ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
এনআরসির ঘোষিত লক্ষ্য হল—দেশের প্রকৃত নাগরিকদের পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারীদের সরকারিভাবে চিহ্নিত করা। অতঃপর ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ ভারতছাড়া করা হবে (তবে, ‘প্রকৃত নাগরিকদের’ কী লাভ বা কী দশা হবে কেউ জানে না)। বিজেপি অসমে এনআরসি তাস খেলেছিল গত লোকসভা এবং পরপর দুটি বিধানসভা নির্বাচনে অসমিয়া হিন্দু ভোট কনসোলিডেট করার উদ্দেশ্যে। তাতে গেরুয়া শিবির অনেকটাই সফল হয়েছে। অসমের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে বিজেপি কৌশলটি পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে প্রয়োগ করতে মরিয়া ওঠে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের রাজনীতির কাছে পর্যুদস্ত হতে হবে জেনে গিয়ে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এনআরসি এবং সিএএ ইস্যু চাগিয়ে তোলে। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, ব্যাপকভাবে হিন্দু ভোট কাছে টানা। অমিত শাহ থেকে দিলীপ ঘোষ পর্যন্ত নানা স্তরের বিজেপি নেতার মুখে হুঙ্কার শোনা গিয়েছিল, বাংলায় এনআরসি হবেই। সমস্ত ‘অনুপ্রবেশকারীকে’ বাংলা থেকে, ভারত থেকে বের করে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে দাবি করা হয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) কার্যকর করে মূলত বাংলাদেশে নির্যাতনের শিকার হিন্দুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কেউ রুখতে পারবে না। এই ভয়ানক উদ্যোগের বিরোধীদের বিজেপির ছোটবড় নেতারা ‘দেশ-বিরোধী’ নাম দিতেও কুণ্ঠিত হননি।
বিধানসভা ভোটের পর সাতমাস পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাকি ভারতে না চালু হয়েছে এনআরসি, বাংলায় না কার্যকর হয়েছে সিএএ। অনেকদিন আগে আইন পাশ হয়ে গেলেও রুলস তৈরির ব্যর্থতার কারণে মোদি সরকার সিএএ কার্যকর করতে পারেনি। সব মিলিয়ে বিজেপির লম্বা-চওড়া দাবিগুলি দাবির স্তরেই রয়ে গিয়েছে। এই মোদি সরকারেরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক প্রায় চারমাস আগে (১০ আগস্ট, ২০২১) সংসদে ইনিয়ে-বিনিয়ে জানিয়ে দেয়, এনআরসি চালু করা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বস্তুত এনআরসি নিয়ে সরকারিভাবে পিছু হটার সেই শুরু। অমিত শাহের মন্ত্রক সেইকথা সংসদকে আরও একবার জানাল ৩০ নভেম্বর, ২০২১। মঙ্গলবার সরকার পরিষ্কার করে দিয়েছে, দেশজুড়ে এনআরসি হচ্ছে না। সিএএ আগেই বিশ বাঁও জলে। ২৯ নভেম্বর প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে জনবিরোধী তিনটি কৃষি আইন। অথচ, প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারকে বারবার সতর্ক করেছে দেশবাসী। বিরোধীদের মাধ্যমে কিছু সঙ্গত প্রশ্ন রেখেছে। তারপরেও সরকার কর্ণপাত করেনি। দেশব্যাপী তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন হয়েছে। তাতেও দমেনি সরকার। টনক নড়েছে অতি সম্প্রতি—একের পর এক নির্বাচনে রামধাক্কা খেয়েই। আগামী দু’বছরে অনেকগুলি রাজ্য বিধানসভা ভোটের পরই ২০২৪-এ লোকসভার ভোট। ‘ফাইনাল ম্যাচে’ নামার আগে জল মেপে মোদি-শাহদের বুক যে কেঁপে উঠেছে তাতে কোনও সংশয় নেই। এতে কিছুমাত্র শিক্ষা যদি হয়ে থাকে, সরকার ফালতু কাজ ছেড়ে শেষবেলায় অন্তত উন্নয়নে মনোনিবেশ করুক। মানুষ মারার সরকার চেষ্টা করুক মানবিক হয়ে ওঠার জন্য। দেশবাসী দেখুক, রত্নাকর দস্যুরা এ-যুগেও বাল্মীকি হয়ে উঠতে পারে। এ নিছক পুরাণের কাহিনি নয়।