উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশের এই যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি তার জন্য ব্যাঙ্কিংব্যবস্থার অপ্রতুলতাকেই দায়ী করা চলে। পশ্চিমবঙ্গসহ সারা ভারতের প্রায় অর্ধেক গ্রামে বিশ্বস্ত ব্যাঙ্ক নেই। সেইসব এলাকার বাসিন্দাদের অনেকে সঞ্চয়ের জন্য বস্তুত বাধ্য হয়েছেন চিটফান্ডকেই বেছে নিতে, ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও তাঁদের নিরস্ত করা যায়নি। গত শতকের ষাটের দশকের শেষাবধি ভারতে মূলত বেসরকারি ব্যাঙ্কব্যবস্থা চালু ছিল। মাঝে মধ্যে ব্যাঙ্ক ‘ফেল’ পড়ার ঘটনায় অর্থনীতি টালমাটাল হয়ে উঠলে ১৯৬৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অনেকগুলি ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ করেন। তার ফলে ব্যাঙ্কিংব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসে দ্রুত। শুধু সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরানোই বিশ্বস্ত ব্যাঙ্কের একমাত্র কীর্তি নয়, অপরিমেয় কালো টাকার উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখতেও ব্যাঙ্কের বিকল্প ব্যাঙ্ক। এই যুক্তিতে দেশের প্রতিটি আর্থিক লেনদেন শুধুমাত্র ব্যাঙ্কের মাধ্যমে করার লক্ষ্য নিয়ে এগচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার ভিতর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের উপর। এই তালিকায় বাধ্যতামূলকভাবে রাখা হয়েছে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের শ্রমিক থেকে নানা ধরনের সামাজিক প্রকল্পের সরকারি ভাতাপ্রাপকদেরও। এজন্য অতি দরিদ্রদের ‘জনধন যোজনা’য় বিনা খরচে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার এবং তা চালু রাখার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সব ধরনের লেনদেন বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে হতে থাকলে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ যে দ্রুত বাড়বে তাতে সংশয় নেই। কালো টাকাতেও রাশ টানা সম্ভব হবে অনেকটাই।
তার জন্য গ্রাহকরা একটাই শর্ত দাবি করেন—ব্যাঙ্কের কাজকর্মের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা। টাকা গচ্ছিত রেখে কিংবা ঋণ নিয়ে মানুষ বিপদ বাড়াতে চায় না। কিন্তু একাধিক ব্যাঙ্ক যে তাদের প্রতিশ্রুতি এবং মানুষের স্বাভাবিক প্রত্যাশাপূরণে অনেকাংশেই ব্যর্থ হচ্ছে তার প্রমাণ আমরা মাঝেমধ্যেই পেয়ে থাকি। সেটাই এবার মান্য সরকারি তথ্যের আকারে প্রকাশিত হয়েছে: গত এগারো বছরে ভারতে ৫০ হাজারের বেশি ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনার হদিশ মিলেছে। তথ্যের অধিকার আইনে একটি আবেদনের জবাবে বুধবার খোদ আরবিআই এই তথ্য জানিয়েছে। জালিয়াতির মোট পরিমাণ ২ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকা। আরবিআই জানিয়েছে, জালিয়াতি/প্রতারণার ঘটনায় নাম জড়িয়েছে পিএনবি, আইসিআইসিআই, এসবিআই, এইচডিএফসি, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা, অ্যাক্সিস, আইডিবিআই, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, কানাড়া, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, কোটাক মহিন্দ্রা প্রভৃতি ব্যাঙ্কের। সবচেয়ে বেশি টাকার জালিয়াতি হয়েছে পিএনবিতে—২৮,৭০০ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা! আর জালিয়াতির ঘটনার সংখ্যার বিচারে শীর্ষে আইসিআইসিআই—৬,৭৯৩টি। এসবিআইতে জালিয়াতির পরিমাণ পিএনবি-র পরেই—২৩,৭৩৪ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা। সোজা কথায়, সরকারি বেসরকারি কোনও উল্লেখযোগ্য ব্যাঙ্কই প্রতারকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি, মেহুল চোকসিদের মতো কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিই ব্যাঙ্ক প্রতারণায় নাম কিনেছেন। রাঘব বোয়াল গোছের প্রতারকদের সরকার এখনও অবধি কিছুই করতে পারেনি। হঠাৎ হঠাৎ হম্বিতম্বিই সার। এর নেপথ্যে যে রকমারি রাজনৈতিক কুনাট্য রয়েছে, তা অতি সাধারণ মানুষটিও বোঝেন। এই ধ্যাষ্টামি চিরতরে বন্ধ হওয়া জরুরি। এর জন্য চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং উপযুক্ত সরকারি তৎপরতা। প্রয়োজনে অবিলম্বে কঠোরতর আইন প্রণয়ন করা হোক। ব্যাঙ্ক জালিয়াতি/প্রতারণায় লাগাম টানতে সরকার ব্যর্থ হলে মানুষ ফের ব্যাঙ্ক-বিমুখ হবেন। তার ভয়াবহ পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে দেশের অর্থনীতিকে। বিদেশেও মুখ পুড়বে ভারতের।