ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
ভারতীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের এই ভয়ানক সীমাবদ্ধতার দিকটি বিজেপি মনে রেখেছে বলে মনে হয় না। এই কঠিন সত্যটি স্মরণে থাকলে বিপ্লব দেব সরকার বিরোধীদের প্রতি শ্রদ্ধার নীতি ত্যাগ করতে পারত না। ভারতই বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র। সংবিধান বহুদলীয় সংসদীয় ব্যবস্থা অনুমোদন করেছে, এই গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য। সংবিধান যে আদর্শ ভারতবাসীর সামনে তুলে ধরেছে তার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল—গণতন্ত্রের উন্নয়ন; আজকের ব্যবস্থা থেকে পরবর্তী একটি উচ্চতায় উত্তরণ। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মুক্ত মনে রাজনীতির চর্চা, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অবাধ বিস্তারই হল গণতান্ত্রিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। মনে রাখতে হবে, নরেন্দ্র মোদি থেকে বিপ্লব দেব অনেকেই ক্ষমতাসীন হয়েছেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার এই আশীর্বাদ নিয়েই। বিরোধী রাজনীতির পরিসর নিষিদ্ধ হয়ে গেলে তাঁরা এই জায়গায় কোনও দিন পৌঁছতে পারতেন না। তবে, গণতন্ত্রের উপর আঘাত এই দেশ অতীতেও বার বার দেখেছে। যেমন ইন্দিরা শাহি। ইন্দিরা গান্ধীর মতো লৌহমানবীকেও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে একবার জরুরি অবস্থার মতো অত্যন্ত অন্যায় এক অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হয়েছিল। শ্রীমতী গান্ধীকেও সংবিধান, আদালত, গণতন্ত্র, সর্বোপরি ভারতবাসী রেয়াত করেনি। ক্ষমতার উচ্চাসন থেকে তাঁকেও টেনে এনে শক্ত মাটিতে আছাড় মেরেছিল। পশ্চিমবঙ্গেও জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সাড়ে তিন দশকের হার্মাদি শাসন কায়েম হয়েছিল। বাংলার মানুষকে মুক্তি দেওয়ার পণ নিয়ে সুদীর্ঘ লড়াই করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএমের পুলিস-প্রশাসন তাঁর উপর অকথ্য অত্যাচার করেও ক্ষান্ত হয়নি, মন্ত্রীরা কথায় কথায় তাঁকে তাচ্ছিল্যও করতেন। এক মন্ত্রী তো চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন, ‘মমতা মুখ্যমন্ত্রী হলে আমার টাকে চুল গজাবে!’ পরবর্তী অধ্যায়টাই বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে চমকপ্রদ। মমতার তৃতীয় দফার রাজ্যপাটের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং। মাত্র ক’মাস আগের কথা। বিজেপির গোটা পার্টি এবং সরকারও সঙ্গত করেছিল একসুরে। সিবিআই, ইডি, আয়কর বিভাগ, এমনকী নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও শাসকের তাঁবেদারি করার অভিযোগ ছিল। কিন্তু বাইশ মণ তেল পুড়িয়েও রাধাকে নাচানো যায়নি শেষমেশ। মমতার কাছে গোহারা হয়েই বাংলা থেকে পাততাড়ি গুটিয়েছিল গোটা গেরুয়া শিবির।
বাংলার জননেত্রীকে সবরকমে চেনার পরেও বিপ্লব দেবের প্রশাসন তৃণমূল কংগ্রেসের উপর দমনপীড়ন নীতি অব্যাহত রেখেছে। গত কয়েক মাসে সাধারণ তৃণমূল কর্মী থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুস্মিতা দেবের উপরেও নানাভাবে আক্রমণের চেষ্টা করেছে ত্রিপুরা বিজেপি। পুরভোটের প্রচারের শেষলগ্নে এক তৃণমূল প্রার্থীকে গুলি করারও অপচেষ্টা হয়েছে! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আশ্বস্ত করেছেন। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি রাখার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেও বিপ্লব দেবের চ্যালারা এতখানি হিংসাশ্রয়ী হতে পেরেছে! ব্যাপারটা অবাকই করছে রাজনৈতিক মহলকে। দেরিতে হলেও ত্রিপুরা সরকারের হুঁশ ফেরাই কাম্য। আজকের ভোটগ্রহণ পর্ব শান্তিপূর্ণ রাখাই বিপ্লব দেবের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে হারলে তেইশের ফাইনাল ম্যাচে বিজেপিকে তার অপরিমেয় মূল্য চোকাতে হবে। নিশ্চিত করেই ধাক্কাটি পৌঁছে যাবে চব্বিশের লোকসভার ভোটে।