উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
‘উঁহু, আমি সাংবাদিক নই।’
‘এখানে?’
‘একটা কাজে এসেছি।’
সঞ্জয় এবার বলে ‘কোনও সাহায্য লাগলে বলতে পারেন। আমি এখানকারই।’
ঐত্রেয়ী বুঝতে পারে না, কতটা ঠিক হবে অচেনা কাউকে জিজ্ঞেস করা, কিন্তু চেনা কাউকে জিজ্ঞেস করার তো চান্সও নেই। তাই ঐত্রেয়ী বলেই ফেলে ‘এখানে ছায়ায় একটু বসা যাবে এমন কোনও জায়গা আছে? আসলে একজনের আসার কথা।’ সঞ্জয় অনায়াসেই বলে, সামনে এগিয়ে গিয়ে ডানদিকে বেঁকলে একটা ছোট্ট নদী আছে, সেখানে দুটো নৌকা তীরে বাঁধাই থাকে। ওইখানে চলে যান। গাড়ি আছে সঙ্গে?’ ‘উহুঁ, ট্রেনেই এসেছি।’ সঞ্জয়ের অনুরোধে ওর বাইকে করে খানিক দূরে এগিয়ে যায় ঐত্রেয়ী। সামনে শান্ত একটা নদী, আর তীরে বাঁধা নৌকা। সঞ্জয়ের সঙ্গে খানিকক্ষণ কাটিয়ে ভালোই তো লাগছিল, তাই শহুরে ঐত্রেয়ী বাইক থেকে নেমে বলেই ফেলল, ‘আপনার কি কাজ আছে কোনও? নইলে একটু বসে যেতে পারতেন। আমাকে ছেড়ে দিয়ে গেলেন অথচ একটুও গল্প হল না।’ সঞ্জয়ের সৌম্য চেহারা, নীল শার্ট আর বাদামি ট্রাউজারের ওপর কেন জানি ঐত্রেয়ীর ভরসা হল, খুব কোনও বিপদ হবে না কিছুক্ষণ বসলেও। এ ভরসার অবশ্য কোনও মানে নেই। কিন্তু ঐত্রেয়ী এমনই। সঞ্জয় একটু মৃদু হেসে বলল, ‘কারোর আসার কথা বলছিলেন যে, আমার একটা ছোট্ট কাজ আছে, তবে একটু পরে গেলেও হবে।’ ঐত্রেয়ীও জানায়, যার আসার কথা তার আসতে দেরি আছে। নৌকাটায় উঠে কাঠের পাটাতনে দু’জনে গিয়ে বসে ... ঐত্রেয়ীর কুসুম রঙের কুর্তা আর নীল জিন্স এই নদীর ধারের হাওয়ায় বেশ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। চুলও উড়ছে একটু একটু। চোখে অবশ্য তখনও সানগ্লাস। সঞ্জয়ের চোখ খালি... ঐত্রেয়ী সেই দিকে তাকিয়ে দেখল, হুবহু নদীটার মতো স্বচ্ছ। চোখাচোখি হয়ে যাওয়ায় আবার চোখ নামিয়ে নিয়ে অভ্যেসবশে জামাটা একটু টেনে নিল ঐত্রেয়ী। সঞ্জয়ও চোখ ফেরাল নদীটার দিকে।
‘এই নদীটার নাম অলীক জানেন। কত কত দিন এই নদীটার ধারে বসে থেকেছি আমি।’ ‘অলীক?’ ভূগোল বইয়ে এমন নদীর নাম কোনওদিন পড়েনি বলেই একটু অবাক চোখে তাকালো ঐত্রেয়ী। সঞ্জয় আপন মনে বলেই চলেছে। ‘রাখালদা এইখানটা বসে ছিপ ফেলত। আর আমি পাশে বসে বসে দেখতাম। এই গ্রামটাও খুব অন্যরকম ছিল জানেন, এটা আসলে ছিল এক জমিদারদের ঘুরতে আসার জায়গা। আমরা এই গ্রামে সেই প্রজাদেরই বংশ আসলে। এখন অবশ্য উল্টো, সেই জমিদাররাই এখানে প্রান্তিক। ওই দুটো পরিবার আছে বোধ হয়। প্রজাদের বংশই এখন এই গ্রামে সবটা। তবে সেই জমিদার বাড়ি নিয়ে কিন্তু অনেক কিছু শোনা যায়। বিশেষত, একটা গল্প তো আমার একেবারে নিজের স্মৃতিতেই আছে’ সঞ্জয় ঘুরে তাকায় ঐত্রেয়ীর দিকে ‘আপনি বোর হচ্ছেন না তো?’ ঘাড় নেড়ে না জানায় ঐত্রেয়ী। কৌতূহলের সঙ্গে জিজ্ঞেস করে, ‘কী গল্প?’ সঞ্জয় আবার বলতে শুরু করে ‘আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে এই অলীক নদীর ধারে শোনা যায় সেই জমিদারবাড়ির কোনও ছেলে মাছ ধরতে এসে জলে ডুবে মারা যায়। তো তারপর থেকে জমিদার বাড়ির কোনও প্রজন্মের কেউই নাকি এখানে মাছ ধরতে আসত না। কিন্তু এই যে হারানদাকে দেখলেন...’ ঐত্রেয়ী জানায় ‘দেখিনি, আপনি বললেন।’ ‘হ্যাঁ তাই আর কি। তো হারানদার বাবা হারানদাকে নিয়ে একবার মাছ ধরতে এসেছিল। সেই নিয়ে গ্রামে রইরই পড়ে যায়, কিন্তু হারানদা বা হারানদার বাবা কারওরই কিছু হয় না।’ ঐত্রেয়ী আবার বলে ‘যাক। মানে সেটাই তো হওয়ার কথা ছিল। আর হারানদাকে তো আপনিও মাছ ধরতে দেখেছেন, তাই না?’ সঞ্জয় এবার একটু উদাস হয়ে বলে ‘হ্যাঁ, কিন্তু আসল গল্প তো এর পরে, বাবার সঙ্গে এমন দু-তিন দিন আসার পর, পঞ্চম বা সপ্তম দিনে, মানে আমার ঠিক মনে নেই, হারানদার বাবা মারা যান এই নদীতেই মাছ ধরতে এসে।’ ঐত্রেয়ী একটু নড়ে বসে। না সে মোটেই অলৌকিক কিছুতে বিশ্বাস করে না, কিন্তু সঞ্জয়ের গল্প বলার ধরনটা এত ভালো! যে বুকটা একটু ছ্যাঁত করে ওঠে। সঞ্জয় বলতে থাকে ‘হারানদার বাবা এমনিতে ভাবতে গেলে জলে পা পিছলে পড়ে গিয়েছেন। তাই মারা গেছেন। কিন্তু গ্রামের লোকেরা তো তা শুনতে নারাজ। বিশেষত যখন এমন মৃত্যুর কথা এই গ্রামের ইতিহাসে আছে। হারানদা নাকি তর্ক জুড়েছিল যে, তাহলে তো প্রথমদিনই এমন দুর্ঘটনা ঘটার কথা। ক’দিন বাদে কেন? কিন্তু বাচ্চা ছেলের প্রশ্নকে কেউই আমল দেয়নি। ঐত্রেয়ী আবার বলে ‘কিন্তু আপনি যে বললেন, আপনি আর হারানদা...।’ সঞ্জয় জোর দিয়ে বলে ‘আগে শুনুন। তো হারানদার কথা কেউ পাত্তা দেয়নি সেটা ঠিকই কিন্তু হারানদাও এই রহস্যের সন্ধান ছাড়েনি। হারানদার ওই পাঁচ দিন বা সাত দিনের স্মৃতি হাতড়ে বার করেছিল যে ওই শেষদিন হারানদার বাবা নদীটার একটু বেশি কাছে গিয়ে বসেছিল। সুতরাং হারানদার মনে হতে থাকে এই তীরে কোনও এক অদৃশ্য সীমারেখা আছে, যেটা সম্ভবত পেরনো যাবে না। সেটা পেরলেই মৃত্যু অনিবার্য। হারানদা দিনের পর দিন বসে থেকে খেয়াল করতে থাকে। এমনকী একবার একটা ছাগল ছুটে এসেছিল নদীর ধারে, তারও নাকি পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়। তো তারপর থেকে হারানদা সেই অদৃশ্য সীমারেখাটাকে কোনওরকম ভাবে চিহ্নিত করে এবং সেটার একটা আশ্চর্য নাম দেয়।’ ‘কী?’ চোখ থেকে সানগ্লাসটা নামিয়ে জানতে চায় ঐত্রেয়ী। ‘মৃত্যুরেখা। আমাকে ছোটবেলায় যখন নিয়ে আসত হারানদা, আমাকে বারবার দেখাত... ‘এই দেখ, এর পরে গেলেই কিন্তু মরে যাবি। তাই সবসময় এইখানে থাকবি। এর মধ্যে। চিহ্নিত করার জন্য পরে অবশ্য এই নৌকাগুলি রাখা হল। এইটাই হচ্ছে সেই সীমারেখা বা হারানদার কথায় মৃত্যুরেখা বলতে পারেন। যার পরে গেলেই মৃত্যু অনিবার্য’ জানায় সঞ্জয়। ঐত্রেয়ী একটু ঢোক গেলে, তারপর বলে... ‘আপনি কোনওদিন পেরিয়ে দেখেননি?’ সঞ্জয় উত্তর দেয়, ‘নাহ্, আমার কোনওদিনই অত সাহস ছিল না। তাছাড়া জীবন দারুণ, কত মানুষ, কত ঘটনা, খামোখা মরা যায় কি না দেখতে যাব কেন বলুন।’ ঐত্রেয়ীর নৌকাটায় বসে থাকতে একটু অস্বস্তি হয় এবার, জামাটা টেনে নেয় আবার, সঞ্জয় খেয়াল করে ঐত্রেয়ীর চোখগুলো, একটু অস্থিরতা আর একটু ঔদাসীন্য মাখা এই অলীক নদীর মতোই দুটো চোখ। সঞ্জয় ভাবতে চায়, ‘এই চোখের মৃত্যুরেখা কোনখানে, কতদূর গেলে মৃত্যু অনিবার্য আমার?’ ঐত্রেয়ী জানতে চায় ‘হারানদার এখন কত বয়স?’ সঞ্জয় বলে, ‘পঞ্চাশ ধরুন।’ সঞ্জয় আরও বলে, ‘সেই কারণেই হয়তো এই নদীতে কাউকে নামতে দেখা যায় না। তবে আমি কিন্তু আমার জীবনে বারবার এমন মৃত্যুরেখার টের পেয়েছি জানেন। সে কিন্তু কেবল এই অলীক নদীর নয়, অনেক কিছুর। কোনটার সীমারেখা যে কতদূর তা ঠাহর করাই মুশকিল। কোনও একরকমের যুক্তি তো খাটেও না বলুন?’ এরপর সঞ্জয় তাড়াতাড়ি ঘড়ির দিকে তাকায়। ঐত্রেয়ী আবার বলে ‘কী?’ সঞ্জয় জানায় এইবার তাকে উঠতে হবে। কাজটা এবার না করলেই নয়। ‘কিন্তু আপনার কেউ তো এল না এখনও?’ ঐত্রেয়ী একটু উদাস হয়ে বলে ‘আসছে... থ্যাংক ইউ।’ সঞ্জয় পকেট থেকে একটা চিরকুট বার করে দশটা সংখ্যা লিখে ঐত্রেয়ীর হাতে দিয়ে উঠে পড়ে ‘আমার নম্বর। এমনি দিয়ে রাখলাম। যদি লাগে কখনও।’ সঞ্জয় বাইকে উঠে পড়ে স্টার্ট দিচ্ছে, কিন্তু মাথায় রুমালটা আর বাঁধল না। ঐত্রেয়ী বলে ‘রুমালটা?’ সঞ্জয় জানায় ‘ওটা ঘাম হয় বলে পরি তো। এখন তো বিকেল হয়ে এল।’ তারপরই আঙুল দেখিয়ে দূরের একজনের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ওই যে হারানদা আসছে। একবার শুনে নিতে পারেন পুরো গল্পটা।’ বাইক স্টার্ট দিয়ে শব্দ করে চলে যায় সঞ্জয়। ঐত্রেয়ী সেই চলে যাওয়ার দিকে দেখে। তারপর মনে মনে ভাবে, ‘মৃত্যুরেখা।’ সে কি কেবল মৃত্যুরই? দূরে যাওয়ার কোনও রেখাপথ নেই? কতদূর এগলে, সামনে থেকে কেউ হুস করে দূরে চলে যায়...এভাবে?
নদীর ধারে তখন বিকেল নেমে আসছে, সূর্যাস্ত হবে হবে। দূর থেকে হেঁটে আসছে হারানদা। ঐত্রেয়ী এখন সবটাই জানে, জমিদার, অলীক নদী, হারানদা, মৃত্যুরেখা—সব।’ থ্যাংক্স টু সঞ্জয়’ লোকটা কাছে আসতেই ঐত্রেয়ী উত্তেজিত হয়ে বলল ‘আপনি হারানদা তো?’ প্রৌঢ় উত্তর দেয় ‘কে? হারানদা? তুমি কাকে খুঁজছ মা? আমি তো বরুণ।’ ঐত্রেয়ী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সঞ্জয় তো স্পষ্ট এই দিকেই দেখাল। ও আবার বলে ‘আপনি মাছ ধরতে আসা এই অলীক নদীর ধারের হারানদা নন?’ লোকটা আরও অবাক হয়ে বলে ‘অলীক নদী? এটা তো ছোট একটা খাঁড়ি মা।’ এবার খুব অসুবিধে হতে থাকে ঐত্রেয়ীর। ঠোঁট কামড়ে বলে ‘আপনি তার মানে জমিদার, মৃত্যুরেখা, এসবের কিছুই জানেন না?’ লোকটা একটু বিরক্ত হয়, তারপর বলে ‘তুমি কী সব বলছ মা, কোথা থেকে এসেছ?’ ঐত্রেয়ী আবার জামাটা টেনে নেয়, তারপর সূর্যাস্তের লাল আকাশের নীচের ওই সোজা দিগন্ত ধরে হাঁটতে থাকে, আরেকটু হাঁটলেই দূরে দেখা যাবে স্টেশন। কিন্তু কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছে না ঐত্রেয়ী। এমনকী হাঁটতে হাঁটতে দুটো ছেলেকে লাফ দিয়ে জলে নামতেও দেখে, ছ্যাঁত করে ওঠে বুক, কিন্তু তারা এক ডুব দিয়েই উঠে আসে। তার মানে এই এতক্ষণ ধরে যা যা শুনল সে, সব মিথ্যে? কিন্তু কেন? দিগন্তকেও এখন কেমন মৃত্যুরেখার মতো লাগছে ঐত্রেয়ীর। ব্যাগ থেকে চিরকুটটা বের করে ওই নম্বরটায় একটা এসএমএস লিখল সে।
‘লোকটি হারানদা নয়। নদীটাও অলীক নয়। এমনকী জমিদারও বোধহয় ছিলেন না কোনওদিন। বাচ্চারা নদীতে স্নান করতে আসে। গল্পে কোথাও কোনও মৃত্যু নেই। সেটা তো ভালোই। কিন্তু একটা দুপুর, গোটা একটা দুপুর এতগুলি মিথ্যে বলে গেলেন কেন? দুপুরের বুঝি মৃত্যু হয় না।’
ঐত্রেয়ীর বেশ চিটেড লাগছে। দারুণ একটা দিন কেমন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মুহূর্তে। সঞ্জয়ের চোখের দিকেও তো তাকিয়ে ফেলেছিল সে। এইবার স্টেশনের আলো দেখা যাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে স্টেশনে পৌঁছয় ঐত্রেয়ী, ছ’টার ট্রেন। হাতে এখনও সময় আছে একটু। বসে এক জায়গায়। এই ভিড়, কোলাহল, কিছুই ভালোলাগছে না তার। সে কেবল ভাবছে, অন্তত অলীক নদীটাও যদি সত্যি হতো!
মোবাইল বের করে দেখে, ওয়ান নিউ মেসেজ।
‘মিথ্যে বলেছি কে বলল? তাছাড়া আপনি তো এসেছিলেন গল্প খুঁজতে। সত্য খুঁজতে তো নয়। আমি আপনাকে পত্রিকার অফিসে দেখেছি কয়েকবার। গল্প দিতে এসেছিলেন। তাই অচেনা-অজানা এই গ্রামে আপনি যে কেবল গল্পের জন্যই ছুটে এসেছেন সেটা বুঝতে খুব একটা অসুবিধে হয়নি আমার। আমাকে দোষারোপ করলে কিন্তু আমিও করতে পারি, কারণ আপনারও তো কেউ আসার ছিল না।’
এইবার আপন মনে হেসে ফেলে ঐত্রেয়ী। লিখে পাঠায় ‘আসার কথা ছিল তো, গল্পের’ তারপর ট্রেন চলতে শুরু করলে, ব্যাগ থেকে একটা খাতা বের করে লিখতে শুরু করে সে। হাত কেঁপে কেঁপে যায়। স্টেশনে নামবার আগে আবার মেসেজ করল ঐত্রেয়ী।
‘গল্পের নাম রাখলাম ডেডলাইন। মানে আপনার মৃত্যুরেখা।’
সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এল ‘বাহ্, আচ্ছা, এই গল্পটায় আমায় সহ-লেখক করতে ভুলবেন না যেন!’
ঐত্রেয়ী ঠিকানা চেয়ে রাখে। আর গল্প বেরলে পত্রিকাটা পোস্টে পাঠিয়ে দেয় সঞ্জয়ের ঠিকানায়। দেখা যায় লেখকের নাম সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায় আর চরিত্রের নাম ঐত্রেয়ী প্রামাণিক। পত্রিকার ভিতরে ছোট্ট একটা নোট রাখে ঐত্রেয়ী। ‘যদি কখনও সেই অলীক নদী খুঁজে পাওয়া যায়। কিংবা সত্যি সত্যি হারানদাকে, সেদিন নাহয় একসঙ্গে মাছ ধরব আমরা। গল্পের ডেডলাইনটা আপনার জন্য মিস করলাম না ঠিকই, কিন্তু লেখক তো আর আমি নই।
ওই যে আপনি বলেছিলেন, সব জায়গারই, সবকিছুরই একটা নিজস্ব মৃত্যুরেখা আছে। তেমনই হয়তো জানেন, এই গল্পটাও। এই গল্পটা যে মুহূর্তে একটা সত্যি থেকে কল্পনা হয়ে গেল, আর সঙ্গে সঙ্গে মরে গেল একটা অলীক নদী, একটা গ্রাম, হারানদার বাবা, হারানদা... জমিদারের বাড়ি, সব, সব্বাই! বাস্তবে হয়তো ছিল না কিছুই, কিন্তু আমি তো বিশ্বাস করেছিলাম বলুন। আর তাই, আমার বিশ্বাসে এরা সব্বাই সেই মৃত্যুরেখাকে পেরিয়ে গেল...কেবল তারপরেও একটা খাঁড়ির ধারে কেবল রয়ে গেলাম আমি শ্রোতা আর আপনি কথক। আমাদের মধ্যিখানে একটা সূর্যাস্তের নিভু নিভু আকাশের দিগন্ত। তাকে মৃত্যুরেখা ভাবতে ইচ্ছে করছে না জানেন। চলুন না, একদিন পেরিয়ে দেখি, মন বলছে... মরব না।’