খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
সিদ্ধ্যসিদ্ধ্যোঃ সমো ভূত্বা সমত্বং যোগ উচ্যতে।।
অর্থাৎ যোগদৃষ্টি রেখে অনাসক্ত হয়ে কর্ম করা প্রয়োজন। যোগে অর্থাৎ ঈশ্বর-ভাবনায়, ঈশ্বর-চিন্তায় তাঁর স্মরণ-মনন সদা জাগ্রত রেখে যোগে স্থিত হয়ে সেই দৃষ্টিতে কাজ কর। সিদ্ধি অর্থাৎ কাজে সাফল্য এবং অসিদ্ধি বা কাজে ব্যর্থতা যাই আসুক না কেন সর্ব অবস্থাতেই অবিচলিত থাকাই হলো যোগ। ‘সিদ্ধ্যসিদ্ধ্যোঃ সমো ভূত্বা।’ এই অবিচলিত সাম্য অবস্থাই যোগ। ‘সমত্বং যোগ উচ্যতে’। মনের উত্থান পতন আছে, কখনো মন খুব উচ্চ চিন্তা করে কখনো বা খুব নিকৃষ্ট চিন্তা করে, কিন্তু এই উত্থান-পতন ও চাঞ্চল্যের মধ্যেও মনের একটা শক্তি আছে যার সাহায্যে মনকে স্থির করতে পারি। এই মনের স্থিরতাকে যোগ বলা হয়।
দূরেণ হ্যাবরং কর্ম বুদ্ধিযোগাৎ ধনঞ্জয়।
বুদ্ধৌ শরণমন্বিচ্ছ কৃপণাং ফলহেতবঃ।।
সমত্ববুদ্ধির আশ্রয় নিয়ে নিষ্কামভাবে কর্ম করতে বলেছেন। সাধারণ মানুষ কাজ করে স্বার্থসিদ্ধির জন্য, এটি সকাম কর্ম। বুদ্ধিযোগে এ কাজ হীন কাজ। ভগবান বলছেন, বুদ্ধির শরণ নাও, বুদ্ধির বিকাশ-সাধনে চেষ্টা কর।
ছোট শিশুর যে বুদ্ধি, তাকে অপরিণত মনে করা হলেও, তার জগৎ অনুযায়ী সে ঐ বুদ্ধির দ্বারা ভাল-মন্দ বিচার করছে। একটু বড় হলে তার বুদ্ধির পরিণতি তথা পরিপক্কতা আসে। আর এই পরিণত বুদ্ধি যা বিবেকের আলোয় পরিস্নাত, তা মনকে নিষ্কাম তথা নির্বাসনা করে। একেই বলা হয় প্রকৃত বুদ্ধি তথা শুদ্ধ বুদ্ধি। এই বুদ্ধি মানুষকে মুক্তির পথ দেখায়।
আবার অন্য জায়গায় ভগবান বলছেন, ‘দদামি বুদ্ধিযোগং’ (গীতা-১০/১০)। আমি তোমাকে বুদ্ধিযোগ দিই। ভগবান নিজে করে দেন না। বুদ্ধিযোগে মানুষ কাজ করে। ভগবান বলছেন, যারা ফল চায়, তারাই কৃপণ, দীন-হীন। সুতরাং ফল কামনা করে কৃপণ হয়ে যেও না।
গীতার দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায়ে সাংখ্যযোগ ও কর্মযোগ কর্মরহস্য ও চিত্ত-শুদ্ধির উপায় বলা আছে। যোগের লক্ষণ আগেই বলা হয়েছে ‘সমত্বং যোগ উচ্যতে’। problem face করতে (সমস্যার সম্মুখীন হতে) হলেই মন অস্থির হয়। কিন্তু চরম প্রতিকূলতা ও সমস্যাসঙ্কুল অবস্থায় মনকে যদি ধীর স্থির রাখা যায় তাহলে জীবনে সাফল্যের সৌরভ অনুভব করা যায়।
যোগের প্রথম লক্ষণটি বলা হলো। পরবর্তী শ্লোকে ভগবান বলেছেন:
বুদ্ধিযুক্তো জহাতীহ উভে সুকৃতদুষ্কৃতে।
তস্মাদ্ যোগায় যুজ্যস্ব যোগঃ কর্মসু কৌশলম্।।
প্রথমে বলেছেন, ‘বুদ্ধিযুক্তো জহাতীহ উভে সুকৃতদুষ্কৃতে’। যারা যোগবুদ্ধি আশ্রয় করে জীবনযাপন করছে অর্থাৎ যোগবুদ্ধির ব্যবহারিক বিকাশ ঘটিয়েছে নিজ জীবনে, তারা সুকৃতি-দুষ্কৃতি এবং শুভ-অশুভ কর্মের পারে চলে যায়। তারপর বললেন, “তস্মাদ্ যোগায় যুজ্যস্ব”, তুমি যোগী হবার জন্য চেষ্টা কর। শেষে জানালেন “যোগঃ কর্মসু কৌশলম্”—যোগ অর্থাৎ কাজ করার কুশলতা। কর্ম তো আমরা সবসময়ে করে থাকি, একটি মুহূর্তও মানুষ কাজ ছাড়া থাকতে পারে না। তবে এই কাজগুলি সমস্ত রকমের মানুষ একই ধরনের দক্ষতায় সম্পন্ন করতে পারে না। প্রত্যেক মানুষের দক্ষতার তারতম্য আছে। এক ধরনের কাজের দক্ষতাকে বলা যায় productive efficiency(উৎপাদন ক্ষমতা)। যে-কোন শ্রমজীবী মানুষ তাদের কাজ যদি সার্থকভাবে সম্পূর্ণ করে, তাহলে কৃষি শিল্প বাণিজ্য ইত্যাদির উন্নতি হবে, উৎপাদন বাড়বে।
স্বামী রঙ্গনাথানন্দের ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার রূপরেখা’ থেকে