ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
কিন্তু ভারতের মতো সুবৃহৎ রাষ্ট্রে জিএসটি চালু করার আগে কয়েকটি সতর্কতা অবলম্বন আবশ্যক ছিল। তার জন্য জরুরি ছিল উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা। সমালোচকদের বক্তব্য, এই ক্ষেত্রে বিরাট ঘাটতি রেখেই মোদি সরকার জিএসটি চালু করেছিল। পরিকাঠামো
গড়ার জন্য উপযুক্ত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া দরকার ছিল। প্রয়োজন ছিল বিরোধীদের পরামর্শ গ্রহণ এবং সংসদে আন্তরিক আলোচনা।
তার জন্য অবশ্যই কিছু সময় ব্যয় হতো। কিন্তু মোদি সরকার এই প্রয়োজনীয় দিকগুলি পরিহার করেই ২০১৭ সালের ১ জুলাই তড়িঘড়ি জিএসটি চালু করে দেয়। শিল্প-বাণিজ্য মহলের মস্ত ক্ষোভের দিক হল—জিএসটি ব্যবস্থায় এমএসএমই ক্ষেত্রে করের বোঝা তুলনামূলকভাবে বেড়ে গিয়েছে। যে-সব শিল্প-বাণিজ্য সংস্থার বার্ষিক ব্যবসার
(অ্যানুয়াল টার্নওভার) পরিমাণ দেড় কোটি টাকার ঊর্ধ্বে, অতীতে শুধুমাত্র সেগুলিকেই এক্সাইজ ট্যাক্স দিতে হতো। নয়া ব্যবস্থায় বছরে ব্যবসার সাইজ ২০ লক্ষ টাকার বেশি হলেই জিএসটি দিতে হয়। সংস্থাগুলির সফটওয়্যার সংক্রান্ত খরচ বেড়ে গিয়েছে। এই খরচ ছোটখাট সংস্থাগুলির সাধ্যাতীত। ভারতের বিভিন্ন পণ্যে অত্যন্ত বেশি হারে জিএসটি আদায় করা হয়। এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে ফ্ল্যাট/বাড়ি বহুকিছুর দাম একলাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ব্যাপারটা জিএসটির প্রতিশ্রুতির বিপরীত। এই ঘটনায় পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা বৃদ্ধির পরিবর্তে হ্রাসের আশঙ্কা রয়ে যায়। শিল্প-বাণিজ্যের সঙ্গে কর্মসঙ্কোচনও অনিবার্য হয়ে ওঠে।
সংস্কার এমন একটি বিষয়, যার গৌরচন্দ্রিকা আছে কিন্তু উপসংহার নেই। সংস্কার হল নদীর স্রোতের মতো, একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই কথা মাথায় রেখে, প্রতি পর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে জিএসটির সংশোধন পরিমার্জন চালিয়ে যেতে হবে। আশার কথা এই যে, দেরিতে হলেও নির্মলা সীতারামনের বোধোদয় ঘটেছে। বিভিন্ন পণ্যের উপর জিএসটির হার কমাবার চিন্তাভাবনা করছে তাঁর মন্ত্রক। জিএসটি আদায়ের স্তরেও বদল আনা হতে পারে। এই বিষয়ে আগামীকাল, শনিবার মন্ত্রিগোষ্ঠীর উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হতে চলেছে। জিএসটির এই পর্বের সংশোধন/সংস্কারের অভিমুখ হয়ে উঠুক—চাহিদা, শিল্প-বাণিজ্য এবং কর্মসংস্থানের শ্রীবৃদ্ধি। করব্যবস্থা মানুষকে নিয়েই। করদাতারাই হলেন দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক। তাঁদের দেয় অর্থেই রাজকোষ ভরে। রাজকোষের স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করেই বার্ষিক বাজেট এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা রচনা করা হয়। নাগরিকরা সাধারণভাবে সৎ ও দেশদরদি। তাই কর আদায় ব্যবস্থাকে কখনওই ‘ট্যাক্স টেররিজম’-এর স্তরে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। কর প্রদানের সুখ নষ্ট হওয়ার দায় অমানবিক, অদক্ষ রাষ্ট্রের উপরেই বর্তায়।