ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
তাই কৃষি এবং কৃষক শ্রেণির বিশেষ যত্ন প্রাপ্য। কৃষির আধুনিকীকরণ এবং সংস্কার জরুরি। ভারত সুবিশাল দেশ। বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি, হাওয়া, দক্ষতা ও প্রয়োজন বিভিন্নরকম। সেইমতোই নানা ধরনের চাষ-আবাদ হয়। তাই একবগ্গা নীতি নিয়ে ভারতে কৃষি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া ঠিক নয়। উপযুক্ত স্থানে বিস্তারিত আলোচনাই হল শ্রেষ্ঠ পথ। গণতান্ত্রিক দেশে এর বিকল্প চিন্তা করাটাই ভুল। এই ভুলটাই করেছে মোদি সরকার। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যগগনে হঠাৎ কৃষি সংস্কারের ধুয়ো তোলা হয়। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে দিয়ে ঘোষণা করা হয়, আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের অংশ হিসেবে তিনটি কৃষি আইন আনা হচ্ছে। ২০২০ সালের ৩ জুন মন্ত্রিসভা আইন তিনটিকে অধ্যাদেশ আকারে অনুমোদন দেয়। রাষ্ট্রপতি ভবনের সিলমোহর পড়ে দু’দিন বাদে। অধ্যাদেশ থেকে পূর্ণাঙ্গ আইনে পরিণত করার উদ্দেশ্যে সে-বছর বর্ষা অধিবেশনেই তিনটি বিল আনা হয়। সেসব তড়িঘড়ি পাশও করিয়ে নেন মোদি। অধ্যাদেশ জারি এবং কৃষি বিল পেশের দিন থেকেই প্রতিবাদের শুরু। আন্দোলনকারীদের এক ও একমাত্র দাবি ছিল, এসব পত্রপাঠ প্রত্যাহার করতে হবে। কোভিড পরিস্থিতির কারণে গোড়ার দিকের প্রতিবাদটা প্রতীকীই ছিল। পার্লামেন্টারি প্যানেল দিয়ে বিল তিনটির সবদিক স্ক্রুটিনির দাবি করেছিল বিরোধীরা। অন্যদিকে, শাসক দল ও সরকার পরিস্থিতির সুযোগ নিতে মরিয়া ছিল। ভেবেছিল, আন্দোলনের জল বেশিদূর গড়াবে না। অতএব কৃষক এবং বিরোধীদের দাবিগুলি জবরদস্তি খারিজ করে দিয়ে আইন তৈরি হল। প্রথম ধাক্কাটি দিল মন্ত্রিসভার শরিক অকালি দল। তারা দ্রুত এনডিএ ত্যাগ করল। অতঃপর দেখা গেল, কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ রূপ। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ল দেশব্যাপী। হল ‘দিল্লি চলো’ অভিযান। দিল্লির উপকণ্ঠে (সিংঘু, গাজিপুর) রাজপথে পড়ে থেকে প্রতিবাদ। কনকনে শীত, গ্রীষ্মের দহনজ্বালা, প্রবল বর্ষা একে একে কাবু হল। যে-সরকার চীনা ফৌজের ভারতীয় ভূখণ্ড দখল ঠেকাতে ব্যর্থ, তারা প্রতিবাদী কৃষকদের দিল্লিতে প্রবেশ ঠেকাল যাবতীয় বল প্রয়োগের মাধ্যমে। কৃষকদের বুকের উপর দিয়ে ঘটানো হল লখিমপুর খেরির মতো বীভৎস কাণ্ড। আগে-পরে নানাভাবে প্রায় সাড়ে সাতশো কৃষক ‘শহিদ’ হলেন। তবু তাঁরা গান্ধীজির পথই আঁকড়ে থেকেছেন। হাজার প্ররোচনাতেও হিংসার আশ্রয় নেননি। তাঁরা জানতেন, অহিংসা দিয়েই হিংসা ও শাসকের ছলনাকে জয় করবেন।১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ভিতর দিয়ে তারই সূচনা হয়। জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি জানান, সরকার আইন তিনটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। বহুদিন বাদে কথা রেখেছেন নরেন্দ্র মোদি। ২৯ নভেম্বর আইন তিনটি প্রত্যাহার করে নিল সরকার। সংসদের উভয় কক্ষ মিলিয়ে এজন্য সময় নেওয়া হল মাত্র ১০ মিনিট! নিঃসন্দেহে এক রেকর্ড। এদিন আরও একটি রেকর্ড গড়েছে শাসক পক্ষ। বিগত অধিবেশনের রেশ টেনে ১২ জন বিরোধী এমপিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ঘটনা দুটিই শাসক পক্ষের অগণতান্ত্রিক চরিত্রের ফসল। আইন প্রত্যাহারেও সংসদে আলোচনা-বিতর্ক কাম্য ছিল। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) আইন প্রণয়ন, মৃত কৃষক পরিবারগুলিকে উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং আন্দোলনরত কৃষকদের মামলা থেকে মুক্তি নিয়ে আলোচনা অত্যন্ত জরুরি। মোদি সরকার এর কোনওটাই করেনি। বিরোধীদের উপেক্ষার এই ট্র্যাডিশন অত্যন্ত নিন্দনীয়। আইন বাতিলই যথেষ্ট নয়, কৃষকদের বাকি দাবিগুলিও অবিলম্বে পূরণ হওয়া প্রয়োজন। ১২ জন এমপির উপর থেকে সাসপেনশন এখনই এবং নিঃশর্তে তুলে নেওয়া হোক। সংসদই গণতন্ত্রের মন্দির। সংসদের উদ্দেশ্য ও পবিত্রতা রক্ষার মূল দায়িত্ব সরকার পক্ষের উপরেই বর্তায়।