বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
ঈশ্বরের ক্ষেত্রে মনের সংকোচ-বিকাশী গতি ও স্নায়ুর সংকোচ-বিকাশী গতির মধ্যে সমান্তরলতা রক্ষার প্রশ্নই ওঠে না কারণ তাঁর ক্ষেত্রে সব কিছুই তো মনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কোন কিছুর সঙ্গেই তাঁর সমান্তরলতা বজায় রাখার অবকাশই নেই। তাই ঈশ্বর ক্লিষ্টাবৃত্তি থেকে চিরমুক্ত।
মানুষের ক্ষেত্রে অবিদ্যার প্রভাবে ক্লেশ বৃত্তির উদ্ভব হয়। অবিদ্যা যার অপর নাম চরম অজ্ঞতা, পঞ্চ স্তরে বিন্যস্ত। স্তরগুলো হ’ল অবিদ্যা, অস্মিতা, রাগ, দ্বেষ ও অভিনিবেশ।
অবিদ্যা: ‘‘অনিত্যাশুচিদুঃখমনাত্মসু নিত্যশুচিসুখাত্মখ্যাতিরবিদ্যা।’’ যখন নিত্য, শুচি ও দুঃখাত্ম বৃত্তিকে অজ্ঞাতবশতঃ নিত্য, শুচি ও সুখাত্ম বলে গণ্য করা হয় তাকে বলে অবিদ্যা। এই পাঞ্চভৌতিক জগতের সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী। তবুও যখন এই অবিদ্যার প্রভাবে মানুষ ভেবে বসে যে তার নিজের বলতে যা কিছু সবই তার সঙ্গে চিরকাল থেকে যাবে। এই যে ত্রুটিপূর্ণ চিন্তনপ্রক্রিয়া, এরই নাম অবিদ্যা। তার মানে এই যে মানুষ যখন অনিত্যকে নিত্য, অশুচিকে শুচি, জাগতিক দুঃখ-যাতনাকে সুখ ও অনাত্মিককে আত্মিক সত্তা বলে বিবেচনা করে, তাকে বলে অবিদ্যা। এরা হ’ল অবিদ্যার রকমারি প্রকারভেদ।
এ যেন সেই কুকুরের নিজের হাড় চিবানো। হাড়ে রস-কষ কিছুই নেই কিন্তু চিবোতে গিয়ে কুকুরের ঠোঁটগুলো কেটে গিয়ে প্রচুর রক্ত ঝরে। কুকুর তার নিজের রক্ত চুষে ভাবে রক্তটা বুঝি বাইরের থেকে আসছে। যদিও কুকুরটা নিজেই নিজের অঙ্গ চিবিয়ে ঘা করছে, কিন্তু ভাবছে সে সুখ পাচ্ছে। এই ভাবনাটা অবিদ্যাপ্রসূত। অবিদ্যাগ্রস্ত জীব স্থূল প্রাণহীন অচেতন বস্তুকে অত্যুজ্জ্বল আত্মা বা আধ্যাত্মিক প্রতিমুর্ত্তি বলে মনে করে। এ সবই অবিদ্যার প্রভাবপ্রসূত।
অস্মিতা: ‘‘দৃক্দর্শনশক্ত্যোরেকাত্মতৈবাস্মিতা’’। অবিদ্যার দ্বিতীয় স্তর হ’ল অস্মিতা। মানুষের জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয় যখন ঠিক মত কাজ করে, মনও ঠিক ঠিক কাজ করে। যদি সাক্ষী মন না থাকত তাহলে জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয়গুলোর কাজও অসমর্থিত থেকে যেত। অনুরূপভাবে মন যা কিছু করে চিতিশক্তির উপস্থিতির জন্যেই তা স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়। আবার অবিদ্যাপ্রসূত ভ্রান্তি বশতঃ মানুষ ভুল করে ভেবে নেয় যে মনের কাজ ও তার দৃক সত্তার কাজ এক। এই ধরনের অজ্ঞতাকে বলা হয় অস্মিতা। যেমন চোখের কাজ দেখা কিন্তু মন সহায়তা করে বলেই চোখ ঠিক মত কাজ করে যেতে পারে। যে শক্তির সাহায্যে চোখ দেখে তার নাম দর্শন। এই দর্শনশক্তি ও মন যথাযথ কাজ করছে বলেই দর্শন ক্রিয়া সুচারুরূপে নিষ্পন্ন হচ্ছে। এই জন্যে মনের অস্তিত্ব অপরিহার্য। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে মনকে বলা হয় দৃকশক্তি। হাতের কাজ হ’ল শিল্পন। আজকাল দেখি, যারা ভাল গান গায় তাদেরও বলা হচ্ছে কণ্ঠশিল্পী। কণ্ঠ বা বাকযন্ত্র দিয়ে তো কোন শিল্পকর্ম হতে পারে না। হাতের কাজ শিল্পন ক্রিয়া, পায়ের কাজ হচ্ছে চরণ ক্রিয়া। দেহের ইন্দ্রিয়গুলো কাজ করে কখন? যখন মন কাজ করে কেবল তখনই ইন্দ্রিয়গুলো কর্মান্বিত হয়—নচেৎ নয়। ইন্দ্রিয়ের কাজ মনের দ্বারা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়। তাই ইন্দ্রিয়দের বলা হয় কর্মশক্তি আর মনকে বলা হয় কৃৎশক্তি। কৃৎশক্তির অবর্তমানে কর্মশক্তি নিষ্পন্ন হতে পারে না। প্রকৃত জ্ঞানের অভাবে মানুষ কৃৎশক্তি ও কর্মশক্তিকে ভুল করে এক করে ফেলে।