উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
ভোটের ফলাফল বেরনো ইস্তক নানা জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের খবর নতুন নয়। সেই ধারা এখনও অব্যাহত। রবিবার খেজুরিতেও যা ঘটে গেল, তা সেই নন্দীগ্রাম আন্দোলনকেই ফের একবার মনে করিয়ে দিয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল এলাকায় ঢুকতে গেলে তাঁকে শুধু বাধা দেওয়াই নয়, নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের কায়দায় রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে তাঁর পথ আটকানো হয়। ভাঙচুর চালানো হয় পুলিসের গাড়িতেও। ইটের ঘায়ে মাথা ফেটে যায় এক সিভিক ভলান্টিয়ারেরও। পরিস্থিতি সামলাতে নামাতে হয় কমব্যাট ফোর্স।
বিজয় মিছিল থেকে পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্যের বাড়িতে ঢুকে মারধর, ভাঙচুর, লুটপাট, এমনকী শ্লীলতাহানির মতো ঘটনাও ঘটেছে হুগলির হরিপালে। গুরুতর জখম এক মহিলাকে ভর্তি করতে হয়েছে গ্রামীণ হাসপাতালে।
বারাকপুর অঞ্চলের কথা তো আর বলারই অপেক্ষা রাখে না। গোটা এলাকা কার্যত বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে আছে। অহরহ বিক্ষোভ, জয় শ্রীরাম ধ্বনি, বোমা-গুলিতে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে গোটা এলাকা। এর শেষ কোথায়, কেউ জানে না।
লোকসভা ভোটে মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে বিজেপি’কে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে কেন্দ্রের ক্ষমতায় বসিয়েছে। রাজ্যেও বিজেপি’র সাংসদ সংখ্যা একলাফে দুই থেকে ১৮ তে পৌঁছে গিয়েছে। সাফল্য অভাবনীয়, এতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু রাজনৈতিক লড়াই তার নিজের সীমারেখার মধ্যেই আবদ্ধ থাকবে না কেন? কেন তা মানুষে মানুষে বিবাদ বাধিয়ে সংঘর্ষের চেহারা নেবে, কেন এর বলি হতে হবে নিরীহ সাধারণ মানুষ, এমনকী ওই দু’মাসের সন্তানকেও।
সিপিএমের ৩৪ বছরের রাজত্বে গ্রামে গ্রামে ক্যাডারবাহিনীর অত্যাচার, মারধর, মানুষকে ঘরছাড়া করা থেকে শুরু করে খুনখারাবি, কিছুই বাদ ছিল না। সেই সময় সংবাদ মাধ্যম, বিশেষ করে নিউজ চ্যানেল এবং সোশ্যাল মিডিয়ার এত প্রচার ছিল না। তারপরেও যে খবর প্রকাশ্যে আসত, তার অনেকগুলিই শিউরে ওঠার মতো। মানুষ পরিবর্তন চেয়ে যাদের রাজ্যে ক্ষমতায় বসাল, সেই তৃণমূলও এই অপবাদ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারল না। কিন্তু বিজেপি রাজ্যে লোকসভা আসনে ১৮টি আসন পেয়েই দিকে দিকে যা শুরু করেছে, তা ওই দলের পক্ষে যেমন অশনি সঙ্কেত, শান্তিপ্রিয় রাজ্যবাসীর পক্ষেও তা মোটেই সুখকর নয়। বরং রাজনৈতিক এই হিংসার বাতাবরণে মানুষ যেন ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। জয় শ্রীরাম ধ্বনি নিয়ে বিতর্ক আছে, সে অন্য কথা। কিন্তু এমন একটি ধ্বনি আউড়ে কেউ বা কারা কারও বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের শ্লীলতাহানি করবে, এ কেমন রাজনীতি?
পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তা থেকে বেরিয়ে আসায় রাজ্য প্রশাসনের যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকাও কম নয়। শুধু প্রশাসন দিয়ে কখনওই এ ধরনের সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। অনেক সময় প্রশাসনিক পদক্ষেপে তা বেড়ে যাবে, এমন আশঙ্কাও থাকে। তাই সব দলেরই উচিত, যে ভোটাররা তাঁদের ক্ষমতায় বসাচ্ছেন, তাঁরা যাতে সুখেশান্তিতে বসবাস করতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করা।
এমনিতেই রাজ্যে শিল্পের বাড়ন্ত। চাকরির সুযোগ সেভাবে বাড়েনি। তরুণ প্রজন্মকে হতাশা ক্রমেই গ্রাস করছে। রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বদলে রাজনৈতিক দলগুলি যদি নিজেদের মধ্যে এমন হিংসায় জড়িয়ে পড়ে, যার জেরে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, মারামারি এবং খুনের ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ শেষমেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এই প্রশ্নই কিন্তু এখন আমাদের প্রতিনিয়ত ভাবাচ্ছে।