উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে সবচেয়ে বেশিদিন ছিল কংগ্রেস। তাই বাঙালির এই কেন্দ্র-বিরোধিতার কেন্দ্রেও কংগ্রেস এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব। মার্কসবাদী কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসুর উত্থান এবং বাংলার মসনদে সুদীর্ঘকাল তাঁর সপ্রতাপ বিচরণের পুঁজি ছিল কেন্দ্র এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের চরম বিরোধিতা। কংগ্রেসের অভ্যন্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থানের পিছনেও ছিল দিল্লি-বিরোধিতার আগুন। বাংলার অগ্নিকন্যা হিসেবে তিনি তৃণমূল প্রতিষ্ঠা করেন এবং সিপিএম সরকারকে বাংলাছাড়া করে দেওয়ার এক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন। বাংলার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কেন্দ্রের, বিশেষ করে, মোদি সরকারের বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপাতত সবচেয়ে আপসহীন ব্যক্তিত্ব। বাঙালির আর এক আক্ষেপ, প্রণব মুখোপাধ্যায় কংগ্রেসের ভিতর যোগ্যতর ব্যক্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে কোনোদিন প্রধানমন্ত্রী করা হয়নি। সুযোগ একাধিকবার উপস্থিত হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে প্রতিবার বঞ্চনা করা হয়েছে। প্রণববাবুকে রাষ্ট্রপতি পদে বসিয়ে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড বাঙালির দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার চেষ্টা করেছে বহুদিন পর। কিন্তু তাতে কংগ্রেসের কিছুমাত্র লাভ হয়নি, কংগ্রেস-বিরোধিতার বীজটি বাঙালির অস্থিমজ্জায় প্রোথিত হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বেরই সৌজন্যে।
বাঙালির এই আক্ষেপ ক্ষোভের জায়গাটি হয়তো অনুধাবন করেছেন শ্যামাপ্রসাদের উত্তরসূরিরা। বিজেপি এবারের নির্বাচনে তাই বাংলায় প্রভাব বিস্তারের উপর বিশেষ জোর দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গবাসীর মন জয়ের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ। তাঁরা লাগাতার বাংলার মানুষের দোরে দোরে এসে পৌঁছেছেন। ভোটে তাঁরা যে অপ্রত্যাশিত ফললাভ করেছেন তাতে ওই উদ্যোগেরই সফল প্রতিফলন দেখছে মানুষ। ২০১৪-র ২ থেকে বিজেপি এবার একলাফে ১৮, অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২২ থেকে মাত্র ৪ কম! মোদিজির প্রত্যাশার ঝুলি ছাপিয়ে দেওয়ার ফলে বাংলার মানুষেরও এবার বিরাট প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে এই সরকারের কাছে। জল্পনা চলছিল বাংলা থেকে ক’জন মন্ত্রী হবেন, কে কোন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর পাবেন ইত্যাদি। কিন্তু, শুক্রবার দিল্লিতে শপথগ্রহণ শেষে বাঙালি বস্তুত হতাশ। মোদিজির প্রথম মন্ত্রিসভায় দু’জন রাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন বাংলা থেকে। অর্থাৎ বাংলা দু’জন এমপি দিয়ে দু’জন মন্ত্রী পেয়েছিল। এবার ১৮ জন এমপি দিয়েও বাড়তি কিছু পেল না! পুরনো মুখ বাবুল সুপ্রিয় এবারও রাষ্ট্রমন্ত্রী। গতবারের সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ার জায়গায় এবার আর-এক জন রাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন রায়গঞ্জের দেবশ্রী চৌধুরী। বিজেপির ঘোষিত লক্ষ্য হল—২০২১-এ বাংলার মসনদ দখল করা। বাংলার প্রতি দিল্লির বঞ্চনা উপেক্ষার পরম্পরা অক্ষুণ্ণ রেখে বাঙালির মন জয় কতটা বাস্তবসম্মত সেটা মোদিজিকেই ভেবে দেখতে হবে। প্রশ্নটা অবশ্য শুধু মন্ত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি নয় বাংলার সার্বিক উন্নয়নেও মোদি সরকারের সবিশেষ তৎপরতা ও সাফল্য দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় এবার বাংলা। ২০২১-এর লড়াইটা কিন্তু ২০১৯-এর চেয়ে অনেক কঠিন। এবার লড়াইটা হতে চলেছে উন্নয়ন বনাম উন্নয়নের।