বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
‘‘আত্মানুভবতুষ্টাত্মা নান্তরায়ৈর্বিহন্যসে।।’’
শ্রীমান্ উদ্ধব শ্রীকৃষ্ণের আদেশ শুনিলেন। এই সময় নিরবে ভাবিলেন—শ্রীকৃষ্ণের দাস আমি, ইহাই আমার স্বরূপ। দাসের কার্য সেবা, ইহা সকলে মনে করে, আমিও মনে করিতাম, কিন্তু ইহা ঠিক নহে। দাসের কার্য সেবা নহে। দাসের কার্য আজ্ঞা পালন। সেবা-কার্যের আদেশ করিলেই সেবা করা যায়, নতুবা নহে। সেবা অর্থ সন্তুষ্টিবিধান। কিসে তাঁহার সন্তুষ্টি তাহা আমাপেক্ষা তিনি সহস্রগুণে ভাল জানেন। সুতরাং যে কার্যের আদেশ করিয়াছেন তাহাই পালন করিতে হইবে পরম সেবা বুদ্ধিতে—যদিও বিরহতাপে দগ্ধীভূত হইব।
উদ্ধব দুই হাতে শ্রীকৃষ্ণের দুই চরণের ধূলি লইয়া স্বীয় বক্ষে মাখাইয়া সাশ্রুনেত্রে কহিলেন—‘‘ত্বয়ি মে মতিরাস্তাম্’’, আমার মতি শুধু তোমাতেই যেন থাকে।
তুমি আমাকে ত্যাগী হইয়া, একরূপ সন্ন্যাসী হইয়া পৃথিবী পর্যটন করিতে আদেশ করিয়াছ। মাদৃশ বিষয়াসক্ত অভক্তের পক্ষে ইহা দুষ্কর। তুমি আমার কল্যাণের কথা ও জগতের কল্যাণের কথা বলিয়াছ। আমি এ সব কিছুই বুঝি না। যাহাতে তোমার আদেশ অনায়াসে পালন করিতে পারি এ ভৃত্যকে সেইরূপ শিক্ষা দাও—‘‘অনুশাধি ভৃত্যম্’’। তুমি ছাড়া আমাকে সদুপদেশ দেয় আর কেহ নাই। তোমাকে হারাইব এই ভাবী বিরহ-ভাবনায় আমি বিচলিত। আমার নির্বেদ উপস্থিত হইয়াছে। চারিদিকে তাকাইয়া আর কোন উপায় নাই দেখিয়া তোমার শরণাপন্ন হইলাম। কারণ, তুমি মানুষের একমাত্র আশ্রয়, নারায়ণ। তুমি মানুষের একমাত্র সুহৃদ, তুমি অনন্ত এবং অনবদ্য। এইজন্য আশা—অক্ষম বলিয়া উপেক্ষা করিবে না।
উদ্ধবের কথায় পরম প্রীত হইয়া শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন—উদ্ধব, বিষয়-বাসনাই মানুষের একমাত্র বন্ধন। তাহা হইতে উদ্ধারের একটি মাত্র উপায়—আত্মজ্ঞান। পথভ্রষ্টের গুরুই পথপ্রদর্শক। জীবনিবহের আত্মাই পরমগুরু। কল্যাণলাভের উপায় জ্ঞান। প্রত্যক্ষ জ্ঞান কি পরোক্ষ জ্ঞান, আত্মার দ্বারা লভ্য। সাংখ্য-যোগিগণ আত্মাকে পুরুষরূপে প্রত্যক্ষ করেন।
একপাদ, দ্বিপাদ, বহুপাদ ও পাদহীন বহু প্রকারের সৃষ্ট জীবের মধ্যে পুরুষ আমার অধিক প্রিয়। অনন্ত সৃষ্ট জীবমধ্যে পুরুষই আমাকে ঈশ্বররূপে জানে ও সযত্নে আমাকে অনুসন্ধান করে। আমি ইন্দ্রিয়ের অতীত হইলেও নানাবিধ চিহ্ন ও গুণের দ্বারা পুরুষের অনুমতির বিষয় হই। আমার পূর্বপুরুষ ছিলেন যদুরাজ। তিনি এক অবধূতকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন—বালক বয়সে তিনি এত গভীর জ্ঞানের অধিকারী কি করিয়া হইলেন? অবধূত তাঁহাকে তাঁহার চব্বিশজন গুরুর কথা বলিয়াছিলেন। উদ্ধব! সেই কথা তোমাকে এখন বলিব।
যদুরাজার সহিত একজন অবধূতের দেখা হইয়াছিল। অবধূত সন্ন্যাসী। সন্ন্যাসী ছিলেন বয়সে বালক। বালক-সন্ন্যাসী দেখিয়া রাজার অন্তরে কৌতুহল জন্মিল। সাধারণতঃ শেষ বয়সে লোকে সন্ন্যাসী হয়। তরুণ বালক কি করিয়া সন্ন্যাসী হইল, এই প্রশ্ন মনে আসায় যদুরাজ অবধূতকে জিজ্ঞাসা করিলেন—
আত্মবিচার হইতে সাধারণতঃ সন্ন্যাস আসে। আত্মবিচার বার্ধক্যে আসাই স্বাভাবিক। এত অল্প বয়সে আপনার কি করিয়া সন্ন্যাস আসিল? আপনি সুন্দর পুরুষ। দারপরিগ্রহ করিয়া সংসার করিতে পারতেন। এত অল্প বয়সে আপনার কামনা-বাসনা কি করিয়া দূর হইল? বাহ্যদৃষ্টিতে আপনার আনন্দের কোন কারণ দেখি না। কিন্তু আপনার মুখ দেখিলে মনে হয় আপনি সর্বদা আনন্দে ডুবিয়া আছেন। আপনার আনন্দের উৎস কোথায়?