বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
এমন দ্রুত ও পূর্ণভাবে মেঘ-কুয়াসার ঝিকিমিকি আলোককে দূর করা কঠিন কাজ—যে মেঘ-কুয়াসাকে আজিকার বুদ্ধিবাদ পরম সত্যের দীপ্তি বলিয়া ভ্রম করে। আধুনিক মন নিম্নভূমির ঝুটো আলোকে এতদিন ধরিয়া অবিরাম ঘুরিয়া বেড়াইয়াছে (আর আমরাও সেইসঙ্গে ঘুরিয়াছি) যে, আজ কাহারও পক্ষে সহজ নয় সূক্ষ্মদৃষ্টির সূর্য্যালোকের দ্বারা কুজ্ঝটিকারজিকে অপসারিত করা এত শীঘ্র ও এমন সম্পূর্ণভাবে যেরূপ এখানে করা হইয়াছে। আধুনিক মানব-ধর্ম্ম ও দয়াদাক্ষিণ্য সম্বন্ধে যাহা বলা হইয়াছে, আবেগময় আদর্শবাদীর ও অক্ষম বুদ্ধিবাদীর নিষ্ফল প্রয়াস সম্বন্ধে তথা ধর্ম্মমতের সমন্বয় ও সেইরূপ অন্যান্য প্রচেষ্টা সম্বন্ধে যাহা বলা হইয়াছে সে সমস্তই সুচিন্তিত কথা, তাহাতে অবান্তর কিছু নাই। কিন্তু এসব উপায়ে ত মানুষের জীবনধারার একান্ত আবশ্যকীয় রূপান্তর সাধন সম্ভবপর হইবে না—তাহা হইতে পারিবে শুধু মূল সত্যে পৌঁছিলে, আন্তর ও আধ্যাত্মিক রূপান্তর সাধন করিলে এবং চেতনাকে দিব্য রূপ দিলে। কিন্তু আজিকার চিৎকার গন্ডগোল ও বিপর্য্যয়ের মাঝে সত্যের বাণী কাহাকেও শোনান কঠিন।
বহির্মুখী প্রকৃতির ঘটনাবলীর ক্ষেত্র এবং ভাগবত সত্যের ক্ষেত্র, এই দুই ক্ষেত্রের মধ্যে যে পার্থক্য, তাহা আন্তর জ্ঞানের মূল কথার অন্তর্গত, এই পার্থক্যের উপর খুব জোর দেওয়া হইয়াছে এখানে। ইহাকে পত্রলেখক যে-ভাবে দেখিয়াছেন, তাহা শুধু একজন টিকাকারের চাতুর্য্যের পরিচয় দেয় না, বরং তাহাকে বলা যায় একটা সুস্পষ্ট ধ্রুবতত্ত্বের অভিব্যক্তি, যে- তত্ত্ব তোমার দৃষ্টিপথে পড়ে যখন তুমি সীমারেখা পার হইয়া গিয়া বাহ্য জগৎকে দেখ তোমার আন্তর আধ্যাত্মিক অনুভুতির ক্ষেত্র হইতে। তুমি যতই ঊর্দ্ধ্বে উঠিবে বা যতই ভিতরে প্রবেশ করিবে, ততই তোমার দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্ত্তিত হইবে এবং পদার্থবিজ্ঞানের দ্বারা ব্যবস্থিত তোমার বাহ্য জ্ঞান তাহার আপন যথার্থ ও একান্ত সীমাবদ্ধ স্থান গ্রহণ করিবে। অধিকাংশ মানসিক ও বহির্মুখী বিদ্যার মত পদার্থবিদ্যাও তোমাকে দেয় শুধু পদ্ধতিপ্রণালীর তত্ত্ব। একথাও বলিতে পারি যে পদ্ধতিপ্রণালীর সমগ্র তত্ত্বও ইহা দিতে পারে না; কারণ তুমি স্থূল গরবান তত্ত্ব কিছু কিছু ধরিতে পারিলেও অত্যাবশ্যকীয় সূক্ষ্ম ভারহীন তত্ত্বরাজি তোমার নজরের বাহিরে থাকিয়া যায়; তুমি ধরিতে পার কেবল ঘটনাবলীর পরিবেশ, কিন্তু কি প্রকারে তাহারা ঘটিতেছে তাহা একরকম অজানা থাকিয়া যায়। পদার্থবিজ্ঞানের অপূর্ব্ব কীর্ত্তিকলাপ, তাহার জয়জয়কার সত্ত্বেও সমগ্র জাগতিক ব্যাপারের মূলতত্ত্ব, তাহার কারণ, তাহার অর্থ, আগের মতই, হয়ত বা আগের চেয়েও বেশী, অন্ধকার ও রহস্যময় রহিয়া গিয়াছে। বিজ্ঞান ক্রমবিকাশের যে ছক প্রস্তুত করিয়া দিয়াছে তাহা একটা অযৌক্তিক জাদুবিশেষ, অতিবড় রহস্যময় কল্পনা অপেক্ষাও বুদ্ধিভ্রংশকারী; শুধু এই সমৃদ্ধ বিচিত্র বিশাল জড়জগতের কথা নয়, প্রাণমনচেতনারও তাহাদের ক্রিয়াবলীর ক্রমপরিণতির কথা বলিতেছি, যাহা সমস্তই নিশ্চেতন ইলেকট্রন কণার রাশি হইতে পরিণত, একই অভিন্ন ইলেকট্রন-কণা শুধু সংখ্যা ও সংঘটনপদ্ধতিতে ভিন্ন।