উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
এই ধরনের সিরিয়াল কিলারদের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি অনলাইন। এতে তুলে আনা হয়েছে বিভিন্ন সময়ের সিরিয়াল কিলার নার্সদের কথা এবং তাঁদের হত্যার ঘটনা নিয়ে মনোবিদদের বিশ্লেষণ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে খুব কমই কথা বলে থাকেন। হত্যার কারণ সম্পর্কে তাঁদের কাছ থেকে সঠিক কোনও তথ্যই পাওয়া যায় না। বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিজাবেথ ইয়ার্ডলির মতে, ‘এসব মানুষকে বিশ্বাস করা যায় না।’ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অনেকে অজুহাত দেয়, রোগীর যন্ত্রণার সমাপ্তি টানতে তাঁরা রোগীর জীবন কেড়ে নিয়েছে। আবার কেউ কেউ যুক্তি দেয়, জটিল রোগী দেখভাল থেকে মুক্তি পেতেই এই পথ বেছে নিয়েছিল।
ধরুন মার্কিন নার্স চার্লস কুলেনের কথাই। ২৯ জন রোগী হত্যার কথা সে নিজেই স্বীকার করে। দাবি করে, গুরুতর অসুস্থ রোগীরা কষ্ট পাচ্ছিলেন, তাই ওষুধের মাত্রা বাড়িয়ে মৃত্যু ত্বরান্বিত করেছিল। যদিও জানা গিয়েছিল, তাঁর রোগীদের বেশ কয়েকজন সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। কানাডার নার্স এলিজাবেথ ওয়েটলোফের স্বীকারোক্তি দিয়েছিল, তাঁর হত্যার শিকার আটজন রোগীর ক্ষেত্রে তার প্রচণ্ড রাগ হতো। তাই মাত্রাতিরিক্ত ইনসুলিন প্রয়োগ করে হত্যা করে তাদের। তার প্রথম হত্যার শিকার হন ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে ৮৪ বছর বয়সি জেমস সিলকক্স নামে এক রোগী।
নিলস হুগেলের ব্যাপারে সরকারি কৌঁসুলি বলেন, সহকর্মীদের কাছে হুগেল নিজেকে রোগীর জন্য নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে জাহির করত। রোগীদের বাঁচানোর চেষ্টা করার বিষয়টি সে এতটাই দেখাতো যে সহকর্মীরা তাঁকে ‘নবজীবন দান করা র্যাম্বো’ বলে ডাকতেন।
৪২ বছর বয়সি নিলস হুগেলর জন্ম জার্মানির উত্তরে উপকূলীয় শহর ভিলহেমসাফনে। বাবাও ছিলেন চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। বাবার মতো ১৯ বছর বয়সে সে নার্স পেশায় প্রবেশ করে। ১৯৯৯ সালে সে জার্মানির ওডেনবার্গের একটি প্রধান হাসপাতালে নার্স হিসেবে যোগ দেয়। ২০০৩ সালে সে পাশের ডেমেনহোর্স্ট জেলায় বদলি হয়।
এক কন্যার বাবা হুগেলকে সহকর্মীরা পরিশ্রমী বলেই মনে করতেন। কিন্তু তাঁরা হঠাৎ লক্ষ্য করেন, হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) হুগেলের তত্ত্বাবধানে থাকা বেশ কয়েকজন রোগীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে ‘সমস্যা’ রয়েছে। ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে মৃত্যু পথযাত্রী বেশির ভাগ বয়স্ক রোগীর ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ডোজ প্রয়োগ করে সে মৃত্যু ত্বরান্বিত করত। ২০০৫ সালে সে হাতেনাতে ধরা পড়ে। হুগেলের ব্যাপারে মনোচিকিৎসক জানিয়েছেন, হুগেল নারসিসসিসটিক ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। নারসিসসিসটিক পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার (এনপিডি) একটি ব্যক্তিত্বসংক্রান্ত অসুস্থতা। এই সমস্যায় ভোগা মানুষের মধ্য দীর্ঘ সময় ধরে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়। তাঁরা নিজেদের বেশি গুরুত্ব দেন। বেশি বেশি প্রশংসাপ্রাপ্তির চাহিদা থাকে তাঁদের। সেই সঙ্গে তাঁদের মধ্যে সহানুভূতিরও অভাব দেখা যায়। ফরেনসিক মনোবিদ্যার অধ্যাপক ক্যাথেরিন রামসল্যান্ড বলেন, তাদের জন্য শক্তিহীন এই দুনিয়ায় হত্যার মাধ্যমে নিজেকে হয়তো শক্তিশালী ভাবে তারা। হতাশা কাটাতে অথবা কাজের ভার কমাতেও তারা হত্যা করে থাকতে পারে। হত্যার মাধ্যমে এই ব্যক্তিদের মধ্যে একধরনের ক্ষমতাপ্রাপ্তির অনুভূতি কাজ করে। অতীতেও তাঁরা লোকজনের ক্ষতি করে আনন্দ পেয়েছে। বেভারলি এলিট নামে এক নার্স ১৯৯১ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারে আট সপ্তাহে তাঁর তত্ত্বাবধানে থাকা ১৩ শিশুর গুরুতর ক্ষতি করেছিল।
অধ্যাপক ইয়ার্ডলি বলেন, মেডিক্যাল সিরিয়াল কিলাররা তাদের হাতে থাকা ক্ষমতা ও কোনও কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারার অনুভূতি থেকে হত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধে জড়িত হয়। জীবন ও মৃত্যুর নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। এই বোধ থেকে তারা এ ধরনের রোগীর উপর এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ ও অধিকারবোধ অনুভব করে। তারা ভাবে, এই রোগীদের ক্ষতি করা বা হত্যার জন্য সে-ই নিযুক্ত ব্যক্তি।