খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
আত্মার বাইরে তো কোনো বস্তু নেই। এখন যে বিষয়ী ভাবটা, যা বাহ্যিক কর্মতত্ত্বকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ীভাবে রূপান্তরিত করার কাজে ব্যাপৃত রয়েছে—সেই কর্ত্তৃভাবটা যখন পরম বিষয়ীভাবে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে, তখনই আত্মজ্ঞান বা পরাজ্ঞান লাভ ঘটে। যখন তুমি কিছু দেখছো, তখন সেটা দেখছে কে?—না, তোমার অহংভাবটা, তোমার ‘আমি করছি’—ভাবটা অর্থাৎ তোমার বিশুদ্ধ ‘আমি’টা। তোমার দেখার বেলায় এই ‘আমি’-টাই হ’ল বিষয়ী। যেমন, তুমি একটা হাতী দেখছো। এখন, হাতীটা দেখছে কে? তোমার কর্তৃ ‘আমি’টা, তোমার শুদ্ধ ‘আমি’। যখন তুমি জানো যে তোমার কর্তৃ ‘আমি’টা একটা হাতী দেখছে, তখন তুমি জানো যে “হ্যাঁ, আমি হাতী দেখছি”। এখন তোমার মধ্যেকার এই যে দ্রষ্টা ‘তুমিটা’—যার জন্যে তুমি জানছো যে তুমি হাতী দেখছো—এই দ্রষ্টৃ তুমিকে যখন তুমি জেনে ফেলছো, তখনই বলবো—তোমার আত্মজ্ঞান হয়েছে। এটাই হ’ল জ্ঞান। ‘সত্যং জ্ঞানমনন্তং ব্রহ্ম’। সত্য সম্বন্ধে আগেই কিছু বলেছি। এখন আধ্যাত্মিক পরিভাষায় সত্যের সংজ্ঞা হ’ল ‘পরহিতার্থং বাঙ্মনসো যথার্থত্বং সত্যম্।’ যখন তুমি অপরের হিতের জন্যে কিছু কর, সেই সময়কার তোমার যে কর্মৈষণা বা কর্মৈষণাপ্রেষিত মানস প্রক্ষেপ(Motive or Motivated psychic projection) সেটাকে বলা হয় সত্য। কিন্তু এটা তো দর্শনের ভাষা। বৈবহারিক জীবনে পঞ্চভূতের জগতে সত্য হ’ল বাস্তব তথ্য বা ঘটনার স্বীকৃত রূপ। জ্ঞানমার্গীর কাছে সত্য বলতে এটাই বোঝায়।
‘অন্ত’ মানে প্রান্ত, শেষ বিন্দু(The extremity, the culminating point)। ‘অনন্ত’ মানে যার কোন প্রান্তবিন্দু নেই, যার কোনো শেষ সীমানা নেই। এখন, পরমপুরুষের ক্ষেত্রে ‘অনন্ত’ শব্দের ব্যবহার হ’ল কেন? যদি বলি, ‘এক’, সেটা হ’ল একটা বিশেষ মানস-প্রক্ষের; যদি বলি ‘দুই’, সেটাও একটা মানস-প্রক্ষেপ। আর এই জাতীয় সমস্ত মানস-প্রক্ষেপগুলো হ’ল বাহ্য-অভ্যন্তরীণ(Extro-internal), শুধু বাহ্যিকও নয়, শুধু অভ্যন্তরীণও নয়। অর্থাৎ যার উৎসটা রইলো বাহ্যিক জগতে আর শেষ বিন্দুটা রইল অন্তর্জগতে। ‘অন্তম’ একটা বিশেষ মানস প্রক্ষেপ, অনন্তম্-ও তাই। তাহলে পরমপুরুষের বেলায় অনন্ত বলবো কেন? একবার বলছি, তিনি এক, অর্থাৎ একক সত্তা, আবার বলছি তিনি অনন্ত অর্থাৎ Infinite বা অসীম সত্তা।
শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তির ‘আনন্দ বচনামৃতম্’(১৪, ১৫, ১৬ খণ্ড) থেকে