সত্যজিৎ। এটা অস্বীকার করা যায় না। প্রধানমন্ত্রী ঠাকুরনগরে সভা করছেন, তার কয়েকদিনের মধ্যে এখানে এই ঘটনা ঘটল। পূর্ব পরিকল্পিত এই খুন। ঘটনা ঘটার আগে ১০ বার বিদ্যুৎ কাটা হয়েছে। এখানকার মানুষকে জিজ্ঞেস করুন, ক’বার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে? ইচ্ছাকৃতভাবে তা করা হয়েছে। তাঁর দেহরক্ষী ছুটিতে ছিলেন। সুতরাং পূর্ব কল্পিতভাবে এই খুন করা হয়েছে। তবে সত্যজিৎকে খুন করে তৃণমূলকে শেষ করা যাবে না। এখানে ঘরে ঘরে সত্যজিৎ জন্ম নেবে।