উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
দেবেনবাবুর চার দিদি। দিদিদের বেশ বয়স হয়েছে। চারজন চারদিকে থাকেন। দেবেনবাবুর বউয়ের এখনও ছেলেপুলে হয়নি। বউয়ের নানারকম মেয়েলি রোগ তার ওপরে থাইরয়েডের সমস্যা! ডাক্তারবাবু বলেছেন চিকিৎসা চালিয়ে যেতে। ঠিক সময়ে যা হবার হবে। তবে কিছু না হলেও খুব রেগে যাবার মতো লোক দেবেনবাবু নন। মিষ্টির কারবার করতে করতে তাঁর চরিত্রটা ছানার মতো মোলায়েম আর গরম রসগোল্লার মতো তুলতুলে হয়ে গেছে। তিনি বেশ দেরি করে বিবাহ করলেও লিপিকার বয়সটা কম। আর বাচ্চাকাচ্চা না হওয়ার কারণে সে এখনও বেশ ফুরফুরে। সারাদিন সাজগোজ করে...বাজার যায়...স্বামীর জন্য নানারকম পদ রাঁধে...টিভিতে সিরিয়াল দেখে আর ফেসবুক করে।
রোজ রাতে দোকান বন্ধ করার সময় দেবেনবাবু একটা ছোট টিফিন বক্সে বউয়ের জন্য গরম রসগোল্লা নিয়ে বাড়ি ঢোকেন। সেই বিয়ের পর থেকেই রোজ রাতে দেবেনবাবু বউয়ের জন্য দুটো করে গরম রসগোল্লা নিয়ে আসতেন বাড়িতে। দিনরাত মিষ্টির দোকানে থাকেন বলে নিজে মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন না একদম! কিন্তু তিনি যে রোজ তাঁর বউকে দুটো করে রসগোল্লা নিবেদন করেন, এতে তাঁর চরম মানসিক তৃপ্তি ঘটে।
লিপিকা তেলতেলে এবং থলথলে ভুঁড়িওয়ালা দেবেনবাবুকে সত্যিই খুব ভালোবাসেন কিন্তু ইদানীং রাতে দেবেনবাবু টিফিনবাক্স নিয়ে ঘরে ঢুকলেই তার আতঙ্ক শুরু হয়ে যায়। বিয়ের পর প্রথমদিকে দেবেনবাবুর সামনে বসে লিপিকাকে রসগোল্লা খেতে হতো। মোটাসোটা দেবেনবাবু সে দৃশ্য দেখে ভারী খুশি হতেন। আনন্দে তাঁর ছোট ছোট চোখ দুটো কুচকে বন্ধ হয়ে যেত। তবে এখন লিপিকা আর রসগোল্লা খেতে পারে না। বড্ড গা গোলায়। দেবেনবাবু আদুরে গলায় রসগোল্লা খেতে বললে বলে—‘আমি ঠিক খেয়ে নেব।’ খায় না লিপিকা। এইভাবে তিন-চার দিন ধরে বেশ অনেকগুলো রসগোল্লা জমে যায় রান্নাঘরে। তন্বী কাজের মেয়েটি গরিব হলেও খুব স্বাস্থ্য সচেতন। বাসি খাবার যেমন খায় না, তেমন রসগোল্লাতেও ভক্তি নেই। আবার প্রাণে ধরে রসগোল্লাগুলো ফেলে দিতেও মন চায় না। এদিকে স্বামী রসগোল্লা আনা বন্ধ করেন না।
রসগোল্লার মতো আরেকটা অপছন্দের বিষয় আছে লিপিকার—সেটা হল রোজ বাজার যাওয়া। ছোটবেলায় মাতৃহারা একমাত্র ভাইকে তাঁর দিদিরা ভালোমন্দ খাইয়ে বড় করে তোলার সুবাদে দেবেনবাবুর জিহ্বার স্বাদকোরকগুলো খুবই সতেজ এবং উর্বর। কিন্তু সকাল-সকাল তাঁকে দোকানে গিয়ে বসতে হয় বলে বাজার যাওয়ার উপায় তাঁর থাকে না। এছাড়া সকালে কচুরি-আলুর তরকারির খদ্দেরের এত চাপ থাকে যে নিতাই আর পূর্ণ সব সামাল দিতে পারে না।
লিপিকা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের ভেতর দিকে একটা খুপরি মতো জায়গায় পূর্ণ সন্দেশ, বোঁদে, জিলিপি তৈরি করে। রাতে তৈরি হয় রসগোল্লা আর পান্তুয়া। মিষ্টি, লুচি, শিঙাড়ার গন্ধে প্রতিদিন দেবেনবাবুর ওজন বেড়ে চলে।
বাড়িতে দুপুর ও রাতের খাওয়াটা জমিয়ে খান দেবেনবাবু। মাছ খেতে ভালোবাসেন খুব। সব্জিটব্জিগুলো বাড়ির কাছ থেকে কিনলেও দেবেনবাবুর মনের মতো মাছ কিনতে লিপিকা রেল বাজারে যেতেই হয়! সবরকম মাছ বিক্রি করে বলে মাছ বাজারের তারক মাছওয়ালার কাছ থেকেই লিপিকা মাছ কেনে। একদিন কী মনে হল—লিপিকা রান্নাঘরে জমে থাকা রসগোল্লাগুলো একটা সাদা পলিথিনে ভরে বাজারের দিকে রওনা দিল। ভাবল রাস্তায় কোনও ভিখিরির দেখা পেলে মিষ্টিকটা দিয়ে দেবে। সে নিজে না খেলেও কোনও ভিখারি যদি তার স্বামীর দোকানের মিষ্টি খায় তবে সব আশীর্বাদ তার স্বামীই পাবেন। কিন্তু বাজারে সেরকম কাউকে পেল না লিপিকা।
সে চিন্তিত মুখে তারকের কাছ থেকে একটি দেড় কেজি ওজনের শোল মাছ কিনে পরিষ্কার করিয়ে কাটিয়ে কুটিয়ে নিচ্ছিল। একদিন বড়ি বেগুন দিয়ে ঝোল করবে। আর একদিন কালিয়া করবে। মাছগুলো পিস করতে করতে হঠাৎ তারক বলে উঠল—
‘বউদি আপনার হাতে উটা কী? মিষ্টি মুনে হচ্চে!’
লিপিকা একটু হেসে বলল—‘হ্যাঁ! মিষ্টি।’
‘আপনাদের দুকানের নাকি?’
—‘হ্যাঁ গো....’
—‘জানেন আমি মিষ্টি খেতে খুব ভালোবাসি! সারাদিন আঁশটে গন্ধ আর মাচের সাথে থাকি তো, তাই মাচ-মানসো খেতে একেবারে মুন চায় না। মুড়ি দিয়ে মিষ্টি কিম্বা রুটি দিয়ে মিষ্টি—এগুলানই আমার খোরাক—হেঃ হেঃ’
—‘তাই বুঝি!’ হাতে যেন চাঁদ পেল লিপিকা। ‘এই নাও রসগোল্লাগুলো রাখো, খেয়ো।’
আনন্দে তারকের চোখ দুটো লাফিয়ে শোলমাছের মতো নেচে উঠল।—‘এ বাবা তাই কী হয়! ওইগুলান তো আপনি ঘরের জন্য নে যাচ্চিলেন!’
লিপিকা বলল—‘ঘরে অনেক আছে—এই নাও এগুলো এখন রাখো।’
এইভাবে দু-চার দিনের রসগোল্লা জমে গেলে লিপিকা মাছের বাজারে গিয়ে সেগুলো তারককে দিয়ে আসে আর তারকের থেকে ন্যায্যমূল্যে মাছ কিনে নিয়ে আসে। রোজ রাতে ঘুমোনোর আগে অতি কোমল কণ্ঠে দেবেনবাবু বউকে জিজ্ঞেস করেন—‘খেয়েছ?’
—‘হ্যাঁ গো হ্যাঁ! খেয়েছি!’ মিথ্যে বলতে কষ্ট হয় না লিপিকার। কারণ সে জানে একটা উপযুক্ত মিষ্টি খানেওয়ালাকে সে নিয়মিত মিষ্টি দান করে স্বামীর জন্য পুণ্য সঞ্চয় করছে।
সপ্তাহে দু’দিন তারকের হাতে মিষ্টি তুলে দিয়ে আসে লিপিকা। তাতে যে আর সব মাছওয়ালাদের চোখ টাটাত না—তা নয়। কিন্তু লিপিকা তারকের কাছে ভ্যারাইটিজ মাছ পেয়ে যেত বলে অন্য মাছওয়ালাদের ভ্রু কুচকানোতে তার কিছু যেত আসত না। পাশে রাখা মাছের রক্ত মেশানো বালতির জলে হাত দুটো ধুয়ে তারক মিষ্টির প্যাকেটটা হাতে নিয়ে গুটখা আর খৈনি খাওয়া ক্ষয়াটে দাঁতগুলো বের করে গদগদ ভঙ্গিতে হাসত। বলত—‘সামনের সপ্তাহে পুকুরের জ্যান্ত কালবোস মাচ-এনে দেব। খেয়ে দেকবেন কী সোয়াদ!’
লিপিকা একটু হাসত—তারপর পারশে মাছগুলো থলেতে ভরে বাড়ির দিকে পা বাড়াত। তবে ঘনঘন মিষ্টি পাওয়ার আনন্দে তারক আজকাল একটু বেশি কথা বলে।
—‘বউদি রান্নাবান্না আপনি করেন, না লোক রয়েচে?’
—‘না না, আমিই করি। তোমার দাদা আমার হাতের রান্না ছাড়া অন্য কাররও রান্না খেতে পছন্দ করেন না।’
—‘সে যা-ই বুলেন আপনার এমন সোন্দর চেহারা! রান্নাঘরে মানায় না একেবারে।’
লিপিকা গালে টোল ফেলে হাসে।
তারক ভেটকি মাছের আঁশ ছাড়াতে ছাড়াতে বলে——‘খুব শিগগির আমার বোনের বে’ দেব। আপনাদের যেতে হবে কিন্তু! মাচ তো অনেকেই নেয় তবে সবার সাথে কি আর ভাব হয়! টাকা-পয়সাটাই কি সব! এই যে হাসিমুখে দুটো কতা কওয়া—এইটাই তো জেবনে থেকে যায়। তাই না?’
লিপিকা থতমত খেয়ে বলে—‘নিশ্চয়।’
—‘এই যে আপনি যেদিন বাজারে আসেন আমার জন্য মিষ্টি লিয়ে আসেন—এই ভালোবাসার পোতিদান দেওয়া কি সম্ভব? বুলেন?’
—‘প্রতিদানের কোনও ব্যাপার নেই। তুমি চেনা মানুষ। মিষ্টি খেতে ভালোবাসো—তাই আনি। আমি তো কিনে দিই না। বাড়তি থাকে...সেগুলোই তোমাকে এনে দিই।’
‘হ্যাঁ সেটাই বলচি! আপনার মতো এত বড় মুন ক’জনের আচে বলুন তো!’ গলার আওয়াজ সপ্তমে চড়ায় তারক। তারকের গলার আওয়াজে অনেকেই সেদিকে তাকায়। এবার বেশ বিব্রত বোধ করে লিপিকা।
—‘তাড়াতাড়ি করো তারক। বেলা বয়ে যাচ্ছে। আর হ্যাঁ ভেটকি মাছের তেলটা মাছের সঙ্গেই দিয়ে দাও।’
ক’দিন ধরে লিপিকার শরীরটা খুব খারাপ। কাজে কর্মে এনার্জি পাচ্ছে না। সব সময় বমি বমি ভাব। মাছ ভাজতে গেলে গা গুলোচ্ছে খুব। চোখ দুটো বসে গেছে। শরীরে আরও অনেক কিছু প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। কৃষ্ণনগরে মাকে ফোন করে শরীর খারাপের কথা জানাতেই ফোনের ও প্রান্তে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন লিপিকার মা।
—‘ঠাকুর মুখ তুলে চেয়েছেন রে লিপি! তুই কালকেই মন্দিরে পুজো দিয়ে আয়। এটা ব্যামো নয়। সব শুভ লক্ষণ। জামাইকে নিয়ে একবার ডাক্তারের কাছে যাস!’
সব বুঝে লিপিকা আনন্দিত হল খুব। দুপুরে খেতে এসে সব শুনে খুশিতে আটখানা হলেন দেবেনবাবু। নিজের মস্ত ভুঁড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন—‘আজ সকালে দু’দুবার জোড়া শালিক দেখেই বুঝেছি কোনও একটা সুসংবাদ পাব।’ খুশির চোটে তিনি রাতে বাড়ি ফেরার সময় দু’খানা নয়, এক হাঁড়ি নলেন গুড়ের রসগোল্লা নিয়ে বাড়ি ঢুকলেন। অত রাসগোল্লা দেখে লিপিকার প্রচণ্ড শরীর খারাপ করতে শুরু করল। সে মাছের ঝোলও খেতে পারল না। বেশি করে কাঁচালঙ্কা দিয়ে আলু ভেজে একটা রুটি খেল।
পরদিন পাশের দো’তলা বাড়ির মাসিমাকে অনেককটা রসগোল্লা দিয়ে এল। বলল, ‘খাবেন। নলেন গুড়ের রসগোল্লা। আপনার ছেলে পাঠিয়েছে।’ বাকি রসগোল্লাগুলো একটা প্লাসটিকের ডিব্বায় ভরে বাজারের দিকে এগল। তারকের হাতে রসগোল্লার ডিব্বাটা ধরিয়ে দিতেই সে ছোপওয়ালা দাঁত বের করে হেসে বলল—‘আজ মুনে হচ্চে অনেকগুলান!’
—‘হ্যাঁ। আজ স্পেশাল। নলেন গুড়ের রসগোল্লা।’ তারক মাছ কাটা বন্ধ রেখে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে লিপিকার মুখের দিকে তাকিয়েই থাকল।
—‘বউদি আপনার শরীল খারাপ নাকি?’
—‘ওই আর কী! আচমকা খুব ঠান্ডা পড়েছে তো! তা তোমার বোনের বিয়ের ব্যাপারটা কতদূর এগল?’
—‘এই ফাল্গুনেই হবে মুনে হয়! ভালো ছেলে পাওয়া কি মুখের কতা! টিবিতে দেখেন না খবরে কত কী দেখায়! নতুন বউরে পুড়িয়ে মেরেচে। বউয়ের ওপরে নিয্যাতন কচ্চে!’
লিপিকা আর কথা বাড়ায় না। তাড়াতাড়ি বাজার সেরে বাড়ি ফেরে।
ফাল্গুন মাস চলে এল। তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা লিপিকা। এখন আর ঘন ঘন বাজার যায় না। সপ্তাহে একদিন করে বাজার গিয়ে বেশি করে মাছ-মাংস এনে ফ্রিজে তুলে রেখে দেয়। সে এখন আর মাছ খেতে পারে না। বমি হয়ে যায়। টক বা ঝালজাতীয় রান্না এখন তার প্রিয়।
একদিন ঝলমলে রোদ উঠেছে দেখে বাজারের থলেটা নিয়ে লিপিকা আস্তে আস্তে বাজারের দিকে হাঁটতে শুরু করল। থলের ভেতর বেশ ক’দিনের জমে যাওয়া রসগোল্লা ছিল। তারকের কাছ থেকে কিছুটা পাবদা আর অল্প করে দেশি ট্যাংরা মাছ নিল। মাছগুলো থলেতে ভরতে গিয়ে থলের ভেতর থেকে মিষ্টির প্যাকেটটা বের করে হাসিমুখে তারককে দিল। তারক প্যাকেটটা নিয়ে বলল—‘বউদি একটু দাঁড়ান, আপনার জন্য অনেকদিন থেকে একটা জিনিস রাখা আচে।’ এরপর সে মাছের রক্তমাখা আঁশটে ঘোলা জলে হাত দুটো ধুয়ে পাশে রাখা ময়লা গামছাখানায় হাত মুছে নোংরা ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে লিপিকাকে দিল। খৈনিতে ক্ষয়ে যাওয়া হলদে দাঁতগুলো বের করে হেসে বলল—‘বাড়িতে গিয়ে দেকবেন।’
কাজকর্মের ব্যস্ততায় সারাদিন কেটে গেল লিপিকার। তারকের দেওয়া খামের কথা মনেই ছিল না। রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর টিভি দেখতে দেখতে খামটার কথা মনে পড়ল। খামটা বাজারের থলের ভেতরেই পড়ে আছে। লিপিকা থলে থেকে খামটা বের করে এনে খাটে বসল। দেবেনবাবু মুখ ভর্তি জর্দাপান নিয়ে শুধোলেন—‘কী গো ওটা?’
—‘আরে মাছওয়ালা তারক দিয়েছে। মনে হয় ওর বোনের বিয়ে! মিষ্টিফিষ্টি বায়না দেবে হয়তো। তাই...’
—‘কই! আমাকে দাও তো দেখি! আর আমার চশমাটা দাও।’ খামের মধ্যে দেবেনবাবু একটা সাদা কাগজ পেলেন। সেটা খুলে পড়তে শুরু করলেন—
‘বওদি গো,
তুমার চোক মুক খুব শুকিয়ে গেচে দেকে আমার মুন খুব খারাপ। জানি তুমি ভালো নাই। ওরম প্যাটমোটা বুড়ো বর লিয়ে সোমসার করলে ভালো থাকা যায় না। মিসটিওলার দোস আচে তাই তুমার বাচ্চা হয়নি কো। মাচের বাজারে মদনা ছেল। দেবু ছেল। কুদদুস ছেল। উয়াদেরকে মিসটি না দিয়ে তুমি আমাকে মিসটি দাও কেন সে কি আমি বুজি না! আট কেলাস পয্যন্ত পরেচি। মুখখু না। পেরেম না থাকলে কেউ কাউরে হরদিন মিসটি খাওয়ায়? আগে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মাচের সপনো দেকতাম। ইআ বড় কাতলা মাচের সপনো। এখুন রসগোললার সপনো দেকি। সাদা রসগোললা। গুরের লাল রসগোললা। তুমার জন্নে আমার চোক ফেটে জল আসে। মাতার বালিস ভিজে চুবচুবে হয়ে যায়। কেনিং-এ বটতলায় গিয়ে যারে জিগোবে সেই বলবে তারক কত ভালো ছেলে। নেশা ভাং করে না। সবাই বুলে আমি যখুন আকাশের পানে তাকাই তখুন আমারে নাকি দেবের মতুন লাগে। দু বিগে জমি আচে আমার। তাতে ধান চাস হয়। খাওয়া-পরার কুনো অভাভ হবে না কো। তুমি আমার হিদয়ের রানি হয়ে থাকবা। চিটিতে যা লিকেচি তাতে যদি তুমার মত থাকে তাইলে সামনের দিনকে সেই সবুজ বুটিকের লাল সারিখান পরে এসো।
ইতি তুমার সেন্টু (আমার ডাকনাম)’
কী গো? কী লেখা আছে ওতে? এতক্ষণ ধরে পড়ছ!’ লিপিকা ঠ্যালা মারতেই দেবেনবাবু মূর্ছা গেলেন।
লিপিকার কাছে আমি এই গল্পটা একাধিকবার শুনেছি আর হাসতে হাসতে আমার চোয়াল ব্যথা হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম এরপর কী হল?
দু’বছরের ছেলেকে সামলাতে সামলাতে লিপিকা বলল—‘আমার সুবিধে হল। দোকান থেকে আমার জন্য রসগোল্লা আনা বন্ধ হল। আর বাজার যাওয়ার দায়িত্বভার তোমার দাদা নিজের কাঁধে নিলেন।’ তারপর সে বিশাল জোরে হেসে উঠল।