ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
তবে কৃষকদের এই অহিংস আন্দোলনের জয়কে কোনওভাবেই খাটো করে দেখা ঠিক নয়। বরং স্বাধীনতার পরে দেশজুড়ে আর কোনও আন্দোলনের কাছে সরকার এভাবে মাথা নত করেছে কি না তা নিয়ে গবেষণা চলতে পারে। অন্নদাতাদের আন্দোলন ছিল অভূতপূর্ব। একই কথা অনেকটা শাহিনবাগের আন্দোলন নিয়েও বলা যায়। এই দুটি আন্দোলনই সরকারের কাছে একটা শিক্ষাও বটে। প্রবল শক্তিধর গেরুয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের রাজনৈতিক দলগুলি যা করে উঠতে পারেনি, লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়ে তা দৃষ্টান্ত করে রাখল দেশের কৃষক সমাজ। বলাবাহুল্য যে, মোদি জমানায় গত সাত বছরে দেশের সামগ্রিক অধঃপতন ঘটেছে। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দেশের শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশা। দারিদ্র-অপুষ্টি-অশিক্ষা অস্বাস্থ্যের পরিসংখ্যান বাড়ছে নিত্যদিন। নির্বিচারে বেসরকারিকরণ ঘুম কেড়েছে কর্মচারীদের। তবু কুম্ভকর্ণ সরকারের ঘুম ভাঙছে না। এই প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অহিংস পথে আন্দোলন করে যে সরকারের ঘুম ভাঙানো যায় তা কৃষকরাই প্রমাণ করলেন। কে বলতে পারে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ স্বৈরাচারী শাসকের হাত থেকে দেশ বাঁচাতে সোচ্চার হয়ে পথে নামলে আরও একটি শাহিনবাগ বা কৃষক আন্দোলনের মতো আন্দোলনের জন্ম হবে না? দিল্লির সীমান্তে আন্দোলনকারী কৃষকরাই দেখিয়ে দিলেন সম্মিলিত আন্দোলনে মিলতে পারে সাফল্য।
কিন্তু ক্ষমা চেয়ে বা বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের মৌখিক ঘোষণা করেই সব দায় এড়াতে পারেন না প্রধানমন্ত্রী। তাঁর একের পর এক হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে দেশের মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। নোটবন্দির সময়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। কৃষক আন্দোলনেও মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৭০০ জনের। মোদি মন্ত্রিসভারই এক মন্ত্রীর ‘গুণধর’ পুত্রের গাড়ির চাকা পিষে দিয়ে কৃষকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এর দায় তো প্রধানমন্ত্রীরই নেওয়া উচিত। কিন্তু এসব উহ্য রেখে তিনি শুধু ভোটের তাগিদে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে কৃষি আইন বাতিলের কথা ঘোষণা করে দায় সেরেছেন! যে কৃষকরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধাটুকু পর্যন্ত জানাননি প্রধানমন্ত্রী। লড়াইয়ের ময়দান না ছেড়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে কৃষক আন্দোলন মোদি প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রমাণ করল, প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হলে ন্যায্য দাবির কোনও আন্দোলনকে দমন পীড়নের মাধ্যমে আটকানো যায় না। সফল হওয়ার পথ দেখিয়ে দেশের শ্রমজীবী মানুষের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন অন্নদাতারা। তবে এটা সূচনা মাত্র। আগামী দিনে এমন আরও সংঘবদ্ধ আন্দোলনের বাতাবরণ তৈরি করে দিল কৃষক আন্দোলন।