ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
বারবার মোদি সরকার আমাদের শিখিয়ে এসেছে চীন আমাদের শত্রু, পাকিস্তান আমাদের শত্রু। নিশ্চয় এই দুই প্রতিবেশী দেশ আমাদের শত্রু। দেশের মানুষ সেটা বিশ্বাসও করেন। তাদের ভারত বিরোধী মনোভাব ও কার্যকলাপ আমাদের দেশের স্বার্থের এবং সম্মানের পক্ষে যথার্থ নয়। তাই সুযোগ পেলেই তাদের যোগ্য জবাব দেওয়া উচিত। অথচ সেই শত্রুদেশ চীনের বিমানবন্দরের ছবি চুরি করে নিজেদের বলে চালাতে এতটুকু লজ্জা হল না সরকারের। নয়ডায় দেশের বৃহত্তম বিমানবন্দর তৈরির শিল্যান্যাস করেছেন মোদিজি কিছুদিন আগে। উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে বিজেপির বিরাট তৎপরতা শুরু হয়েছে। ভোটে হারের ভয়ে বাজারে স্বপ্ন বিক্রি করতে নেমেছেন মোদি-যোগী। কিন্তু ফেক স্বপ্ন বিক্রি করে ভোট কুড়নোর জাল পেতে ধরাও পড়ে গিয়েছেন। এটা কিন্তু প্রথমবার নয়! এর আগেও এমন চৌর্যবৃত্তির নমুনা আমরা দেখেছি। মোদিজি-যোগীজি, আপনারা লজ্জা নাও পেতে পারেন, কিন্তু দেশের এই অবমাননায় আমরা মরমে মরে যাচ্ছি। দেশকে এই অসম্মানজনক জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপনাদের উচিত জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া। সেই সঙ্গে আপনার অনুগত সেনানীদেরও বলুন ক্ষমা চাইতে। আপনি এতবড় একটা উদ্যোগ নিয়েছেন। সে তো অসাধারণ একটা কাজ হতে পারে। দেশের বৃহত্তম বিমানবন্দর বানাবেন নয়ডায়। উদ্বোধনও করে ফেললেন। অথচ তার কোনও মডেল আপনার হাতে নেই। চুপি চুপি অন্য বিমানবন্দরের ছবি চুরি করে সরকার নিজের ঢাক নিজেই বাজাতে শুরু করল এবং অচিরেই ফেঁসে গেল সেই কালীরামের জালি ঢাক। তাহলে উদ্বোধনের এই ধাপ্পা কি শুধু ভোটের জন্য? নয়ডা থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যেই কিন্তু দিল্লির অতবড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তারপরেও নয়ডায় এত বড় মাপের বিমানবন্দর কি সত্যিই হবে? নাকিও তাও ওই বেজিংয়ের চুরি করা ছবির মতোই ধাপ্পা? ভোটের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি? উত্তরপ্রদেশ যে এই মুহূর্তে আপনার কাছে একটা বিরাট কাঁটা, এটা তো বুঝতে এখন আর অসুবিধা হয় না। উত্তরপ্রদেশে আপনার জনসমর্থন এখন তেমন আর নেই। যোগীজির পাঁচ বছরের শাসনকালের একরাশ ব্যর্থতার নজির মানুষের মুখে মুখে। নির্বাচনী প্রচারে তা বারবার বিব্রত করবে বিজেপিকে। রামমন্দিরের ভক্তি উজাড় করেও ভোট টানা যাবে না। সেই রূঢ় সত্যকেই মোদিজিরা আড়াল করতে চাইছেন নানা ধরনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে। তারই অন্যতম নজির কলকাতার উড়ালপুল, আমেরিকার কারখানা আর বেজিংয়ের বিমানবন্দর এনে নিজেদের উন্নয়ন বলে চালানোর ধাপ্পাবাজি। একটা মিথ্যা ছবিকে সত্য বলে চালাতে কেন্দ্রীয় সরকার, কেন্দ্রের মন্ত্রী সহ চ্যালা চামুণ্ডারা নেমে পড়েছেন প্রচারে। বাস্তববোধ বিসর্জন দিয়ে তাঁরা দলের আইটি সেলের তৈরি করা বিজ্ঞাপন একের পর এক টুইট আর রিটুইট করে চলেছেন। একেবারে গোয়েবেলসের ধাঁচে মিথ্যা প্রচার। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চীনের নিন্দা বর্ষিত হতে শুরু করল আর বিজেপির প্রচারের বেলুন গেল চুপসে। এসব দেখে মানুষ ক্ষুব্ধ, অপমানিত। একেই তো মোদিজির গা-জোয়ারি কৃষিবিলের একগুঁয়েমিতে পচা শামুকে পা কেটেছে বিজেপির। তার উপর এই মিথ্যাচারে দেশকে সম্মান হারাতে হল। অথচ মন কী বাতে এত ‘বাত’ বলা মোদিজি নীরব।
মোদিজি, আপনি বা আপনার সাঙ্গপাঙ্গরা ভাবতেই পারেননি যে আপনাদের এই চুরি করা বিমানবন্দরের ছবি নিয়ে চীন সরকার মাথা ঘামাবে বা পুকুরচুরিটা ধরা পড়ে যাবে! কী লজ্জার ব্যাপার, চীন সরকারি পর্যায়ে ভারত সরকারের নামে যা তা বলেছে। এই চুরি নিয়ে তাদের দেশে হাসির রোল উঠেছে। ফেসবুকে, টুইটে ভারতকে নিয়ে রসিকতা শুরু হয়েছে। কেন, আপনার দলের প্রোপাগান্ডার জন্য আপনি ভারতকে অসম্মানিত করবেন? কেন আমরা এভাবে দেশের অপমান সহ্য করব? বিজেপির অপমানে একজন ভারতবাসী হিসেবে আমাদের কিছু এসে যায় না। আদতে কোনও রাজনৈতিক দলের অসম্মানেই দেশের মানুষ হিসেবে আমাদের কিছু এসে যায় না। সেটা একটি দলের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু কেন্দ্রের সরকার, কেন্দ্রের মন্ত্রী, বিজেপির মন্ত্রী যখন এমন কাজ করেন, যাতে দেশের সম্মান ও গৌরব ভূলুণ্ঠিত হয়, তখন তা জাতীয় লজ্জা হিসেবেই দেখা দেয়। অথচ ধরা পড়ার পর ক্ষমা চাওয়ার মতো স্পর্ধা দেখা যায়নি। কেউ কেউ টুইট চুপি চুপি মুছে সরে পড়েছেন। আবার কেউ এখনও সেই ছবিকেই রেখে দিয়েছেন।
তবে আমরা মোদিজির ৫৬ ইঞ্চি ছাতির কেরামতি দেখে কার্যত অবাক হয়ে গিয়েছি। আমরা লাদাখ, অরুণাচলে চীনকে আটকাতে পারছি না। চীন হু হু করে ঢুকে পড়ছে। সরকার চোখ বুজে বসে শক্তিশালী চীনের দিকে তাকিয়ে বার বার বলে যাচ্ছে, আর এক পা এগও, দেখে নেব। চীন এগচ্ছে, কিন্তু সরকারের আর দেখে নেওয়ার ক্ষমতা দেখা যাচ্ছে না। ‘এবার বোধহয় বদলা নিতেই চীনের এয়ারপোর্টের নৈতিক দখল নিল মোদি সরকার।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন রসিকতা ছড়াচ্ছে। অর্থাৎ এই সরকার এখন ফুল হাসির খোরাক হয়ে উঠেছে। উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে বারবার অন্য জায়গার ছবি এনে বিজেপি সরকারকে প্রমাণ করতে হচ্ছে কত উন্নয়ন হয়েছে। আর তার অর্থ দাঁড়ায় যে, মোদিজি বা বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির উন্নয়ন আসলে ভাঁড়ে মা ভবানী। সবটাই ফেকু। দেশের সম্মানকে বাজি রেখে মিথ্যে তাস একের পর এক খেলে চলেছে মোদি সরকার ও তার অনুগত বিভিন্ন রাজ্য সরকার। আবার এরাই বারবার চা খাওয়ার মতো দেশাত্মবোধ জাহির করে। চীনের এয়ারপোর্ট চুরির ঘটনায় কি প্রমাণিত হয় না যে, বিজেপির দেশপ্রেমের আবেগ আসলে টুইট এবং হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক সর্বস্ব! প্রকৃত দেশপ্রেমী যাঁরা, তাঁরা কখনও দেশকে অপমান করার কথা ভাবতেই পারেন না।
সবটাই আসলে এই সরকারের এক জুমলাবাজি। কৃষি আইন নিয়ে সেই জুমলাকে ফালা ফালা করে দিয়েছেন দেশের কৃষকরা। তাঁদের আন্দোলন একটানে ছিঁড়ে ফেলেছে মোদিজির যাবতীয় কৃতিত্ব জাহিরের মুখোশ। অসহায় মোদিজিকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হয়েছে। কিন্তু যাঁরা মোদিজিকে জানেন তাঁরা বলছেন, ভোটের স্বার্থে মোদিজিকে কয়েক কদম পিছিয়ে আসতে হয়েছে বটে তবে ভোটের পালা সাঙ্গ হলে এবং তাঁর সুযোগ এলে তিনি এর প্রতিটি আধলা ফিরিয়ে দেবেন। নতুন ভাবে আবার তিনি কৃষি আইন আনবেন। আপাতত তিনি ২০২৪ এর লক্ষ্যে যে কোনওভাবে উত্তরপ্রদেশের ভোটটা নিশ্চিত করতে চাইছেন। উত্তরপ্রদেশ মুখ ফিরিয়ে নিলে ২০২৪ দূর অস্ত হয়ে যাবে। তাই সবকিছুই তিনি চুপ করে এখন মেনে নিচ্ছেন। কিন্তু সবকিছু যদি তিনি মেনে নেন, তবে মোদিজির শিল্পপতি বন্ধুরা কি তাঁকে ছেড়ে কথা বলবেন? তাঁরাই তো মোদিজির উপদেষ্টা মণ্ডলী। মোদিজিও জানেন, ‘বন্ধুদের’ উপদেশ পালন করতে না পারলে অচিরেই তাঁরা শত্রু হয়ে উঠবেন। তেমন হলে তাঁকে ছুড়ে ফেলে দিতে তাঁদের হাত একটুও কাঁপবে না। সুতরাং বন্ধুকৃত্য করতে আবার তিনি কৃষি আইন আনবেন। শুধু সময়ের অপেক্ষা।