ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
একথা ঠিক, আমাদের এই প্রাচীন দেশে আর্থিক লেনদেনের সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। এক সময়ে পণ্যের আদানপ্রদানের মাধ্যমে যাবতীয় লেনদেন হতো। তারপরে এল ধাতুর ব্যবহার। পরে ধাতুর জায়গা নিল মুদ্রা। তারপর কাগজের নোট। এই নোট বা টাকার আদানপ্রদানই এখন অধিকাংশ মানুষের লেনদেনের মূল চাবিকাঠি। নরেন্দ্র মোদি এই ব্যবস্থা পাল্টে দিতে চাইছেন। এ নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই যে, আজকের দিনে প্রযুক্তির হাত ধরে অনলাইন আদানপ্রদান ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। এবং তা অনেক সুবিধাজনকও। এই ব্যবস্থা যাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে তা দেখা উচিত যে কোনও সরকারেরও। কিন্তু কোন ভারতে এটা পুরোমাত্রায় চাইছেন প্রধানমন্ত্রী? সেটাই বড় প্রশ্ন। বিভিন্ন সরকারি সমীক্ষা বলছে, ১৩৫ কোটি মানুষের এই দেশ জীবনধারণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু উন্নত দেশের চেয়ে কয়েক ধাপ পিছিয়ে রয়েছে। আমাদের সংবিধানে মৌলিক অধিকারসহ বেঁচে থাকার ন্যূনতম চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব পালনের কথাও বলা আছে। সেই দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছরেও তা অনেকক্ষেত্রেই অধরা। এদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত। কাজ নেই কোটি কোটি মানুষের। প্রত্যেক গ্রামে এখনও শিক্ষা-স্বাস্থ্যের ন্যূনতম পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। আর এটাই বাস্তব সত্য যে, একটা সমাজকে উন্নত আধুনিক করে গড়ে তুলতে হলে সে দেশের ঘরে ঘরে প্রাথমিক শিক্ষার আলোটুকু পৌঁছে দেওয়া জরুরি। সে সব না করে এদেশে কী করে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল লেনদেন সম্ভব? দেশের সব গ্রামে এখনও পর্যন্ত ব্যাঙ্কের শাখা নেই। বিশেষত গ্রামাঞ্চলের একটা অংশের মানুষ কোনওদিন ব্যাঙ্কের দরজায় পা রাখেননি। তাঁদের যা আয় তা লেনদেনের জন্য ব্যাঙ্কের প্রয়োজন হয় না। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে লেনদেনের এমন করুণ ছবি যেখানে স্পষ্ট সেখানে এইসব মানুষের কাছে দৈনিক যাবতীয় লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে করা জেগে দিবাস্বপ্ন দেখার মতো বিষয়। ডিজিটাল লেনদেনের জন্য সর্বাগ্রে দরকার স্মার্টফোন অথবা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ। তাতে ইন্টারনেট পরিষেবা থাকা বাধ্যতামূলক। দেশের কত পরিবারের কাছে সে সুযোগ রয়েছে? এছাড়াও যাঁরা প্রবীণ মানুষ তাঁদের অনেকের পক্ষেও-বা কতটা ডিজিটাল ব্যবস্থার সঙ্গে সড়গড় হওয়া সম্ভব? মুশকিল হল, আমজনতা যা বুঝতে পারে, মোদি সরকারের বিশেষজ্ঞ মাথারা তা বোঝেন না—তেমনটা নয়। আসলে আর্থসামাজিক পরিস্থিতিকে পিছনে রেখে দেশের গায়ে আধুনিকতার ছাপ দিয়ে সস্তা কৃতিত্ব পেতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সরকারের নীতি হল, দেশের মূল সমস্যাগুলির সমাধান না করে বাইরের চাকচিক্য প্রদর্শন। এর আর একটা উদ্দেশ্য হল, ডিজিটাল আদানপ্রদানের মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে তুলে দিয়ে বিপুল সংখ্যক কর্মী সংকোচনের পথে হাঁটা। ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ এবং সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই এ প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। পুরো মাত্রায় ডিজিটাল লেনদেন চালু হলে তাতে যে ষোলোকলা পূর্ণ হবে সন্দেহ নেই। মানুষের ভোগান্তি, সুবিধা অসুবিধা নিয়ে অবশ্য এই সরকারের কোনও মাথাব্যথা নেই।
সরকার ভাবছেই না, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সব মানুষ এই ডিজিটাল লেনদেনের জন্য প্রস্তুত আছে কি না? এই মোদি সরকার একের পর এক সিদ্ধান্ত দেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। মোদির ডিজিটাল ভারতে ব্যাঙ্কের শাখা তুলে দেওয়ার পরিকল্পনাটি সেরকমই একটি চাপিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ। ভারতের সর্বত্র এখনও ইন্টারনেট ডেটা সহজলভ্য নয়। তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর কথামতো ভারত সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল ব্যাঙ্কের পথে হাঁটলে ভোগান্তি যে বাড়বে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ভাবতে হবে, ব্যাপারটা যেন পর্বতের মূষিক প্রসব হয়ে না দাঁড়ায়।