উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
পাক সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গোফুর বলেছেন, দেশের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার সঙ্গে কোনওরকম আপস না করেই বাজেট বরাদ্দে রাশ টানছে সেনাবাহিনী। অনুন্নত এলাকার সার্বিক উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে স্বেচ্ছায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বাজেটে কত পরিমাণ অর্থ কাটছাঁট করা হবে, তা নিয়ে কিছু স্পষ্ট করেননি গোফুর। লোকে বলে পাক প্রধানমন্ত্রী ও সেখানকার সরকারকে নাকি আসলে চালনা করে সেনাবাহিনীর দপ্তর। সে কারণে বাহিনীর এই ‘সদাচারী’ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে পাক সরকারও। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত। দেশের আর্থিক সঙ্কটের মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর এই সিদ্ধান্ত সহায়ক হয়ে উঠবে। উদ্বৃত্ত অর্থ দারিদ্র্য দূরীকরণে কাজে লাগানো হবে। সংবাদ মাধ্যমগুলি বলছে, ইমরানের সরকার বিশেষভাবে জোর দিতে চলেছে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকা ও বালুচিস্তান প্রদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে। ইমরান নিজেও বলেছেন, এবার বাজেটে বালুচিস্তান সহ দেশের পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নে বেশি করে অর্থ বরাদ্দ করা হবে। পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি বলেছেন, দেশের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ব্যয় সঙ্কোচনের পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ও সেনার এমন মেলবন্ধনই পারে সঙ্কটের সুনামি থেকে দেশকে উদ্ধার করতে।
পাক অর্থনীতির এই দুর্দশার অন্যতম কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের অভ্যন্তরীণ গড় উৎপাদন (জিডিপি)-এর একটা বড় অংশ প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ করে পাকিস্তান। ২০১৮ সালে জিডিপির ৪ শতাংশই এই খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল। যা ২০০৪ সালের পর সর্বোচ্চ। আর সেই সূত্রেই বিশ্বের ২০টি ব্যয়বহুল সেনাবাহিনীর তালিকায় ঢুকে পড়ে পাকিস্তান। ওই বছর প্রতিরক্ষা খাতে পাকিস্তানের বাজেট বরাদ্দ ছিল এক হাজার ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার। জাতীয় অর্থনীতির এই দুর্দশা মোচনে ইমরান বহুদিন ধরেই বিভিন্ন মহলে দরবার করছিলেন। আর তাতে খানিকটা সহৃদয়তা দেখিয়ে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ) সম্প্রতি পাকিস্তানকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে পরিত্রাণ দিতে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। আইএমএফই বলেছে, পাকিস্তান এই মুহূর্তে কঠিন আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে। উৎপাদনের ঘাটতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং দুর্বল আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কারণে পাকিস্তানের এই হাল বলেও তারা মনে করে। শুধু তাই নয়, আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে এই শর্তে যে, পাকিস্তান যাতে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। এমনকী সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও সামাজিক খাতে ব্যয়বৃদ্ধি করে। কেননা, এর আগের অভিজ্ঞতাগুলি থেকে দেখা গিয়েছে যে, পাকিস্তান ধারদেনা করে বিদেশ থেকে টাকা এনেও তা দিয়ে জঙ্গি মদত ও সেনাবাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র কিনতে খরচ করেছে। বহু বার এনিয়ে পাকিস্তানকে সতর্কও করেছে আন্তর্জাতিক জোটগুলি। ভারত একাধিকবার রাষ্ট্রসঙ্ঘ সহ আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলিতে পাকিস্তানের এহেন আচরণ নিয়ে সরব হয়েছে। কিন্তু, ভবি ভোলার নয়, পাকিস্তানকে কিছুতেই বাগে আনা যায়নি।
কিন্তু, এখন দারিদ্র্যের গলাজলে পৌঁছে গিয়ে সম্বিত ফিরেছে পাক সরকারের। তাই হঠাৎ করে সাধু সাজার চেষ্টা। আইএমএফের পূর্বাভাস ছিল যে ২০১৮ সালের থেকে এই আর্থিক বছরে পাকিস্তানের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫.২ শতাংশ থেকে কমে ২.৯ শতাংশে নেমে আসবে। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা আবদুল হাফিজ শেখ তো বলেই দিয়েছিলেন, বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। এবং রপ্তানির পরিমাণ গত পাঁচ বছরে আশ্চর্যজনকভাবে কমছে। সুতরাং, এই অবস্থায় ব্যয় সঙ্কোচনের পথে হাঁটা ছাড়া পাকিস্তানের সামনে আর কোনও গত্যন্তর নেই। সে কারণেই তাদের এই ‘ফকিরি’ বেশ ধরার নাটক।