উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
শ্যাওলারঙা মেহেন্দির ভিজে সুগন্ধ প্রকৃতই বিয়ের বার্তা বয়ে আনে। খানিকটা প্রজাপতির মতোই রূপকধর্মী এই মেহেন্দিও। আইবুড়ো ভাত, আশীর্বাদ এই শব্দগুলোর সঙ্গে সঙ্গে মেহেন্দি, সঙ্গীত এই শব্দগুলোর এখন অবাধ প্রবেশ বাঙালি বিয়ের আসরে। বেশ কয়েক বছর ধরেই মেহেন্দি অবাঙালি গণ্ডি ছাড়িয়ে বাঙালি চত্বরে প্রবেশ করেছে এবং নিঃসন্দেহে বেশ পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে।
মেহেন্দি রাঙা হাত শুধুই বিয়েবাড়ির নয়, সে হাত কখনও ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেয় কখনও বা রাখি বাঁধে আবার সেই নকশি হাতযুগল কখনও বা আড়াল থেকে চাঁদ দেখে জল গ্রহণ করে, স্বামীর মঙ্গল কামনায়।
এভাবে মেহেন্দির গাঢ় লাল রং আজ উৎসবের প্রতীক। লাল রং সৌভাগ্যের আর তাই মেহেন্দির রং যত লাল হতে থাকে মেয়েদের মুখে আত্মতৃপ্তির হাসিটা ততটাই চওড়া হতে থাকে। কিন্তু এই গাঢ় রং পেতে, সুন্দর নকশা পেতে মানে অভিনব মেহেন্দি আর্টের সন্ধানে শহরের ইতিউতি একটু উঁকিঝুঁকি। মেহেন্দি নিয়ে কিছু জানা-অজানা তথ্য আজ সকলের জন্য।
হাত-পায়ের সাজগোজ যখন কলেজ গেটের বাইরে— কেমিস্ট্রি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সোমদত্তা কলেজের লাস্ট দু’টো ক্লাস বাঙ্ক করেছে। কারণ, সামনেই মাসতুতো দাদার বিয়ে। তাই মেহেন্দি পরতেই হবে। কলেজের গেটের বাইরেই মেহেন্দির পসরা সাজিয়ে বসে আছে অনেকে। শুধু খুঁজে নেওয়ার পালা কার মেহেন্দি তার পকেট পারমিট করে।
মেহেন্দি আর্টিস্ট অশোক দাশ। কুড়ি বছরের দোকান গড়িয়াহাট বাসন্তীদেবী কলেজের সামনে। অশোকবাবুর ছেলে অভিরাজ আজকের যুগের ছেলে, তাই তার মতামত বেশ কাটাকাটা, স্পষ্ট।
‘কলেজের ছাত্রী বেশি পাই না, তবে সারাবছর এখানে এবং নানা অনুষ্ঠানে যা কাজ করি তাতে সংসার চলে যায়।’ ওঁর স্পষ্ট জবানি। আর্টিস্ট যখন রাস্তায় নামে তাকে হয়তো রেট কনসেশন দিতে হয়। তাই দু’শো-দু’হাজার সবরকম বাজেটেই সে মেহেন্দি আঁকে। নকশা এবং কতটা অংশে মেহেন্দি লাগবে তার ওপর দাম নির্ভর করে। মেহেন্দির গুণমান জানতে চাইলে সে বলে, সে ভালো মেহেন্দি, যা ত্বকের ক্ষতি করে না এমন জিনিসই ব্যবহার করে। তাও কারও সন্দেহ থাকলে সে নিজে বানিয়ে মেহেন্দি নিয়ে এলেও অভিরাজ তাঁকে ফেরায় না।
মল কালচারের শহরে মেহেন্দি হাজির মলেও— দীর্ঘদিন দিল্লিতে ছিলেন মেহেন্দি আর্টিস্ট মুন্না সিং। কিন্তু গত বেশ কয়েক বছর তিনি কলকাতায়। বিভিন্ন শপিং মলে যিনি মেয়েদের হাত সাজিয়ে চলেছেন তাঁর পটু হাতের জাদুতে। সিটি সেন্টার, সাউথ সিটি এবং বর্তমানে কলকাতার অ্যাক্রোপলিস মলে মুন্নার মেহেন্দি আউটলেট। তিন বছরের ছোট মেয়ে থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মহিলা মুন্নার কাছে আসে। দু’শো টাকা থেকে শুরু করে ন’হাজার টাকার মেহেন্দি আঁকার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। জায়গা বিশেষে বাঙালি কাস্টমারই বেশি। হাত-পা, গাল, কাঁধে মেহেন্দি লাগানোর অভিজ্ঞতাও আছে। এটাই যেহেতু আমাদের মূল জীবিকা তাই কোয়ালিটি বজায় রাখি কারণ আমাদের হাতের মেহেন্দি রং তো ওঠার সুযোগই পায় না। তাই কেমিক্যাল ব্যবহার করলে কাস্টমারের আগে আমরা নিজেদেরই ক্ষতি করব। ন্যাচারাল মেহেন্দিই আমাদের বৈশিষ্ট্য। দরদাম করার সুযোগ নেই এখানে। মেহেন্দি ও মেহেন্দি তেলের সুগন্ধ নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় চোখে পড়ল এক শ্যামলা মেয়ে নিজের হাতের মেহেন্দির সুন্দর রং দেখিয়ে ধন্যবাদ জানাচ্ছে মুন্নাকে, দেখলাম একটা খুশির গাঢ় রং।
এক্সপার্ট হাত, মেহেন্দি টাচ। ত্বক এবং সেনসিটিভিটি আর ১০০ ভাগ প্রাকৃতিক মেহেন্দি। এ প্রসঙ্গে ‘ফ্লোরাস’ বিউটিপার্লারের কর্ণধার শর্মিলা সিং ফ্লোরা বললেন, আজকের জেনারেশন যদিও পার্মানেন্ট নকশা অর্থাৎ ট্যাটুর দিকেই ঝুঁকছে তবু বলব মেহেন্দির জায়গা একেবারে স্বতন্ত্র। আমরা যাঁরা সাজি এবং সাজাই তাঁরা সর্বদাই মাথায় রাখি যে আমাদের কাস্টমার কখনওই, ফ্লায়িং নয়। তাই তাদের থেকে অর্জিত বিশ্বাসযোগ্যতা যাতে না হারায় সে কথা সর্বদা আমাদের মাথায় থাকে। পিওরিটি এমনই একটা জিনিস যা মানুষের চোখে পড়বেই, মানুষ বুঝবেই। এই প্রসঙ্গে বলব, মেহেন্দি তখনই সেফ যখন তা কেমিক্যাল ফ্রি। এতে ব্যয়ভার বাড়ে ঠিকই কিন্তু ত্বকের কোনও সমস্যা হয় না। রাজস্থান থেকে পিওর মেহেন্দি আমার পার্লারে আসে। সম্পূর্ণ ন্যাচারাল জিনিস যেমন খয়ের, কফি, লবঙ্গ ইত্যাদি মিশিয়ে মেহেন্দির পেস্ট তৈরি। বিভিন্ন দেশের নকশা মেহেন্দি আর্ট-এ আমি ব্যবহার করি। ব্রাইডাল মেহেন্দির চল বেশি হলেও পার্বণমুখর আমাদের এই দেশে অনুষ্ঠান যেমন চলতেই থাকে তেমনই চলে মানুষের আনন্দ এবং সেই আনন্দ ঘিরে তাদের সাজগোজ। তাই বিয়েবাড়ির সানাই, গায়ে হলুদ, আশীর্বাদ, সঙ্গীতের পাশাপাশি মেহেন্দি সকল উৎসবের, সারা বছরের।