বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
বিশাল দেশ, বিরাট জাতি,— এ দেশে মুষ্টিমেয় কর্ম্মী হইলে চলিতে পারে না। দেশ জোড়া শত শত মত, শত শত পথ,—এমন অবস্থায় অধঃপতনের গতিবেগ প্রহত করিতে হইলে একটি মাত্র নির্দ্দিষ্ট লক্ষ্য লইয়া গঠিত সঙ্ঘ দ্বারা সম্যক্ কার্য্য হইবে না। শত শত সঙ্ঘ গঠিত হইবে এবং নিজ নিজ কর্ম্মের ব্যাপকতা দিয়া ইহারা শত প্রকারে জাতির মধ্যে গঠনমূলক উপাদান সঞ্চয় করিবে। তাই আজ প্রকৃত কর্ম্মীকে উদার নির্ম্মৎসর এবং সকল কল্যাণকারীর সমর্থনকারী হইতে হইবে। সমগ্র দেশকে একটা মাত্র সঙ্ঘের মধ্যে গন্ডীবদ্ধ করিবার জন্য নিরর্থক চেষ্টা না করিয়া, নিজ নিজ অকপট আবেগে প্রাণান্ত সাধন করিতে হইবে। যে-কেহ যে-কোন স্থানে যে-কোনও ভাবে দেশ-কল্যাণে ব্রতী হইয়াছেন, তাঁহাকে পরিপূর্ণ চিত্তে শ্রদ্ধা করিতে পারার নামই প্রকৃত সঙ্ঘ শক্তি। সম্প্রদায় গড়িলেই সঙ্ঘ-শক্তি জাগে না; দল হইলেই বল হইল, এমন নহে। যেখানে মানুষ নিঃস্বার্থভাবে জগতের কল্যাণ চাহিয়াছে, সেখানেই সে সর্ব্বদা সকল সঙ্ঘবুদ্ধির অতীত হইয়া এখ মহাসঙ্ঘের অন্তর্ব্বর্ত্তী হইয়াছে। যে সঙ্ঘ-শক্তির অভাব আজ ভারতে বিশেষভাবে অনুভূত হইতেছে, তাহা এই মহাসঙ্ঘ-শক্তি। যাহারা এই মহাসঙ্ঘের শক্তিকে উপলব্ধি করিয়াছেন, তাহাদিগকে ‘‘মহাসঙ্ঘী’’ বলিতে পারি। নিজে যে কার্য্যটীর সমাপ্তিকল্পে আজীবন তপস্যা করিয়া আসিতেছেন, অপর কেহও সামান্য শ্রমে তাহা করিয়া যশস্বী হইলে মহাসঙ্ঘী রুষ্ট বা ঈর্ষ্যাবান্ হন না। জগৎ-কল্যাণই তাঁহার কাম্য, নিজে করিয়া উঠিতে পারেন নাই,— অপরে করিতে পারিয়াছেন, ইহা ত’ সুখেরই কথা। মহাসঙ্ঘীর চিত্তে যশোলিপ্সা নাই, নেতৃত্ব-প্রতিষ্ঠার কামনা নাই,— আছে শুধু নিষ্কাম জগৎ-কল্যাণী প্রেরণা।
যতই চেষ্টা কর না কেন, জগতের সকল লোককে কখনও একটা নির্দ্দিষ্ট সঙ্ঘের মধ্যে আনিতে পারিবে না। আবার যতই প্রয়াসী হও না কেন, সঙ্ঘ গড়িবার যে স্বাভাবিকী প্রেরণা জীব-মাত্রেরই অন্তরে ভগবান্ দিয়া দিয়াছেন, তাহারও বিলোপ সাধন করিতে পারিবে না। জীব যতক্ষণ শিব না হয়, ততক্ষণ সে দেহ, মন ও পৃথিবীর সীমাবদ্ধতার প্রভাবকে অতিক্রম করিতে পারে না। ততক্ষণ সে মহাসঙ্ঘ গড়িবার প্রেরণাকে সীমাবদ্ধ সঙ্ঘ গড়িতেই প্রয়োগ করে এবং দিকে দিকে শত শত সীমাবদ্ধ সঙ্ঘ গড়িয়া সৃষ্টির বৈচিত্র্যের সাক্ষ্য দেয়।
তোমাদিগকে আজ জগতের প্রত্যেকটি সীমাবদ্ধ সঙ্ঘকেই স্বীকার করিয়া লইতে হইবে, প্রত্যেকেরই প্রতি শ্রদ্ধাযুক্ত হইয়া সকলেরই কর্ম্মপ্রয়াসে যথাসাধ্য সহায়তা দান করিতে হইবে, সকলেরই সাফল্যে আনন্দ প্রকাশ করিতে হইবে। আজ দেশে এইরূপ কর্ম্মীরই অভাব, নতুবা অপর সঙ্ঘের প্রতি ঈর্ষ্যাপরায়ণ কর্ম্মীর অভাব কোথায়? শত শত কর্ম্মী নিজ নিজ আদর্শের চরণে অবহেলে আত্মবিসর্জ্জন করিতেছেন।