ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
কংগ্রেস ও সিপিএম কর্মী সমর্থকদের প্রশ্ন হওয়া দরকার যে, আমাদের দলের থেকে মানুষ কেন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে? আমাদের দলের অগ্রগতির জন্য আপনারা অর্থাৎ এই নেতানেত্রীরা কী করেছেন? গত পাঁচ বছরের একটি প্ল্যান দেখান যে, আপনারা আমাদের দলকে শক্তিশালী করার জন্য একটি সফল রূপরেখা তৈরি করেছেন। আমাদের কোনও ইস্যুতে মানুষের সাড়া পাই না কেন? আমাদের মানুষ সিরিয়াসলি নিচ্ছে না কেন? প্রশ্ন করুন, আদৌ কি আপনারা কংগ্রেস ও সিপিএমের মতো দুটি ঐতিহ্যশালী দলের সর্বোচ্চ স্তরের নেতানেত্রী হওয়ার যোগ্য? কংগ্রেস ও সিপিএমের কর্মী সমর্থকদের উচিত তৃণমূলের এই রাজ্যে রাজ্যে গিয়ে নিজেদের সম্প্রসারিত করার মরিয়া চেষ্টা নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ সমালোচনা না করে নিজেদের দলের হাইকমান্ডদের এইসব প্রশ্ন করা যে, তৃণমূল তো সেদিনের দল। মাত্র ২৩ বছর বয়স। তাদের ভয়ে আমাদের কুঁকড়ে থাকতে হচ্ছে কেন? কেন প্রতিনিয়ত এই ২৩ বছরের দলটি নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ করে রাখতে সক্ষম হচ্ছে? কেন আমরা পারছি না? এভাবে প্রশ্ন করলেই দেখা যাবে, কংগ্রেস ও সিপিএমের নেতৃত্ব ভয় পাবেন। তাঁরা বুঝবেন, এবার পালে বাঘ পড়েছে। এবার আমাদের কর্মী সমর্থকরা সঠিক সমস্যার জায়গাটি চিহ্নিত করে বাস্তববাদী হয়েছে। অর্থাৎ এবার আমাদের অযোগ্যতা বেআব্রু হয়ে যাচ্ছে।
কংগ্রেস ও সিপিএম কর্মী সমর্থককুলকে তাঁদের নেতারা নিজেদের অপদার্থতা থেকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। তাঁদের দলকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে, ভোটের এই বাস্তব ফলাফলের জন্য তৃণমূল দায়ী হবে কেন? কংগ্রেস ত্রিপুরায় মুছে গিয়েছে। এর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক কী? বিজেপি এসেছে, কংগ্রেস ও সিপিএমকে গুরুত্বহীন করে দিয়েছে। এর অর্থ কী? এর অর্থ হল, কংগ্রেস ও সিপিএম নিজেদের দল রাখতে পারেনি। সমর্থক ধরে রাখতে পারেনি। ভোটব্যাঙ্ক ছিনতাই হয়ে গিয়েছে।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও সিপিএমের সবথেকে বড় অভিযোগ হল, আসলে তৃণমূল বিজেপির বন্ধু। তাই রাজ্যে রাজ্যে বিরোধী ভোটে বিভাজন ঘটাতেই তৃণমূল ময়দানে নেমেছে ওইসব রাজ্যে। যেমন গোয়া, যেমন ত্রিপুরা, যেমন মেঘালয় ইত্যাদি। এই অভিযোগটির অন্তর্নিহিত মেসেজটি কী? সেটা হল, কংগ্রেস চায় আমি খোলা মাঠে গোল করব। বিজেপির প্রতি ভোটাররা যখন বিরক্ত হবে, তখন যেন একমাত্র বিরোধী ও বিকল্প হিসেবে কংগ্রেসকেই দেখা যায়। সুতরাং, মানুষের যেন আর কোনও অপশন না থাকে। কংগ্রেস এটা কেন মনে করছে যে, যখনই বিজেপি বিরোধী তৃতীয় শক্তির আগমন ঘটবে, তখনই আমার জমি কেঁপে উঠবে? কংগ্রেসের এই কনফিডেন্স নেই কেন, আমি যে রাজ্যে বিজেপি বিরোধী শক্তি, সেখানে আমিই শেষ কথা হওয়ার মতো শক্তি ও সাংগঠনিক প্রভাব অর্জন করেছি? অন্য কোনও দল এলেও সে আমার আসন টলাতে পারবে না? সে তৃণমূল কিংবা আম আদমি পার্টি যতই আসুক না কেন? কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব আসলে লড়াই করার মানসিকতা আর প্রবল একরোখা রাজনৈতিক আগ্রাসী মনোভাবটি হারিয়ে ফেলেছে। তাই প্রতিপক্ষ দেখলেই ভয় পায়। সে যত ক্ষুদ্র প্রতিপক্ষই হোক।
কংগ্রেসের এই আতঙ্ক অত্যন্ত স্বাভাবিক। কারণ, বছরের পর বছর এটাই হয়ে আসছে সাম্প্রতিক ইতিহাসে। যে রাজ্যেই বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস ছাড়াও অন্য বিরোধী দল আছে, সেখানেই কংগ্রেস পিছনের সারিতে চলে যেতে থাকে। ক্রমে একসময় গুরুত্বহীন হয়ে যায়। উত্তরপ্রদেশে যেই সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির উত্থান ঘটল, কংগ্রেস জমি হারাতে শুরু করল। তখন কোথায় তৃণমূল? সেই হারানো জমি, হারানো ভোটব্যাঙ্ক কংগ্রেস আজও ফিরে পেল না। দলিত ভোট নিয়ে চলে গেলেন মায়াবতী। যাদব ও মুসলিম ভোট কংগ্রেসের থেকে ছিনিয়ে নিলেন মুলায়ম সিং যাদব। উচ্চবর্ণের ভোট দখল করল বিজেপি। কংগ্রেসের হাতে কী রইল?
কংগ্রেস এখন কোন কোন রাজ্যে এককভাবে শক্তিশালী? ঠিক যেখানে যেখানে কোনও তৃতীয় পক্ষ নেই। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, গোয়া, কেরল, পাঞ্জাব, গুজরাত। হয় কংগ্রেস বনাম বিজেপি। অথবা কংগ্রেস বনাম সিপিএম। কিংবা কংগ্রেস বনাম অকালি দল। অর্থাৎ দুটি দল প্রতিপক্ষ। তৃতীয় কেউ নেই। যে কোনও একটি দল ক্ষমতায় আসবে ভোট থেকে ভোটান্তরে। এই তালিকায় এতকাল ধরে ছিল দিল্লি। কিন্তু মাত্র এক বছর বয়সি একটা দল কংগ্রেসকে সরিয়ে বিজেপি বিরোধী জায়গাটি কায়েম করে নিল শুধু নয়, লাগাতার বিজেপিকে হারিয়ে সরকারও গঠন করে চলেছে। আম আদমি পার্টি। এবার সেই আম আদমি পার্টি যেই পাঞ্জাবে পা রাখছে, আবার কংগ্রেসের অন্দরে আশঙ্কার ছায়া। ইতিমধ্যেই আম আদমি পার্টি বিপুলভাবে সাফল্য পেয়েছে গত বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে এই রাজ্যে। অর্থাৎ যেখানেই তৃতীয় শক্তির উদয় হয়, সে ব্যর্থ হয় না। বরং ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয় স্থান তাকে ছেড়ে দেয় কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র। সর্বত্র বিজেপির বিরুদ্ধে আর একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক দল আছে। ওইসব রাজ্যে কংগ্রেস সর্বদাই তৃতীয় পক্ষ। এসব কার দোষে? তৃণমূলের?
তেলেঙ্গানা নামক নতুন রাষ্ট্র কে দিল? ইউপিএ সরকার। সেই প্রচার করতে পেরেছে কংগ্রেস? পারেনি। তাহলে তেলেঙ্গানায় এখন ক্রমেই তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি বনাম বিজেপির লড়াই হচ্ছে কেন? কোথায় কংগ্রেস? অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ুতে কোথায় কংগ্রেস? কেন নেই? যে দক্ষিণ ভারত ১৯৭৭ সালে গোটা উত্তর ভারতের ইন্দিরা গান্ধী বিরোধী ঝড়ের বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়ে শ্রীমতী গান্ধীকে বিপুল ভোট দিয়েছিল, সেই দাক্ষিণাত্যে কংগ্রেস কেন শক্তিশালী হতে পারছে না? কেন কর্ণাটকে দেবগৌড়ার দলের সাহায্য ছাড়া কংগ্রেসের একার পক্ষে বিজেপিকে ঠেকানো সম্ভব হয় না? তৃণমূলের দোষ? গুজরাত কেন নরেন্দ্র মোদি প্রাইভেট লিমিটেড নামক একটি জমিদারির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে গেল? কার দোষে? তৃণমূলের? উত্তর পূর্ব ভারতে কংগ্রেস কেন ক্রমেই গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে? ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস সবেমাত্র পা রাখল, আর তৎক্ষণাৎ সাফল্য পেল কেন? কোথায় কংগ্রেস?
সুতরাং, তৃণমূল কেন আমাদের পাড়ায় মাঠে খেলতে এসেছে! এই শিশুসুলভ কান্নাকাটি না করে কংগ্রেস হাইকমান্ড বরং টুইটার ছেড়ে আগ্রাসীভাবে ময়দানে নেমে বিজেপি বিরোধিতা করুক। মানুষের স্বার্থে দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছুটে ছুটে যাক। জনতা অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও সজাগ। জনতার আস্থা অর্জনকেই পাখির চোখ করুন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সারাক্ষণ অন্য দল, রেফারি, দর্শক এবং প্লেয়িং কন্ডিশনকে দোষারোপ করে কারা? যারা সর্বদাই হেরে যায়! ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ছিল ২০৬। ২০১৪ সালে ৪৪! কার দোষে? ২০০৪ সালে লোকসভায় বাংলা থেকে বামফ্রন্টের আসন সংখ্যা ছিল ৩৫। ২০১৯ সালে শূন্য! কার দোষে?