ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
২০১৯-এর সংশোধিত বিলটি আইনজ্ঞদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল। এক বিচারপতি এই ভাষায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, বিলটি আইনে পরিণত হলে ভারত ‘অরওয়েলিয়ান স্টেট’ হয়ে উঠবে। অর্থাৎ সাধারণ নাগরিকের কাছে ভারত কোনওভাবেই একটি ‘ফ্রি অ্যান্ড ওপেন সোসাইটি’ থাকবে না। ব্যাপারটি মুক্তচিন্তার পক্ষে বিপজ্জনক এবং এক অশনিসঙ্কেত। সার্বভৌমত্বের অধিকারে বা সরকারি আদেশ বলে সরকার যে-কোনও সময় যে-কোনও ব্যক্তির এবং সরকারি সংস্থার তথ্যে উঁকি দিতে পারবে। আন্তর্জাতিক মহলও ভারতের নাগরিক সমাজকে এই বিষয়ে আগেভাগে সতর্ক করে দিয়েছে। সবচেয়ে সমস্যায় পড়বেন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা। সরকারি নিয়ন্ত্রণের রক্তচক্ষুর সামনেই তাঁরা যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদান করতে বাধ্য হবেন। গোড়ার দিকে ফোর্বস ইন্ডিয়ার এক রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় যে, নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য নাড়াচাড়ার করার ব্যাপারে এই বিল সরকারকে পূর্ণ ক্ষমতা দেবে।
অনেক টানাপোড়েনের পর অবশেষে পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন (পিডিপি) বিলের খসড়া চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে এটি পেশ হতে চলেছে। পেগাসাস ছিল একটি চোরাগোপ্তা কারবার। নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিসরে ঢুকে সরকারের তরফে অসৎ উদ্দেশ্যে গোয়েন্দাগিরির বন্দোবস্ত। তা থেকে মোদি সরকারেরও কোনও কোনও মন্ত্রীকে রেহাই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। হ্যাঁ, না—কোনও জবাব না-দিয়ে, সরকার বরাবর একটি রহস্য রেখে গিয়েছে। তবে মতলব ফাঁস হতে দেরি হয়নি। দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছে। সংসদের উভয় কক্ষে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তীব্র ভর্ৎসনা করেছে শীর্ষ আদালত। সব মিলিয়ে চরম বিপাকে পড়ে গিয়েছে মোদি সরকার। ইতিমধ্যে বিপাকে সিএএ, এনআরসি নিয়ে। সর্বোপরি, নানক জয়ন্তীতে তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন স্ট্রংম্যান নরেন্দ্র মোদি। তিনি শুধু ভাঙেননি, মচেকেছেনও! জেদাজেদির সঙ্গে কৃষি আইন তৈরি করেও তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা মেনে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং। আর এজন্য কৃষকদের কাছে করজোড়ে ক্ষমাও প্রার্থনা করেছেন। মোদি জমানায়, বিশেষ করে মোদির কাছে এই দৃশ্য অভূতপূর্ব! প্রবচন—বুদ্ধিমান ব্যক্তি দেখে শেখে, বোকারা শেখে ঠেকে। মোদি অ্যান্ড কোম্পানি সাতবছর যাবৎ দেশবাসীর মুড অনেক দেখেছেন। ঠেকেছেনও বিস্তর। তারপরেও তাঁরা পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন (পিডিপি) বিল, ২০১৯ নিয়ে নতুন করে ঝাঁপাবার তাল কষছেন। কেন? আর একটি কালা কানুন বানাবেন! উদ্দেশ্য কী? মানুষের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের পরিসরে অনুপ্রবেশ করবে সরকার। তাতে লাভ কী? এই তথ্যের ভিত্তিতে মোদি সরকার আগামী দিনের প্ল্যান বানাবে। কী সেই প্ল্যান? ওয়ান ইন্ডিয়ার আড়ালে সঙ্ঘ পরিবারের স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা, তাদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কায়েম করার পথ সুগম করবে। কৃষি আইন নিয়ে বেনজির বিপর্যয় তাদের টাটকা সঙ্গী। তার পরেও এমন একটি পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত। নরেন্দ্র মোদির পরামর্শদাতাদের মস্তিষ্কের বয়ঃপ্রাপ্তি নিয়েই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। অতীতের থেকে অধিক ঐক্যবদ্ধ বিরোধীদের হুঙ্কার থেকে আশঙ্কা হয় যে, মোদি সরকার আরও এক দফা মুখ পোড়াবার জন্যই মরিয়া।