দখিনা বাতাস যতই উথাল পাথাল করুক ধরিত্রী তবু সূর্যদেবের উত্তাপের সঙ্গে যেন পাল্লা দিতে পারে না। তাই চৈত্রের দিন হোক বা রাত, সাজে চাই স্নিগ্ধতার পরশ। আজ অভিনেত্রী অমৃতা চট্টোপাধ্যায় সেজেছেন তেমনই স্নিগ্ধ সাজে। সাজের বর্ণনা দিচ্ছেন সোমা লাহিড়ী।

তাঁতে তুলির টান
বসন্তের দিনে একটু ফুলের সাজ, একটু লতাপাতার ছোঁয়া না থাকলে যেন মন ভরে না— বলছিলেন অভিনেত্রী অমৃতা। আমাদের স্প্রিং কালেকশন থেকে অমৃতা তুলে নিলেন একটি হ্যান্ডপেন্টিং করা বাংলার তাঁত। তাঁতটির অর্ধেকটা কালো, বাকিটা অফ হোয়াইট। কালোর দিকে তিন ধাপে টেম্পল পাড় রং বেরঙের। অফ হোয়াইট অংশে লাল-কমলা-হলুদে চিনার পাতা। তাঁতকে ক্যানভাস করে তুলির টানে সাজিয়েছেন শাড়ি-শিল্পী। শাড়িটি ‘শীর্ষা’জ কালেকশন’ থেকে নেওয়া। ডিজাইনার জানালেন, তাঁর এবারের বসন্ত সম্ভারে গুরুত্ব পেয়েছে ফ্লোরাল ও জিওমেট্রিক হ্যান্ডপেন্টিংয়ের মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ। রেশম ঢাকাইয়ের নতুন নকশাও তৈরি হয়েছে নববর্ষের জন্যে।
ব্লকের জাদু তাঁতে
ব্লকপ্রিন্ট? সে তো বহু যুগ ধরে চলে আসছে শাড়ির সাজে। তাহলে জাদুটা কী? ডিজাইনাররা যখন নতুন নতুন অ্যারেঞ্জমেন্টে ব্লকপ্রিন্ট ব্যবহার করে শাড়িকে সাজান তখন তা সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় ছবিতে তেমনই একটি ব্লকপ্রিন্টেড তাঁত পরেছেন অমৃতা। শাড়িটি ‘অনুষ্পা’ বুটিক থেকে নেওয়া। দুই ডিজাইনার অনুশ্রী ও শম্পা সবসময় নতুন কিন্তু করার নেশায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার চালিয়ে যান। এই শাড়িটিও তার ব্যতিক্রম নয়। মেরুন ও অফ হোয়াইট হাফ অ্যান্ড হাফ শাড়িটিতে জিওমেট্রিক স্টাইলে ব্লকপ্রিন্ট করা হয়েছে। আঁচলটিতে অরনামেন্টাল ব্লকের কারুকাজ শাড়িটিতে অন্য মাত্রায় যোগ করেছে। এই ধরনের ব্লকপ্রিন্টেড তাঁত ছাড়াও পাবেন এক্সক্লুসিভ এমব্রয়ডারি করা পার্টিওয়্যার তাঁত। এখন বেশকিছু শাড়িতে ডিসকাউন্টও পাবেন।
গামছা চেকের অ্যাপ্লিক
বেশ কয়েক বছর ধরেই ফ্যাশনে গামছা চেকের দাপট চলছে। তাকেই নতুন রূপে উপস্থিত করেছেন ডিজাইনার সোমা। তৃতীয় ছবিতে অমৃতা পরেছেন তাঁরই ডিজাইনে তৈরি একটি কটন শাড়ি। শাড়িটি হাফ অ্যান্ড হাফ। অর্ধেকটায় চওড়া বর্ডার। বাকিটায় অ্যাপ্লিক করা হয়েছে চৌকোনা ডিজাইনে। বাঁকুড়ার গামছা কেটেই অ্যাপ্লিক করানো হয়েছে জানা গেল সোমার থেকে। তাঁর ‘রাই’ স্টোরে এমন নতুন ধরনের শাড়ির প্রচুর কালেকশন এসেছে। হ্যান্ডলুমেও এবার রূপ বদল হয়েছে। আর আছে হ্যান্ড পেন্টিং ও বাটিকের স্পেশাল ডিজাইন। তসর ও সিল্কে প্রিন্ট ও পেন্টিংয়ের মেটিফেরও এবার প্রচুর পরিবর্তন।
মুগার মহা পাড়
নববর্ষ আসছে। তাই একটা ট্র্যাডিশনাল তাঁত না পরলে কি চলে?— বলতে বলতে অমৃতা তুলে নিলেন কালো টাঙ্গাইলটি। মুগার মহাপাড় শাড়িটির পাড়ে রেশমের দাঁত। আঁচলেও সূক্ষ্ম রেশমের কাজ। শাড়িটি ‘তাঁত প্যালেস’ থেকে নেওয়া। এখানে বাংলার তাঁত ও হ্যান্ডলুমের এক্সক্লুসিভ সম্ভার এসেছে নববর্ষ উপলক্ষে।
সফট সিল্কে প্রিন্টেড পাড়
অনেক সময়েই কোনও উৎসব অনুষ্ঠানে যেতে সিল্কে হাত বাড়াতে হয়। গরমের দাপটের কথা মাথায় রেখে ডিজাইনার দীপান্বিতা হাজারি তৈরি করেছেন তুলতুলে নরম সিল্কে ব্লকপ্রিন্ট। পঞ্চম ছবিতে অমৃতা পরেছেন দীপান্বিতার ‘সন্ধ্যারাগ’ বুটিকের চওড়া পাড় সফট সিল্ক।
শুধু পাড় আঁচল প্রিন্টই নয়,
নানারকম মোটিফেই প্রিন্ট
করিয়েছেন ডিজাইনার। এছাড়া অনেকরকম হ্যান্ডলুম, রেশম-কটন
ও বাংলার তাঁতে মিক্সঅ্যান্ড ম্যাচ রয়েছে তাঁর নববর্ষের
কালেকশনে।
কটন-সিল্কে জমজমাট জরি
চৈত্ররাতের পার্টিতে যেতে অমৃতার পছন্দ কেরলের কটন সিল্ক। শুধু পাড় আর আঁচলে জরির জমাটি কাজ। সবরকম উজ্জ্বল রঙে এই শাড়ি পাবেন ‘সুপ্রিয়া’জ’ বুটিকে। ডিজাইনার সুপ্রিয়া গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, দক্ষিণ ভারতের সব প্রদেশ থেকেই শাড়ি আনেন তিনি। গ্রামে গিয়ে সেখানকার তাঁত শিল্পীদের দিয়ে শাড়ি বোনান। তাই রং ও নকশায় নতুনত্ব থাকেই তাঁর কালেকশনে। দক্ষিণ ভারত ছাড়াও গুজরাত, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ থেকেও শাড়ি আনেন তিনি। কটন, কটন-সিল্ক, কটন-তসর, সিল্ক-তসর রয়েছে এবারের নববর্ষের সম্ভারে।