খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
এই অপরাধ থেকে মুক্ত হবার জন্য বিভিন্ন যুগে মনীষীগণ আমাদের সামনে অনেক পথেরই সন্ধান দিয়ে গিয়েছেন। পরমপুরুষ শ্রীগুরু রামকৃষ্ণদেব বলেছেন অধ্যাত্ম জগতে ‘যত মত তত পথ’। সকলের লক্ষ্য একই দিকে। সত্যই তাই—মত যত পথও ততই। কিন্তু তারমধ্যে সর্বাপেক্ষা সহজ সরল পথ হচ্ছে—তোমরা যদি তোমাদের পিতামাতাকে ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সেবা পরায়ণ হয়ে তাঁদের মধ্যে তোমাদের আদি পিতামাতার স্বরূপ দেখতে পাও এবং আদি পিতামাতাকে এই বাস্তব জগতের পিতামাতার সাথে লীন করে তাঁদের সেবায় রত থাকো, তাহলে অবশ্যই ওই আদি পিতামাতার সন্ধান পাবে।
কিন্তু যদি আদিকে ধরবার জন্য শূন্যের মধ্যে মনে মনে তাঁর চিন্তা বা উপাসনা করো এবং বাস্তব জগতে যাঁরা পিতামাতা আছে তাঁদের উপেক্ষা করো তাহলে তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই জাগতিক জগতের পিতামাতাগণ তোমাদের সৎকর্মে বাধার সৃষ্টি করবেন। আসলে গোড়াতেই তো যোগে ভুল হয়ে যাচ্ছে। এজন্যই তো সৎকর্মে এতো বাধার সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, আরও কারণ আছে। আমরা জানি যে ভগবান সর্বজীবেই বিরাজ করছেন। তাহলে বিচার করে দেখো, তিনি যদি সর্বজীবে বিরাজ করেন তাহলে আমাদের নিকট অশ্রদ্ধার কোন কিছুই থাকতে পারে না।
শিশু শ্রেণীতে পড়ার জন্য বি.এ বা এম.এ বা আরও উঁচু ক্লাশের পাস করা মাস্টার মহাশয়ের প্রয়োজন হয় না। পাঠশালার প্রথম শিক্ষার জন্য পিতামাতাই আমাদের প্রথম শিক্ষাগুরু। তাঁরাই আমাদের উঠতে, বসতে, চলতে, খেতে, কথা বলতে ইত্যাদি সকল কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তাই প্রথম গুরু হলেন আমাদের জাগতিক জগতের পিতামাতা। এরপর ক্রমান্বয়ে আমাদের জীবনে আরও অনেক গুরুকরণের ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের মধ্যে জীবনের সর্বাপেক্ষা অমূল্য গুরুকরণ হলো সদ্গুরু লাভ। অধ্যাত্ম জগতে যেতে হলে, আদি পিতামাতাকে জানতে হলে ও তাতে আত্মাহুতি দিতে হলে এবং জীবনে সদ্গুরু লাভ করতে হলে অবশ্যই প্রয়োজন জাগতিক জগতে পিতামাতার ওপর ভক্তি, শ্রদ্ধা, সেবা ও গুরুজ্ঞান।
কারণ গুরুশক্তি সকল জীবের মধ্যেই বর্তমান। আদি পিতামাতাই হচ্ছেন আমাদের পরমগুরু। তাই গুরু শব্দটি সর্বস্তরে এবং সকলক্ষেত্রেই প্রকাশ আছে। গুরু শব্দে ব্রহ্ম। গুরু থেকেই সকল কিছুর প্রকাশ। মানুষের মাঝেই মানব রূপে যুগ যুগান্তর ধরে শ্রীরামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রভৃতি মহাপুরুষগণ এসেছিলেন। মানুষের পূজাই আমরা করি আর মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের প্রকাশ। তাই গুরুকে বাদ দিয়ে আমরা এক পাও চলতে পারি না। গুরুর গুরুত্বকে উপলব্ধি করবার জন্যই সেই গুরুকথা আমাদের জন্মের সাথে সাথে, আমাদের জীবনের কর্মপথে বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পাচ্ছে। আমরা আমাদের অজ্ঞাতে তাঁরই গুণগান করছি। তিনি সকল স্থান জুড়ে আছেন। আমাদের বয়সের সাথে সাথে সর্বক্ষেত্রেই তিনি বিরাজমান। যেমন—পিতামাতা গুরু, শিক্ষা গুরু, কর্ম গুরু, দীক্ষা গুরু, ধাত্রী গুরু প্রভৃতি।
শ্রীশ্রী আচার্য জ্ঞানেশ্বরদেব প্রণীত ‘জ্ঞানেশ্বরোপনিষদ্’ (৪র্থ খণ্ড) থেকে