খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
জীবননাথ! দুঃখ-দৈন্য-দুর্ব্বিপত্তি যখন শ্রাবণের ধারার মত অবিরাম মাথার উপর ঝরেছে, অসুখ-অশান্তি, হতাশা-নিরাশা যেদিন দুর্ভেদ্য প্রাচীরের মত জীবন-পথ রুদ্ধ ক’রে দাঁড়িয়েছে, পঙ্কিল কামনা বাসনা ও প্রলোভনের প্রবল প্রবাহ যখন আমায় ভাসিয়ে নেওয়ার উপক্রম করেছে, তখন তুমিই তো করুণাপরবশ হয়ে স্নেহাকুল জননীর মত সাদরে কোলে নিয়েছ।
হে করুণানিধান! তোমার নির্দ্দেশ অবহেলা ক’রে, অহংকার অভিমানে মত্ত হ’য়ে যখন বিপথে ছুটে গিয়েছি, তখন তুমিই তো ব্যস্ত হ’য়ে ত্রস্ত পদে এগিয়ে গিয়ে আমায় ফিরিয়ে নিয়ে এসেছ। আবিলতা, পঙ্কিলতা যখন আমায় চারিদিক থেকে ঘিরে ধরেছে, স্তূপীকৃত পাপতাপ, পুজ্ঞীভূত জজ্ঞাল-জাল যখন জীবনকে দুর্ব্বহ ক’রে তুলেছে, তখন হে আমার প্রিয়তম! তুমিই তো তোমার সুকোমল স্নেহশীল কর সঞ্চালনে সমস্ত জ্বালামালা জুড়িয়ে আমায় শান্তি ও সান্ত্বনা দিয়েছ।
কত আর বলবো, হে আমার দয়িত! কত শত বার বৃথা মোহে মুগ্ধ হ’য়ে তোমাকে হৃদয়াসন থেকে নির্ব্বাসন কোরে অন্যের জন্য সাগ্রহে আসন পেতে দিয়েছি, কত সহস্রবার প্রেম-প্রীতি-স্নেহ-করুণা বিস্মৃত হয়ে মায়া-মরীচিকার পিছনে ছুটে গিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। কিন্তু, তবুও তো তুমি আমায় কখনও ভুলোনি, বিশ্বাসঘাতক বলে অবিশ্বাস ক’রে ঘৃণাভরে (আমায়) দূরে তাড়িয়ে দাও নি।
হে আমার প্রিয়তম! চিরকালই তুমি আমায় সমস্ত প্রবঞ্চনা, প্রতারণা সমস্ত অনাদর অশ্রদ্ধা উপেক্ষা ক’রে সাদরে কোলে টেনে নিয়েছ, চিরকালই তুমি আমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা ক’রে, সমস্ত দোষত্রুটি ভুলে গিয়ে এই ‘‘চির অপরাধী পাতকীর বোঝা’’ হাসিমুখে ব’য়ে চলেছ!
কিন্তু হায়! তবুও আমি তোমায় বুঝলাম কই? বুঝেও সমস্ত প্রাণমন দিয়ে দরদ করলাম; ভালবাসলাম কই? ‘‘তুমি যে আমার, আমি যে তোমার, সকলের চেয়ে বেশী আপনার’’—একথা সমস্ত হৃদয় দিয়ে নিবিড়ভাবে অনুভব করতে পারলাম কোথায়? বুঝে না বুঝে অনভীপ্সিত পথে চলে প্রতিনিয়ত তোমার ঐ স্নেহকোমল হৃদয়ে কত না আঘাত করেছি, ইচ্ছায় অনিচ্ছায়, স্বেচ্ছায় পরেচ্ছায় কত শত বারই না তোমার ঐ দরদভরা বুকে মর্ম্মান্তিক শেল হেনেছি। কিন্তু, তবুও তুমি অকৃতজ্ঞ আমায় স্নেহালিঙ্গন দানে কুণ্ঠিত হওনি।
তাই, হে আমার অন্তরতম! আজ ‘এই অবহেলায়’ তোমার সেই ভুবনভুলান, প্রাণগলান, মনমাতান অপরূপ রূপমাধুরী স্মরণ ক’রে তোমার অহৈতুকী স্নেহকরুণা, আদর-যত্ন-ভালবাসার দাবী নিয়ে তোমার শ্রীচরণে উপস্থিত। আমার গর্ব্বিতি মস্তক তোমার চরণধূলার তলে লুণ্ঠিত হয়েছে, সমস্ত অহঙ্কার অভিমান চোখের জল ধুয়ে মুছে গেছে, আমি আজ ‘‘সকল দুয়ার হইতে ফিরিয়া তোমারই দুয়ারে এসেছি,’’ অশ্রুসিক্ত মৌন বেদনার অর্ঘ্য নিয়ে তোমারই করুণার প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছি।
স্বামী আত্মানন্দের ‘‘জীবন সাধনার পথে’’ থেকে