উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
কে না জানে, মর্ত্যের নরক বলা হয় ‘গুয়ানতানামো বে’ কারাগারকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বুকে গুয়ানতানামো কারাগারের কুখ্যাতি ছিল শুধুমাত্র বন্দিদের উপরে অমানুষিক নির্যাতনের জন্য। যার মাত্রা এতোটাই তীব্র আর ভয়ানক ছিল যে, যন্ত্রণা হতে মুক্তি পেতে বন্দিরা আত্মহত্যার চেষ্টা করত অবিরত। কিউবায় অবস্থিত ৪৫ বর্গকিলোমিটারের এই ভূমিটি ১৯০৩ সালে মূলত অধিগ্রহণ করা হয় মার্কিন নৌঘাঁটি স্থাপনের উদ্দেশ্যে। তবে প্রেক্ষাপট পাল্টাতে শুরু করে ১৯৯১ সাল থেকে। যখন এই জায়গায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে বন্দি আটক করে রাখা শুরু হয়। তালিবানে সন্দেহে এখানে বন্দি হিসেবে আটক করে রাখা হয় ২০ জন আফগানিস্তানীকে। এখনও পর্যন্ত এই কারাগারে ৭০০-র বেশি বন্দিকে জঙ্গি সন্দেহে আটকে রাখা হয় এবং চালানো হয় অমানসিক অত্যাচার। জর্জ ডব্লিউ বুশের নির্দেশে নির্মিত এই কারাগারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল সীমানার বাইরে কিউবার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থিত। ২০০২ সালের জানুয়ারিতে ওই জেল চালু হওয়ার সময় তদানীন্তন প্রতিরক্ষা সচিব ডোনাল্ড রামস্ফেল্ড বলেছিলেন, ‘ভয়ঙ্কর অপরাধীদের জন্যই ওই জেল বানানো হয়েছে।’ কার্যত, ‘শত্রু’ দেশগুলি ধরা পড়া বিপক্ষের সেনা জওয়ানদের উপর যেমন নির্মম অত্যাচার চালায়, ওই জেলে অত্যাচার চালানো হত সেই ভাবেই। এমনকী, বন্দিদের জলও খেতে দেওয়া হতো না। কেউ কেউ তাকে নাজিদের ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে’র সঙ্গে তুলনা করত। এই কারাগার নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনের ঘটে যাওয়া হামলার সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা বন্দিদের রাখা। এখনও পর্যন্ত ৯ জন বন্দি গুয়ানতানামো বে কারাগারে মারা যায়। ২০০৬ সালে একইদিনে তিনজন বন্দি গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করে এবং আরবিতে লেখা সুইসাইড নোট রেখে যায় নমুনা হিসেবে। গুয়ানতানামো কারাগারকে কেন মর্ত্যের নরক বলে আখ্যায়িত করেছিল এক বন্দি? কীভাবে নির্যাতন চলে? হাতকড়া পড়াবস্থায় চোখ বন্ধ করে দীর্ঘক্ষণ সময় দাঁড় করিয়ে রাখা। উলঙ্গ অবস্থায় মিলিটারি পুরুষ ও মহিলা সদস্যদের দ্বারা যৌন নির্যাতন। জল খেতে না দেওয়া। তীব্র আলোর ঝলকানি। তীব্র ঠান্ডা বরফে শুইয়ে রাখা। মুখে কাপড় বেঁধে অনবরত জল ঢালা। হাত পায়ের নখ উপড়ে ফেলা। জ্ঞান না হারানো পর্যন্ত বেধড়ক পেটানো। তীক্ষ্ণ উচ্চমাত্রার শব্দ দ্বারা নির্যাতন করা। আরও কত কী! বন্দিদের উপর চালানো নির্যাতন যেন ছাপিয়ে যায় হিংস্রতার মাত্রাকেও। বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় তুলেছে এই গুয়ানতানামো কারাগার।
বেলমার্শ কারাগার গুয়ানতানামো বে-র মতোই বন্দিশালা। সংবাদমাধ্যম কনসোর্টিয়াম নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী, অপরাধ ও নিরাপত্তা আইন ২০০১-এর আওতায় উচ্চ পর্যায়ের জাতীয় নিরাপত্তাজনিত অভিযোগে আটক অভিযুক্তদের অনির্দিষ্টকালের জন্য বেলমার্শ কারাগারে বন্দি রাখা হতো। আমেরিকায় নাইন ইলেভেনের হামলার ছয় সপ্তাহ পর আইনটি পাস করে ব্রিটেন। তবে ব্রিটেনের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডস বলেছিল, এই আইনটি ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনকে লঙ্ঘন করে। যদিও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই ধরনের আইন পাসে নিম্নকক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। উচ্চকক্ষের শুধুমাত্র মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকে। ২০০৪ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে বেলমার্শ কারাগার নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, বন্দিদের কোনও কোনও ক্ষেত্রে ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত কারাকক্ষে বন্দি থাকতে হয়। ২০০৬ সালে একই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পার্থক্য টানতে গিয়ে মানুষ ব্যঙ্গ করে যে, বেলমার্শ কারাগারে গুয়ানতানামোর মতো থেরাপি আর কাউন্সেলিং গ্রুপের পাশাপাশি শিক্ষা, কর্মশালা, জিম আর লাইব্রেরিও আছে! শুধু সংবাদমাধ্যম আর মানবাধিকার সংস্থা নয়, ২০০৯ সালে খোদ ব্রিটিশ কারা কর্তৃপক্ষের তদন্তে দেখা গিয়েছিল, কারাগারে বন্দিদের নিয়ন্ত্রণ করতে অত্যন্ত বেশি রকমের কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
২০১৮ সালে পরিচালিত কারা কর্তৃপক্ষের অনুসন্ধানেও ওই কারাগারের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছিল। শীর্ষ কারা পরিদর্শকের পরিদর্শন শেষে তিনি জানিয়েছিলেন, ৯১ শতাংশ কয়েদি ওই কারাগার সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন, যা অন্য কারাগারের ক্ষেত্রে হয় না। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তিন বছর আগে পরিদর্শনের সময় ওই কারাগারে সংস্কার আনতে দেওয়া ৫৯টি সুপারিশের মধ্যে ৩৭টি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হন কারা কর্তৃপক্ষ। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, ভয়ঙ্কর অপরাধীদের সঙ্গে সেখানে মাঝারি অপরাধে জড়িতদেরও রাখা হয়েছে। সেখানে এমন সব আক্রমণাত্মক বিদেশি অপরাধী রয়েছে, যাদের কাছ থেকে অন্য কয়েদিদের দুরত্ব রাখা দরকার। বেলমার্শ কারাগারে অ্যাসাঞ্জ কীভাবে দিন কাটাচ্ছেন তা নিয়ে তাই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, অ্যাসাঞ্জ ওই কারাগারে যথাসময়ে চিকিৎসা সুবিধা পাবেন না। ফলে তাঁর শারীরিক অবস্থা দ্রুত ভেঙে পড়বে। নীরব দর্শক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
অথচ, ট্রাম্প স্পষ্টতই অ্যাসাঞ্জের হ্যাকিংয়ে লাভবানই হয়েছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের ইমেল ফাঁস করার ঘটনা ছিল ২০১৬ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একাধিকবার নির্বাচনী প্রচারে প্রকাশ্যে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের প্রশংসা করেছেন। অথচ, তখনও মার্কিন সরকারের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁসের অভিযোগে অ্যাসাঞ্জ ছিলেন অভিযুক্ত। এবং, আমেরিকার হাতে বিচারের জন্য তাঁকে যাতে তুলে দেওয়া না হয় সে জন্যেই তিনি ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি এখন আর বলবেন ‘আই লাভ অ্যাসাঞ্জ’? অনেক যৌক্তিক প্রশ্নের উত্তর আমাদের অজানা।