ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
মোদি বাহিনী ভালোই জানে, গোটা দেশেই আর ২০১৯-এর পরিস্থিতি নেই। মোদির জনপ্রিয়তার গ্রাফও নিম্নমুখী। করোনা মোকাবিলা থেকে মূল্যবৃদ্ধি, পেগাসাসের মতো একাধিক ইস্যুতে দেশবাসীর মনে ক্ষোভ ছড়িয়েছে দাবানলের মতো। এর সঙ্গে উত্তরপ্রদেশে যুক্ত হয়েছে যোগীর অপশাসন। তাই উত্তরপ্রদেশ এবার গেরুয়া শিবিরের কাছে কঠিনতম চ্যালেঞ্জ। তারা জানে, শুধু অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণ-সহ বিভিন্ন মন্দিরের পরিকাঠামো বদলে দিলে ভোটারদের মন পাওয়া যাবে না। তাই কয়েকমাস পরবর্তী ভোটে জিততে উদ্বোধন আর শিলান্যাসের জাল বিছিয়েছে বিজেপি। মাত্র কয়েকদিন আগে ৯টি জেলাকে যুক্ত করে ৩৮৫ কিলোমিটার পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ের শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী। খরচ সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। উদ্বোধন শিলান্যাসের জন্য কল্পতরু প্রধানমন্ত্রী! পরিস্থিতি গরম বুঝতে পেরে পালে হাওয়া টানতে শুক্রবার থেকে টানা তিনদিন উত্তরপ্রদেশে তিনি থাকবেন প্রায় নজিরবিহীনভাবে। তাঁর ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজ্যজুড়ে গ্রামীণ সড়ক তৈরি, হাইওয়ে, বিদ্যুৎ প্রকল্প, বিমানবন্দর নির্মাণ, সেতু এবং অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করে দেওয়া। শুক্রবারই ঝাঁসিতে ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর প্রকল্পের শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী। এই পর্বে উদ্বোধন হল সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের সোলার বিদ্যুৎ প্রকল্প। শুধু উদ্বোধন শিলান্যাস নয়, যোগীর অপশাসন থেকে চোখ ঘোরাতে মুড়ি-মুড়কির মতো বিলানো হচ্ছে উপহার। কার্যত সেখানে ভোট কেনার খেলায় মেতেছেন মোদি-শাহরা। প্রশ্ন হল, এসব করেও কি শেষরক্ষা হবে?
তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বাংলা এবং উত্তরপ্রদেশ—এই দুই রাজ্যে ভোটের আগে তাঁর ভূমিকা প্রমাণ করছে তিনি একচক্ষু। বাংলার ক্ষেত্রে তিনি ও তাঁর দলের নেতারা শুধু ফাঁপা প্রতিশ্রুতি আর দল ভাঙানোর খেলায় মেতে রাজনৈতিক আক্রমণই শানিয়ে গিয়েছেন। বৈষম্য বঞ্চনার নজির গড়েছে মোদি সরকার। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে তাঁরাই মুক্তহস্ত! কিন্তু এত করেও যোগীরাজ্যের কোনও কুকীর্তি আড়াল করা যাচ্ছে না। তাই সেখানে জেতার জন্য শুধু হিন্দুত্বের রাজনীতির উপর মোদি বাহিনী ভরসা রাখতে পারছে না। পিছড়েবর্গের ভোট টানতে এবার তাঁদের দলিত সাজার ভেকও ধরতে হচ্ছে! আশ্চর্যজনকভাবে নিজেদের নামের পাশে ‘জাঠভ’-এর মতো জাতি পরিচয়ের তকমা জুড়ে ভোট ভিক্ষা করতে হচ্ছে। কারণ, বিজেপি নেতারা বেশ বুঝে গিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশ হাতছাড়া হয়ে যাওয়াটা বিজেপির মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়ারই শামিল। যোগীর অপশাসনের সৌজন্যে তা ঘটলে অবাক হওয়ার নয়। তেমনটা হলে সারা দেশেই বিজেপির পক্ষে মাথা তুলে দাঁড়ানোটাই মুশকিল হয়ে পড়বে। এমনিতেই এখন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি-সহ নানা কারণে খুব সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে নেই বিজেপি। কৃষক আন্দোলনের জেরে দেশে এবং বহির্ভারতেও সরকারের মুখ পুড়েছে। এই ইস্যুতে কেন্দ্র যে বেজায় বেকায়দায় পড়েছে তার প্রমাণ, নাকখত দিয়ে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার। ভোটের জন্য এখন কী-ই না করছে বিজেপি! বলা ভালো, উত্তরপ্রদেশে হাওয়া উল্টো দিকে বইছে বুঝতে পেরেই গেরুয়া শিবির এবার মরিয়া হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রের প্রতি আম জনতার নেতিবাচক মনোভাবের অভিমুখ ঘোরাতে তাই মোদিই নিজের ঘাড়ে দায়িত্ব নিয়ে ভোটপাখি হয়েছেন। কিন্তু মোদি ম্যাজিক অস্তমিত। তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতিতেও এখন আর মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। বাংলার ভোটের ফলই তার প্রমাণ। তাই কি এবার মরিয়া হয়ে উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে মোদি হলেন কল্পতরু? সেখানে জয়-পরাজয়ের উপরই যে নির্ভর করছে ২০২৪ লোকসভা ভোটের ভাগ্য।