খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
তবে, চিকিৎসকদের কায়িক পরিশ্রম যতটা না হচ্ছে, তার চেয়েও বেশি হচ্ছে মানসিক যন্ত্রণা। কারণ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসপাতালে কাটানোর পর অনেকেই বাড়ি ফিরছেন খালি হাতে। দেরিতে পৌঁছনোয় সুপার মার্কেটগুলিতে মিলছে না খাদ্যপণ্য বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ‘বর্তমান’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লন্ডনবাসী বাঙালি চিকিৎসক ডাঃ সুতপা বিশ্বাস বলেন, ‘টানা এক সপ্তাহের হাড়ভাঙা খাটুনির পর সুপারমার্কেটে গিয়ে দেখি কিছুই অবশিষ্ট নেই। ফাঁকা র্যা কগুলো দেখে চোখে জল চলে এসেছিল। যখন ভোরবেলায় শুধু এনএইচএস কর্মীদের জন্য সুপারমার্কেটের দরজা খুলত, তখনও আমি সেখানে পৌঁছতে পারতাম না। কারণ, ওই সময় আমার সন্তানদের স্কুলে যাওয়ার তৈরি করে দিতে হতো।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্কুলগুলি অবশ্য নিজেদের সাধ্যমতো আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে গিয়েছে। তবুও, আমার বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব একটু বেশি হওয়ায় খুবই সমস্যা হতো। তবে, আমি ভাগ্যবান যে আমার সন্তানরা অন্তত স্কুলে যেতে পেরেছে।’
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও এই মুহূর্তে ময়দানে নেমে কাজ করতে হচ্ছে না সুতপাকে। তবে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে তাঁকে জরুরি বিভাগে মোতায়েন করা হতে পারে। আগামীদিনের পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে সুতপা বলেন, ‘সন্তানদের নিয়েই আমার সবচেয়ে বেশি চিন্তা। এখন তো স্কুল বন্ধ। আমি সিঙ্গল মাদার এবং ব্রিটেনে আমার কোনও আত্মীয়স্বজনও নেই।’
এনএইচএস-এর আর এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত চিকিৎসক ডাঃ ডায়ানা সুরেশ অবশ্য এখনও সামনে থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জন্য যথাসাধ্য করছে। তবুও, খাদ্যসামগ্রী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে আমাকে।’ সরকারের তরফে কোনও সাহায্য মিলছে কী? উত্তরে ডায়ানা বলেন, ‘আমার মতে এনএইচএস কর্মীদের প্রতি সরকারের মনোভাব অত্যন্ত উদাসীন। ময়দানে নেমে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মীদের কল্যাণের জন্য এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও সরকার উদ্যোগ আমার চোখে পড়েনি।’
ডায়ানা বা সুতপাদের মতো অতটা খারাপ অবস্থা হয়নি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অর্পিতা রায়ের। জানান, তাঁর এলাকায় খাদ্যপণ্যের কোনও ঘাটতি নেই। তবে, মানুষকে অযথা বাড়িতে খাদ্যদ্রব্য মজুত না করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘গোটা ব্রিটেনের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যপণ্য রয়েছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই।’
করোনা মোকাবিলায় ব্রিটেনের স্বাস্থ্যকর্মীদের এই নিঃস্বার্থ সেবায় অভিভূত ব্রিটেনবাসী। রীতিমতো নায়কের মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। যদিও, এই শিরোপা তাঁদের প্রাপ্য নয় বলেই মত অনেকের। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত চিকিৎসক বিনয়ের সুরে বলেন, ‘এটা আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এই পেশায় আসার দিন থেকেই এমন সময়ের জন্য আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন। যদি কেউ তেমনটা না ভেবে থাকেন, তাহলে সেটা দুর্ভাগ্যজনক।’