উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
নীলরতন সরকার হাসপাতালের ইন্টার্ন এবং জুনিয়র ডাক্তারদের প্রহৃত হওয়াকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে টানা সরকারি চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে-অচলাবস্থা চলছিল, সেখানে আন্দোলনের ধরন দেখে মনে হয়েছে, মানবিকতা, সহানুভূতিশীলতা ইত্যাদি কথা কেবল অভিধানেই সীমাবদ্ধ। রোজ দূরদূরান্ত থেকে শ’য়ে শ’য়ে অসহায় মানুষ হাসপাতালে এসেছেন কম পয়সায় বা বিনামূল্যে একটু চিকিৎসার আশায়। কিন্তু কেউ চারদিন, কেউ পাঁচদিন বা কেউ আরও দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও সেই সামান্যতম চিকিৎসাটুকু পাননি। তার ফলে কত মর্মান্তিক মৃত্যু যে চোখের সামনে আমাদের দেখতে হয়েছে, তার হিসেব কষা এই মুহূর্তে কঠিন। দু’মাসের দুধের শিশু আর ক’দিন চিকিৎসা পেলে হয়তো সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারত। কিন্তু এসএসকেএমের মতো রাজ্যের এক নম্বর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ডাক্তারদের চরম অমানবিকতায় সেই দৃশ্য দেখার সুযোগ আমাদের হয়নি।
খোদ যে ঘটনাটিকে ঘিরে রাজ্য, এমনকী দেশজুড়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল, সেই এনআরএস কাণ্ডেও পুলিসি তদন্তে দেখা গিয়েছে, রোগীর বাড়ির লোকজনের আক্রমণের মুখে পড়ে জুনিয়র ডাক্তাররাও সেদিন মারাত্মক মারমুখী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁরাও পরিজনদের সঙ্গে কম দুর্ব্যবহার করেননি বলেও অভিযোগ ছিল। অর্থাৎ, তালি যে এক হাতে বাজে না, বা সেদিন বাজেনি, তা ঘটনার ভিতরে গেলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। তবুও মূল ঘটনার চেয়েও বড় করে তোলা হয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাকে। নিঃসন্দেহে তা নিন্দনীয়। চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে মার খাবেন কেন? তাঁদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতেই হবে। সেই আশ্বাসই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অন্যদিকে, রোগীদের প্রতি ডাক্তারবাবু সহৃদয় মনোভাব দেখাবেন সেটাই প্রত্যাশিত। এই আন্দোলন চলাকালীন সে পরিচয়ও দিয়েছেন অনেকে। স্যালুট করতে হয় সেইসব চিকিৎসককে, যাঁরা এই চরম অমানবিকতার যুগেও স্রোতে গা ভাসিয়ে না দিয়ে নিজস্বতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তেমনই একজন হলেন সম্বিৎবাবু। শুধু সম্বিৎবাবু কেন? চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক, সেখানকার মেডিক্যাল অঙ্কোলজির ডাঃ পার্থ নাথের কথাও উল্লেখ করতে হয়। সহকর্মীদের কর্মবিরতির মাঝে, তাঁদের অপ্রিয় হতে হবে জেনেও তিনি মরণাপন্ন রোগীদের কেমো দেওয়া চালিয়ে গিয়েছেন রবিবার। চিকিৎসক নিগ্রহের প্রতিবাদ জানিয়েও নিজের ছোট্ট চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করেননি ডাঃ শুভেন্দু বাগ। শুধু তাই নয়, সমস্ত রোগীর কাছ থেকে তিনি ফি-ও নেননি।
জেলায় জেলায়ও সোমবার কিন্তু সামগ্রিক চিত্রে কিছুটা হলেও বদল এসেছিল। যেমন উত্তরবঙ্গের দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসকরা প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়েছেন রোগীদের দু’টাকার টিকিট না করিয়েই চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে। আরামবাগ হাসপাতালে একসঙ্গে বসে আউটডোরে রোগী দেখছেন ডাক্তাররা। ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে আউটডোর বন্ধ থাকলেও রোগীদের চিকিৎসা চলেছে বাইরে চেয়ার টেবিল পেতে। আসানসোল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা স্বাভাবিক বলেই জানা গিয়েছে। কর্মবিরতিতে অংশ নিয়েও বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তাররা অবস্থান মঞ্চেই আউটডোরের রোগী দেখেছেন।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত খণ্ড খণ্ড চিত্র। কিন্তু, এসবই চিকিৎসকের মানবিকতার প্রতীক। সহানুভূতিশীলতার প্রতীক। নিশ্চয়ই চিকিৎসকদের দাবি থাকবে। আন্দোলনও হতে পারে। কিন্তু, সাধারণ অসহায় মানুষের চিকিৎসা পরিষেবা বজায় রেখে কি তা করা যেত না? তা যে করা যায়, তা এই চিকিৎসকরাই কিন্তু করে দেখিয়ে দিলেন।