সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার চিন্তা থেকেই আদর্শ আচরণ বিধির ধারণা। ১৯৬২-তে এবং তার পর আরও একাধিক নির্বাচনে অভিযোগ ওঠে যে কেন্দ্রে এবং রাজ্যে রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলগুলি ভোটে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছে। তাই ১৯৭৯ সালে আদর্শ আচরণ বিধিতে এমন একাধিক বিষয় যোগ করা হল যাতে করে কোনও স্তরের ক্ষমতাসীন দল আর বাড়তি সুবিধা নিতে না-পারে—ভোটের কাজে নিজ নিজ প্রশাসনকে ব্যবহার করা সম্ভব না-হয়—রাজ্যের এবং কেন্দ্রের মন্ত্রীরা যেন কোনোভাবেই নির্বাচনী প্রচার আর সরকারি কাজকে মিলিয়ে মিশিয়ে ফেলতে না-পারেন। পুলিস, সাধারণ প্রশাসন, গাড়ি, হেলিকপ্টার, হেলিপ্যাড, নির্বাচনী জনসভার মাঠ, মিটিং মিছিলের রাস্তা থেকে সংবাদ মাধ্যমকে ব্যবহার প্রতিটি ব্যাপারেই যাতে নিরপেক্ষতা বজায় থাকে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কমিশনকে আরও দেখতে হয়—দল বা দলীয় প্রার্থীর সুখ্যাতি করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের নামে অন্যায় কুৎসা, অসংসদীয় ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে কি না—টাকা কিংবা অন্যকিছু দিয়ে ভোটারদের প্রলোভিত করা অথবা কোনোভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে কি না। ধর্ম এবং জাতপাতের নামে কিংবা ধর্ম এবং জাতিতে জাতিতে বিভাজন ঘটিয়ে ভোট চাওয়াটাও অন্যায়। সেই ব্যাপারেও কমিশনকে সতর্ক থাকতে হয়। আদর্শ আচরণ বিধি বলবৎ হওয়া মাত্র কমিশনের তরফে নানাভাবে সংশ্লিষ্ট সকলকেই সতর্ক করে দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও আমরা দেখি, কী রাজ্যে, কী কেন্দ্রে যাঁরা ক্ষমতাসীন রয়েছেন কমবেশি তাঁরা সকলেই নিজ নিজ প্রশাসনের অপব্যবহার করেন—কেউ সূক্ষ্ম কৌশলে, কেউ-বা সমস্ত লাজলজ্জার মাথা খেয়ে।
কমিশনের ক্ষমতা কত দূর তা দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন তিরুনেল্লাই নারায়ণাইয়ার সেশন। টি এন সেশন ১৯৯০ সালে দেশের চিফ ইলেকশন কমিশনার পদে বসেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এই পদটি ‘মাস্টার মশাই আপনি কিন্তু কিছু দেখেননি’ গোছের কোনও পদ নয়। সংবিধান কমিশনকে যতটুকু ক্ষমতা দিয়েছে তা পুরোটাই প্রয়োগ করার অধিকারী তারা। তার জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে কোনও দাপুটে মুখ্যমন্ত্রীকেও পরোয়া করার প্রয়োজন নেই। এমন ব্যতিক্রমী চরিত্রের জন্য দেশের প্রায় সমস্ত শাসক দলেরই বিরাগভাজন হয়েছিলেন সেশন। কোনও কোনও স্বনামধন্য নেতা তাঁকে নানাভাবে আক্রমণ করেছেন, এমনকী গালিগালাজও করেছেন অসংসদীয় ভাষায়। তবু, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ওই পদ অলংকৃত করতে গিয়ে সেশন কারও সঙ্গে কোনোরকম আপস করার কথা চিন্তাও করেননি। চলতি নির্বাচন পর্বেও কমিশন বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে দেখে দেশবাসী একটু আশ্বস্ত বোধ করছে। আশা করা যায়, কমিশন এই কঠোরতা বজায় রেখেই চলবে। দেশে আর একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে নির্বাচনের বাকি ছয় দফা এবং ভোট গণনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি।