সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
এর আগেও বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে বিশেষ কিছু রাজ্যে বিজেপির আসন সংখ্যা নিয়ে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় আর হরিয়ানা মিলে মোট ২৩৫টি আসন। তার মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছিল ২০০। সঙ্গে কোথাও কোথাও সহযোগীরাও ছিল। অর্থাৎ এখানে মূল তথ্য হল বিজেপি বিপুল সংখ্যক আসন পেয়েছিল এই রাজ্যগুলো থেকে। এবারও যদি বিজেপি সেই আসনগুলো মোটামুটি ধরে রাখতে পারে তাহলে তারা অবশ্যই ক্ষমতায় থাকবে। আর যদি তা না পারে, তাহলে সুযোগ আসবে অন্যদলের সামনে। সাম্প্রতিক যে তথ্য এই মুহূর্তে হাতে আছে তা হল মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ের তিন বিধানসভা ভোটের ফলাফল এবং বিহার ও উত্তরপ্রদেশে বেশ কিছু উপনির্বাচনের তথ্য। তা থেকে অবশ্যই একথা পরিষ্কার যে এই পাঁচ রাজ্যে বিজেপির গত লোকসভায় যে পরিমাণ আপেক্ষিক ভোট শতাংশ ছিল, তা অনেকটা কমেছে। এক্ষেত্রে আপেক্ষিক ভোট শতাংশ বলতে আমরা বোঝাতে চাইছি যে গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি (সপা) এবং বহুজন সমাজ পার্টির (বসপা) ভোট ভাগ হওয়ায় বিজেপির ভোট তুলনায় আসন জেতার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। কিন্তু সপা-বসপার সমর্থন পাটিগণিতের নিয়মে এক হয়ে গেলে (সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলো যে কথা বলছে) তখন কিন্তু আসন পাওয়ার নিরিখে বিজেপির আপেক্ষিক ভোট শতাংশ কম হয়ে যেতে পারে। পর্যবেক্ষণ বিহারের ক্ষেত্রে আবার অন্যরকম। সেখানে নীতীশকুমারের জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) লালুর রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) সঙ্গে আড়ি করে বিজেপিতে যোগ দিলেও উপনির্বাচনগুলোতে বিজেপি-জেডিইউ জোট মোটেও ভালো ফল করে নি। সেই হিসেবে জোট করেও এনডিএ-র আপেক্ষিক ভোট শতাংশ ভালো নয়। অন্যদিকে সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে ভোট শতাংশে খুব একটা খারাপ ফল করে নি বিজেপি, কিন্তু আসনের হিসেবে হেরেছে। ছত্তিশগড়ে জনমত এবং আসনের হিসেবে, দু ক্ষেত্রেই বিজেপির ফল বিপুল খারাপ। সেই প্রসঙ্গেই একটা প্রশ্ন বারবার উঠছে যে সমীক্ষকরা হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলোতে বিজেপিকে বেশ কিছু আসন দিচ্ছেন কীভাবে? এর পুরোটাই কি পুলওয়ামা হামলার পরে বিজেপির ফিরে আসা?
এখানে অন্য একটি রাজনৈতিক ব্যাখ্যাও আছে, তা হল কংগ্রেসের কর্মকাণ্ড। কয়েকটি সহজ বিষয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বারবার চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। প্রথম প্রশ্ন হল মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ে ক্ষমতা দখল করার পর এই তিন রাজ্যের আসনগুলির দিকে ঠিক কতটা নজর দিচ্ছে কংগ্রেস? এই তিন রাজ্য মিলে আসনসংখ্যা ৬৫, তার মধ্যে আগেরবার বিজেপি পেয়েছিল ৬২টি আসন। সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করলে এই তিন রাজ্যে অবশ্যই কংগ্রেসের আসন তিরিশের আশেপাশে পৌঁছয়। আর সেক্ষেত্রে পাটিগণিতের নিয়মে বিজেপির আসন ততগুলিই কমতে হয়। এবার এ যুক্তি আসতেই পারে যে বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটের প্রেক্ষিত আলাদা, এবং তার ওপর আছে জাতীয়তাবাদের ঢেউ। কিন্তু এসব ধরেও যদি বিজেপি আবার এই ৬৫-র মধ্যে ৪৫ বা তার বেশি আসন পেয়ে যায়, তাহলে কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে কিছু প্রশ্ন কি উঠবে না? সদ্যগঠিত বিধানসভায় এত উৎসাহ নিয়ে জিতে আসার পর তা যদি লোকসভা আসনে কিছুমাত্র প্রতিফলন না ঘটাতে পারে, তাহলে কংগ্রেসের সংগঠন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে বইকি। নির্বাচনের ঠিক মুখে আয়কর দপ্তরের হানার মুখে পড়েছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথের পরিজনেরা। সে নিয়েও জাতীয় সংবাদমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু কংগ্রেসের প্রতিবাদ সেরকম তীক্ষ্ণ নয়। রাহুল গান্ধী শুধু আমেথিতে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলেন না, যেতে হল সুদূর কেরলের আসন ওয়ানাদে। হিন্দি বলয়ের বিধানসভায় জেতা তিন রাজ্যে কোথাও তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হলে তো অবশ্যই তাঁর দলের কর্মীদের উৎসাহ অনেকটা বাড়ত। তা না করে তিনি গেলেন কেরলে, যেখানে বামেদের আসন কমিয়ে আর কংগ্রেসের আসন বাড়িয়ে তাঁর আখেরে কোনও লাভ নেই। কারণ কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করলে অবশ্যই তারা বামেদের সমর্থন পেত। তুলনায় সেই পরিশ্রমটা হিন্দি বলয়ে করলে কংগ্রেসের সুবিধা আর বিজেপির অসুবিধা হতো তুলনায় বেশি।
আরও গোলমেলে বিষয় হল হিন্দি বলয়ে গান্ধী পরিবার সবথেকে বেশি পরিশ্রম করছেন উত্তরপ্রদেশে। তাঁদের পরিবারের জন্যে আসন দুটি সপা-বসপা শুরুতেই ছেড়ে রেখেছিল। পরিবারের তিনজনই, এমনকী জামাইকে যোগ করে চার জনও ভোটে দাঁড়ালে চারটে আসনও হয়তো ছেড়ে দিত বুয়া-ভাতিজা। কিন্তু তা না করে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে দায়িত্ব দেওয়া হল পূর্ব উত্তরপ্রদেশের। অবশ্যই কংগ্রেসের পালে হাওয়া লাগল, গঙ্গায় বজরা ভাসালেন নেত্রী। কিন্তু সেই হাওয়ায় ভোট বাড়লেও আসন বাড়ার সম্ভাবনা খুব কম। উচ্চবর্ণের হিন্দুদের ভোটে যদি কংগ্রেস ভাগ বসাতে না পারে, তাহলে তারা যা ভোট পাবে সেটাই কমবে সপা-বসপার। পাটিগণিতে আবার সুবিধে পাবে বিজেপি। তাই শুধু পড়শি দেশের সঙ্গে যুদ্ধের হুঙ্কার নয়। সম্ভবত কংগ্রেসের কিছু আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে সমীক্ষাগুলিতে। সেই কারণেই সমীক্ষাগুলো হিন্দি বলয়ে তুলনায় ভালো ফল দেখাচ্ছে বিজেপির। যেখানে নিজেদের ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি সেখানে কংগ্রেসের সর্বময় নেতৃত্বের দেখা নেই, যেখানে বিজেপির সঙ্গে তাদের সরাসরি লড়াই সেখানে কংগ্রেসের প্রচার স্তিমিত আর যেখানে ভোট ভাঙাভাঙিতে বিজেপির সুবিধে সেখানে বিপুল হইচই করছেন তারা। মোদি যে পশ্চিমবঙ্গে বারবার কেন আসছেন তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার, কিন্তু রাহুল গান্ধী এই রাজ্যে দু-চারটি আসনের জন্যে খুব বেশি সময় দিলে তখন সন্দেহ হবেই যে তিনি কি তাহলে হিন্দি বলয়ে উত্তরপ্রদেশ ছাড়া অন্য রাজ্যগুলোতে বিজেপির বিরুদ্ধে খুব প্রচার করতে চাইছেন না?
জনসাধারণ কিন্তু নজর রাখছেন রাহুল গান্ধীর প্রচারের পরিসংখ্যানে। রাজ্য হিসেবে কোথায় তিনি কতটা সময় দিচ্ছেন সে হিসেবটা কংগ্রেসের আকাশপাতায় দেখতে পাওয়া গেলে ভালো হতো। জ্ঞানেই হোক বা অজ্ঞানে, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সুকৌশলী বিজেপি বিরোধিতা কিন্তু প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে না। তুলনায় আগ্রাসী বিজেপি নিজের দলকে জেতাতে চেষ্টা করছে মারাত্মক। সমীক্ষার ফল আপাতত জনমতের প্রতিফলনের থেকে বেশি সেই ইঙ্গিতটাই দিচ্ছে।
লেখক ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক। মতামত ব্যক্তিগত