বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
‘‘Organisation’’ শব্দের অর্থ Divission of Labour (শ্রমবিভাগ)। প্রত্যেকে আপনার আপনার কাজ করে এবং সকল কাজ মিলে একটি সুন্দর ভাব হয়।’’
বস্তুত, ঐসময় আমেরিকা হইতে বারংবার পত্রাঘাত করিয়া স্বামীজী ভাবী রামকৃষ্ণ সঙ্ঘকে একটি নির্দিষ্ট রূপ দান করিতে প্রয়াস করিয়াছিলেন। অবশেষে ১৮৯৭ সালের ১লা মে বলরামমন্দিরে আয়োজিত একটি সভায় রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করিল। সদ্যোজাত ঐ সংগঠনকে একটি কোমলাঙ্গ শিশুর ন্যায় অতি আদরের সহিত পরিপালনের ইচ্ছা স্বামীজীর অন্তরে বলবতী থাকিলেও তিনি একথা বিলক্ষণ জানিতেন যে, এই সদ্যোজাতের চলার পথটি মসৃণ নহে। সুতরাং এমন কিছু নিয়মের নিগড়ে তিনি উহাকে বাঁধিয়া রাখিতে চাহিলেন যে, সঙ্ঘের প্রাণশক্তি যেন উহার চলার পথে সহসা নিঃশেষিত না হইয়া যায়। কারণ, এই সঙ্ঘ জগতের কল্যাণদীপ হস্তে ‘বহুজনহিতায় বহুজনসুখায়’ সহস্রাধিক বর্ষ শ্রীরামকৃষ্ণের ভাববাহক হইয়া জাগরূক থাকিবে—এই দূরদর্শন স্বামীজীর হইয়াছিল।
উক্ত পত্রে স্বামীজী আরো লিখিলেন:
‘‘Life is ever expanding, contraction is death. (জীবনের অর্থ সম্প্রসারণ, সঙ্কোচনই মৃত্যু)। যে আপনি নরকে পর্যন্ত গিয়ে জীবের জন্য কাতর হয়, চেষ্টা করে, সে-ই রামকৃষ্ণের পুত্র। ইতরে কৃপণাঃ (অপরে কৃপার পাত্র)। যে এই মহাসন্ধিপূজার সময়ে কোমর বেঁধে খাড়া হয়ে গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে তাঁর সন্দেশ বিতরণ করবে, সে-ই আমার ভাই, সে-ই তাঁর ছেলে, বাকি যে তা না পার—তফাৎ হয়ে যাও, এই বেলা ভালয় ভালয়।...তাঁর চরিত্র, তাঁর শিক্ষা, ধর্ম চারিদিকে ছড়াও—এই সাধন, এই ভজন; এই সাধন, এই সিদ্ধি।...Onward, onward (এগিয়ে যাও, এগিয়ে যাও), নামের সময় নাই...দেখা যাবে পরে। এখন এজন্মে অনন্ত বিস্তার—তাঁর মহান চরিত্রের, তাঁর মহান জীবনের, তাঁর মহান আত্মার। এই কার্য—আর কিছু নাই। যেখানে তাঁর নাম যাবে, কীটপতঙ্গ পর্যন্ত দেবতা হয়ে যাবে, হয়ে যাচ্ছে, দেখেও দেখছ না? এ কি ছেলেখেলা, এ কি জ্যাঠামি, এ কি চ্যাংড়ামি—উত্তিষ্ঠত, জাগ্রত।...যেগুলো নাস্তিক, অবিশ্বাসী, নরাধম, বিলাসী—তারা কি করতে আমাদের ঘরে এসেছে? তারা চলে যাক।’’
অসাধারণ এই চিঠিতে ভাবপ্রচার এবং সঙ্ঘের আদর্শের মূল কথাটি নিজস্ব অননুকরণীয় ভাষায় বজ্রদৃপ্ত ভঙ্গিতে স্বামীজী লিখিয়া গেলেন। রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ আরো দশটি সঙ্ঘ বা সংগঠনের ন্যায় নহে। ইহার স্বতন্ত্র চারিত্র্য রহিয়াছে। এই সঙ্ঘের মূল ভিত্তি আধ্যাত্মিকতা। এবং বেদান্তই আধ্যাত্মিকতার শ্রেষ্ঠ মুখপত্র। যদি কেহ এই সঙ্ঘকে সংজ্ঞায়িত করিতে চেষ্টা করেন, তাহা হইলে সূর্যের সহিত ইহা তুলনীয়। সংসার-ত্যাগী সন্ন্যাসীদের লইয়া গঠিত এই সঙ্ঘ যেন সূর্যের দেহ। লক্ষ লক্ষ অনুরাগী ভক্ত সেই সূর্যের রশ্মিস্বরূপ। যদি কেহ এই সংগঠনকে ‘ব্যাচেলার্স ক্লাব’ মনে করেন, তাহা হইলে তিনি নিশ্চয়ই ভুল করিবেন। মানুষের চৈতন্যরূপী স্ব-স্বরূপের বিকাশ সাধনই এই সঙ্ঘের একমাত্র লক্ষ্য। সুতরাং রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের সহিত যুক্ত সকল অনুরাগী ও ভক্তেরও একমাত্র লক্ষ্য চিৎ-স্বরূপ আত্মার বিকাশ সাধন। এবং ‘‘শ্রীভগবান রামকৃষ্ণ প্রদর্শিত প্রণালী অবলম্বন করিয়া নিজের মুক্তিসাধন করা ও জগতের সর্বপ্রকার কল্যাণসাধনে শিক্ষিত হওয়ার জন্য’’ এই সঙ্ঘ দায়বদ্ধ। স্বামীজীর মতে, শ্রীরামকৃষ্ণের তিনপ্রকার শরীর গুরুভ্রাতাগণ প্রত্যক্ষ করিয়া থাকেন। প্রথম শরীর—শ্রীরামকৃষ্ণের স্থূলশরীর (যাহা এখন আমরা ফোটোগ্রাফে দেখিয়া থাকি)—রক্তমাংসের, হাসি-কান্নার, সুখ-দুঃখের, মান-অপমানের পেটিকাবদ্ধ আমাদের ইষ্টমূর্তি।