নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ঘূর্ণিঝড় ‘জওয়াদ’ ক্রমশ দুর্বল হয়ে আগেই গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছিল। রবিবার মধ্যরাতের দিকে তা আরও শক্তিক্ষয় করে সুস্পষ্ট নিম্নচাপ বলয়ে পরিণত হয় এবং ওড়িশা উপকূল থেকে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে এগতে থাকবে। এর জেরে আজ, সোমবারও অল্পবিস্তর বৃষ্টিপাত হবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাতেই। তবে উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদে কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণও হতে পারে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতায় বৃষ্টির প্রকোপ আজ কমে গেলেও একেবারে হবে না, তা বলা যাচ্ছে না। আবহাওয়ার উন্নতি হবে মঙ্গলবার থেকে। রবিবার এমনই পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। আবহাওয়াবিদ সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানিয়েছেন, নিম্নচাপ পুরোপুরি সরে গেলেই শীত অনুভূত হবে। তবে ভালোমতো শীত পড়তে পারে ১১ ডিসেম্বর নাগাদ। ‘জওয়াদ’ দ্রুত দুর্বল হয়ে যাওয়ায় ঝড়ের কারণে বিপত্তির আশঙ্কা কেটে গিয়েছিল শনিবার বিকেলেই। কিন্তু টানা বৃষ্টি যে ভোগাবে, তাও জানিয়েছিল আবহাওয়া দপ্তর। রবিবার সকাল থেকে বৃষ্টির প্রকোপ বেড়ে যায়। সারাদিনই কখনও মুষলধারে, কখনও ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টি হয়েছে। রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় এবং পরিবেশের এরকম দুর্যোগপূর্ণ হওয়ায় রাস্তাঘাটে লোকজন অনেক কম ছিল। বড় দুর্যোগের আশঙ্কায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল প্রশাসন। জেলায় জেলায় এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফের বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তবে ঝড় না হওয়ায় প্রশাসন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা, গোসাবা, বকখালির কিছু কিছু অংশে নদীর জল বাঁধ উপচে ঢুকে যায়। যদিও তা ব্যাপকভাবে না হওয়ায় সমস্যা হয়নি। দীঘা, বকখালির মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে কড়া নজরদারি ছিল প্রশাসনের। কাউকে সমুদ্রের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। ঝড় না এলেও নবান্ন থেকে উপকূলবর্তী জেলাগুলির প্রশাসনের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ করা হয়। বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়েই এখন সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতটা, সেই চিত্র পেতে অবশ্য আরও কয়েকদিন লাগবে বলে জানিয়েছেন কৃষিদপ্তরের কর্তারা।
কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ফেরি পরিষেবা এদিনও বন্ধ ছিল। কলকাতা ও হাওড়ার লঞ্চঘাটগুলিতে কাউকে নামতে দেওয়া হয়নি। হাওড়ার শ্যামপুর, উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি, সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় ভরা কোটালের জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে ছিল সাধারণ মানুষ। অনেক জায়গাতেই শনিবার রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিয়েছেন তাঁরা। তবে বড় কোনও বিপত্তি না ঘটায় এবং ‘জওয়াদ’ অনেকটাই দুর্বল হয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন তাঁরা। ভরা শীতের মরশুমে এরকম দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া শেষ কবে ঘটেছে, তা নিয়ে জল্পনা বেড়েছে মানুষের মধ্যে।