উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের পর কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। অন্যবারের তুলনায় এবার এরাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফল করেছে বিজেপি। তারপরই রাজ্যে শুরু হয়েছে নানা অশান্তি। একদিকে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই প্রায় সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ঘোষণা করা হচ্ছে, জালের একদিক থেকে টপকে কোন মাছ অন্যদিকে গেল। বিজেপি নেতাদের মুখেচোখে আত্মপ্রসাদের ভাবও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে পঞ্চায়েত ও পুরসভা দখলের খেলা। আদর্শ এখন চুলোয় গিয়েছে। রাজনীতিতে ক্ষমতাই এখন মুখ্য। তার উপরে আর কিছু নেই। তাই লোকসভা ভোটে বিজেপি ভালো ফল করতেই দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু নেতা গেরুয়া শিবির মুখো হয়ে উঠেছেন। এই খেলা আমরা দেখেছি সেই বাম আমলেও। তারা তখন ভয় দেখিয়ে, অত্যাচার করে ‘সব লাল হো জায়েগা’ মন্ত্র উচ্চারণ করত। তারপর এল তৃণমূলের পালা। অন্যের দল ভাঙিয়ে নিজের দলের শক্তিবৃদ্ধি করা বা একের পর এক কাউন্সিলার ভাঙিয়ে পুরবোর্ড দখল করার পথ তারাও দেখিয়েছে। এখন হাওয়া কিছুটা ঘুরতেই সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ বিজেপিও। সকলেই এক জুতোয় পা গলিয়ে এগিয়ে চলতে চাইছে। রাজনীতিকরা আসলে মানুষকে হয়তো খুব বোকা ভাবেন। তাঁরা গণতন্ত্রের কত্তাল বাজাবেন, আবার ক্ষমতা দখলের জন্য দল ভাঙিয়ে মানুষের গণতান্ত্রিক ইচ্ছাকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবেন।
এখন এই বাংলায় যেটা চলছে, সেটা হল গড় দখলের লড়াই। তৃণমূলের হাত থেকে এলাকার আধিপত্য হস্তগত করার লড়াই। সেই লড়াইয়ে প্রাণও যাচ্ছে। তার রক্তাক্ত নিদর্শন হল সন্দেশখালি, ন্যাজাট। কার কতজন মরল তাই নিয়ে তরজা শুরু। শুরু দেহ দখল করে রাজনীতি করার অপচেষ্টা। কিন্তু কার সন্তান মরল, কার বাবা মরল, কার স্বামী মরল, তা নিয়ে রাজনীতিকদের মাথাব্যথা কতটা? রাজনৈতিক লড়াইয়ে নিহতদের দেহগুলি হল ক্ষমতায় উত্তরণের যেন এক একটি সোপান।
লোকসভা ভোটে জিতে উৎসাহিত রাজ্য বিজেপি। তারা এবার বিধানসভা দখলের লক্ষ্যে অল আউট খেলতে নেমেছে। আগামী নির্বাচনে তারা একটা টার্গেট ঠিক করে লড়াইয়ে নেমে পড়েছে। তাদের ভাবভঙ্গী দেখে মনে হচ্ছে, লোকসভা ভোটের নিরিখে তারা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিত বিভিন্ন থাকে। লোকসভা ভোট আর বিধানসভা ভোট এক নয়। আবার বিধানসভা ভোট ও পুরসভা-পঞ্চায়েতের ভোট এক নয়। এর সব থেকে বড় উদাহরণ হল ওড়িশা এবং কর্ণাটক। ওড়িশায় এবার লোকসভা ও বিধানসভার ভোট একসঙ্গে হয়েছিল। লোকসভা ভোটে বিজেপি ভালো ফল করেছে। সেখানে নবীনের দুর্গে কিছুটা ফাটল দেখা গেলেও বিধানসভা ভোটে নবীন দুর্গ অটুট। সেখানে ভোটের ফলে দেখা গিয়েছে লোকসভার ভোটে যে বিধানসভা কেন্দ্রে বিজু জনতা দল হেরে গিয়েছে, বিধানসভা ভোটে সেই কেন্দ্রেই জয়ী হয়েছেন বিজেডির প্রার্থী। কর্ণাটকের কথায় আসা যাক। এবার কর্ণাটকে লোকসভার ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে। সেখানে ২১ কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল মাত্র একটি আসনে। কিন্তু ফলপ্রকাশের প্রায় সাতদিনের মাথায় অনুষ্ঠিত পুরসভার ভোটে বিপুলভাবে ফিরে এসেছে কংগ্রেস। সেখানে বিজেপিকে হারিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। সুতরাং এই সত্যটাকে রাজনৈতিক দলগুলি যেন ভুলে না যায়। যে দলই হোক না কেন, তাদের মনে রাখা উচিত মানুষ গায়ের জোরের রাজনীতিকে পছন্দ করে না।
আজ শুধু ন্যাজাটই রক্তাক্ত নয়। রক্তাক্ত হওয়ার আশঙ্কায় কাঁপছে বাংলা। অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে। এসব দেখে রুষ্ট এই রাজ্যের মানুষ। তারা শান্তি চায়। কিন্তু রাজনীতির কারবারিরা আজ সেই শান্তির ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে। এখন থেকেই ২০২১-এর মহারণ শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল-বিজেপি। শুরু হয়েছে দু’পক্ষের নার্ভের লড়াই। এই লড়াই কি চলবেই? মানুষ কিন্তু এই লড়াইকে পছন্দ করছে না। দুটো দলই যেন এটা মনে রেখে তাদের রণকৌশল তৈরি করে। রাজনীতিকদের কাছে অনুরোধ, মানুষকে সম্মান করুন। প্রচারে যেভাবে মানুষকে বা গণতন্ত্রকে সম্মান করার কথা তাঁরা বলেন, সেই লোক দেখানো সম্মান নয়, সেই সম্মান হোক আন্তরিক। বন্ধ হোক এই খুনিখুনি, রক্তপাত।