ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
উদ্বিগ্ন। তাই তারা আনতে চলেছে তথ্য সুরক্ষা
আইন। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বা
নানাবিধ অন্যান্য অ্যাপ-ওয়েবসাইট যাতে দেশের নাগরিকদের তথ্য নিয়ে অসাধু ব্যবসা না চালাতে পারে, তার জন্যই মহান উদ্যোগ।
প্রধান উদ্দেশ্য
১) হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় যা তথ্য ব্যবহার হয়, তার জন্য প্ল্যাটফর্মগুলিকে দায়বদ্ধ করা। অর্থাৎ, তোমার প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ হচ্ছে মানে এর সুফল বা কুফলের দায় তোমাকে নিতেই হবে। ফরওয়ার্ডেড মেসেজ বলে হাত তুলে নিতে পারবে না। যে ব্যক্তি বা সংগঠন মেসেজটি পোস্ট করছে, দায় নিতে হবে তাকেও। অর্থাৎ, ‘ফেক নিউজ’ বন্ধ করতে পদক্ষেপ। আশা করা যায়, এই আইন কার্যকর হলে শিলচরের কোনও হিংসার ছবি বাংলার দুবরাজপুরের বলে চালানো যাবে না। আইন যেহেতু সবার ক্ষেত্রে সমান, কেন্দ্রের শাসক দলের ছাপ্পা থাকলেও সেই ব্যক্তি, সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে। পাশাপাশি এই আইনে নথিভুক্ত না হলে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বা ওই ধরনের কোনও সংস্থা ভারতে ব্যবসা করতে পারবে না।
২) তথ্য চুরি রোখা। আপনার অনুমতি ছাড়া কোনও সংস্থাই আপনার ফোনে জমা রাখা তথ্যের নাগাল পাবে না। তেমন কিছু হলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার রাস্তা সরকারের কাছে খোলা থাকছে। বিশেষত শিশুদের তথ্য নিয়ে ভারত সরকার খুবই উদ্বিগ্ন। তাদের তথ্য নিয়ে ব্যবসা! চলতে দেওয়া যাবে না।
৩) ব্যক্তিগত তথ্য ছাড়াও এমন কিছু বিষয় আছে, যা এই আইনের আওতায় আনতে চলেছে কেন্দ্র। যেমন একটি রাজ্যের ইনকাম গ্রুপ, বা বয়স, পুরুষ-মহিলার অনুপাত, ধর্মের নিরিখে জনসংখ্যার বিভাজন... এই ধরনের তথ্য চুরি বা অপব্যবহারেও ব্যবস্থা নেওয়ার পথ খুলে রেখেছে সরকার।
৪) একটি নীতি নির্ধারক এবং নিয়ন্ত্রক পর্ষদ গঠন। তাদের হাতে বিচারের ক্ষমতাও থাকবে। বাদী-বিবাদী দুই পক্ষের সওয়াল তারা শুনবে এবং প্রয়োজন মতো সিদ্ধান্ত নেবে।
ফাঁক কোথায়?
সরকারি এজেন্সিগুলিকে এই আইনে বাঁধা যাবে না। খসড়া বিলে এমনই একটি ফাঁক রেখে দিয়েছে ভারত সরকার। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় এজেন্সি বা গোয়েন্দারা যে কোনও নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডারে ঢুকে পড়তে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের কোনওরকম অনুমতির প্রয়োজন হবে না। আপনার ফোনে কোন ধরনের লেখা স্টোর করে রাখা আছে, কার সঙ্গে আপনি দু’বছর আগে সেলফি তুলেছিলেন... এই সবই যখন ইচ্ছে হাতিয়ে নিতে পারবে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকারের কিন্তু সেই অধিকার থাকবে না! কারণ, আইনে তেমন সুযোগই যে রাখা হয়নি।
যদি আপনি এমন কোনও ঘটনায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন? সরকার বলবে, এটা আমাদের আইনসিদ্ধ অধিকার। চেন্নাইয়ের কোন ঘরে কোন মাওবাদী সমর্থক লুকিয়ে আছে, সেটা আমরা দেখব না? জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে এটা আমাদের করতেই হবে। আপনিও মাথা নিচু করে ফিরে আসবেন, কিংবা সরকারের পাতা জালে ধরা দিয়ে আপনার ভবিতব্য হবে জেলের চার দেওয়াল।
বিতর্ক এখানেই
পেগাসাস নিয়ে তোলপাড় সুপ্রিম কোর্ট থেকে সংসদ। সর্বত্র ছিল একটাই প্রশ্ন—সরকার কি ভারতের বিশিষ্ট নাগরিকদের ফোনে পেগাসাস ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল? ঘুরিয়ে নাক ধরার মতো বিবিধ উত্তর দিয়েছে কেন্দ্র। সংসদে মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রশাসন বা এজেন্সিগুলি নির্দেশ বহির্ভূত কোনও কাজই করেনি। আদালতে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী দাবি করেছেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সবকিছু
খুল্লমখুল্লা বলা যায় না। তারপরও শীর্ষ আদালত
প্রশ্ন করেছে, সাধারণ নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার কি সরকার লঙ্ঘন করেছে? পেগাসাস সামনের চৌমাথার ফোনের দোকানে আপনি
কিনতে পারবেন না। ইজরায়েলের সংস্থাটি এই সফ্টওয়্যার শুধুই সরকারকে বিক্রি করে। অর্থাৎ, কোনও না কোনও দেশের সরকার ভারতের নাগরিকদের ফোনে এটি পাঠিয়েছে (নরেন্দ্র মোদি সরকার নাই বা বললাম)! এ দেশের ক্ষেত্রে যদি নজরদারি চালানোটা আইনসিদ্ধ হয়ে যায়, তাহলে তো আর আড়াল-আবডালের প্রয়োজনই থাকবে না। সেটাই চাইছে কেন্দ্র। আইনি সিলমোহর। সরকার বিরোধী মতামত দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে সরকারের ভাড়া করা সৈন্যরা। টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাবে গারদের ওপারে। আতঙ্কের ভূত ভর করবে তামাম ভারতবাসীর কাঁধে।
দূরের লক্ষ্য
নিশানায় ২০২৪। গত তিন-চার বছর ধরেই মোক্ষম এক অস্ত্র নিয়ে ভোটের বাজারে নেমেছে বিজেপি। আইটি সেল। তারা এলাকা ভাগ করে কাজ শুরু করে। একটা পাড়া বা অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা তারা আগে বুঝে নেওয়ার চেষ্টায় থাকে। এক্ষেত্রে বছর দুয়েক আগেও এই ধরনের ‘প্রফেশনালদের’ নজর থাকত ইলেকট্রিক বিলে। যে বাড়িতে ইলেকট্রিক বিল ৫০০ টাকা আসে, তার পছন্দ বা দরকারের সঙ্গে ৫ হাজার টাকাওয়ালা বিলের মালিকের ‘টেস্ট’ মিলবে না। তাই সবার আগে ছেঁকে নেওয়া হতো আর্থ-সামাজিক কাঠামো। প্রত্যেক স্তরের জন্য থাকত আলাদা আলাদা প্রোপাগান্ডা। কারও ক্ষেত্রে একটু চড়া দাগের, কারও জন্য একটু আঁতলামি। উদ্দেশ্য একটাই, নানা ধরনের ভুয়ো খবর ছড়িয়ে বা ধর্মীয় মেরুকরণের মাধ্যমে ভোটারকে উত্তেজিত করে তোলা। তারই ফল দেখা যাবে ভোটের যন্ত্রে। এ এক বিরাট পরিকাঠামো। একটু ঝুঁকি অবশ্য থাকেই। কারণ, ভোটার যদি একবার এই ধরনের প্রচারের উপর থেকে আস্থা হারায়, কিছুতেই আর তাকে ফেরানো যাবে না। আর যদি নজরদারিটা আইনসিদ্ধ হয়? যদি দেশের সেরা গোয়েন্দারা ভোটারদের হাল হকিকত বিশ্লেষণ করে? সে ক্ষেত্রে কিন্তু ঝুঁকিটা নগণ্য। অর্থাৎ, শাসক দল আগেভাগেই জানবে, ওই এলাকার ভোটাররা কার পক্ষে। সেইমতো চলবে প্রভাবিত করা, কিংবা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলা... ‘মাসিমা, ভোটটা আপনাকে আর কষ্ট করে দিতে যেতে হবে না। ওটা আমরাই করে দেব।’
মানেটা খুব পরিষ্কার... আতঙ্ক বাড়বে... গণতন্ত্রের আকাশে দীর্ঘতর হবে একনায়কতন্ত্রের মেঘ। গুপ্তচর লেগে থাকবে আপনার-আমার পিছনে। আজ কী বাজার করলেন, জানবে শাসক। হঠাৎ দূরের কোনও আত্মীয় বিয়োগে আপনার অ্যাকাউন্টে এসে গিয়েছে কিছু টাকা। কেন এল? নজরদার রয়েছে পাহারায়। আর অস্ত্র? আপনার ফোন।
ফিলিপ কে ডিক মারা গিয়েছেন প্রায় ৪০ বছর আগে। মার্কিন সাহিত্যিক। লিখতেন সায়েন্স ফিকশন। তাঁর একটামাত্র লাইন কীভাবে যেন এই সবের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে। কাঁপুনি ধরছে বুকে... ‘একটা সময় আসবে, যখন আমার ফোনের মাধ্যমে আর আমার উপর চরবৃত্তি হবে না। বরং ফোনই আমার উপর নজরদারি চালাবে’।
শাসকের নজরদারি। রাষ্ট্রের নজরদারি।