সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
মামলাটি ছিল প্যারাগ্রাফ ৩২২ (৫) নিয়ে। অভিযোগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ব্যাপকভাবে এর অপব্যবহার করছে। কারণ, এই আইনের মাধ্যমে কয়েকশো মানুষের ব্রিটেনে থাকার আবেদন খারিজ করা হয়েছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের মে পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জন এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রেই করের রেকর্ডে সংশোধন করার কারণে তাঁদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই এই প্রবণতাকে ‘এশিয়ান উইন্ডরাশ স্ক্যান্ডেল’ বলছেন। এনিয়ে ব্রিটেনের বহু সাংবাদপত্রে একঝাঁক লেখালেখি প্রকাশিত হয়েছে। ছাপা হয়েছে এর শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকারও।
রিপোর্ট বলছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অন্তত ৩০০ জন উচ্চ প্রশিক্ষিত অভিবাসীর আবেদন খারিজ করার চেষ্টা করেছে। যাঁদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতীয় ও পাকিস্তানি। এইরকমই চারটি আবেদন খতিয়ে দেখে এদিন এই রায় দিয়েছে আপিল আদালত। তাঁদের মধ্যে তিনজন ভারতীয় ও একজন পাকিস্তানি। উচ্চ প্রশিক্ষিত ক্যাটেগরিতে ব্রিটেনে তাঁদের ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন (আইএলআর) খারিজ করা হয়েছিল। লন্ডনে রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিসে এই চারটি মামলার একযোগে শুনানি হয়। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদের বিরুদ্ধে গিয়েছে আদালতের রায়। আদালত বলেছে, তাঁর কাজকর্মে আইনগতভাবে ফাঁকফোকর রয়েছে। ৬০ পাতার এই রায়ে কড়া সমালোচনা করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের।
হায়দরাবাদের আশিস বালাজিগারি বলেন, এটা বড় স্বস্তির বিষয়। কিন্তু ভবিষ্যতের যাত্রাটা খুব দীর্ঘ ও কঠিন। আদালত বলেছে, তাঁর বিরুদ্ধে ‘অসৎ কাজকর্মে’র যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তা নিয়ে তাঁকে বক্তব্য জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়নি। আদালতের এই রায়ের ফলে এবার তাঁর আইএলআর আবেদন পুনর্বিবেচনা হওয়া উচিত। সোমনাথ মজুমদারের ক্ষেত্রেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিক থেকে স্বচ্ছভাবে প্রক্রিয়াগত দায়িত্ব পালন হয়নি বলেই মনে করছে আদালত। মজুমদার ভারতে ফিরে এসেছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ ওই আইনের বলে ব্রিটেনে তাঁর বসবাসের অধিকার খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ভারতীয় বংশোদ্ভূত আভিস কাওস, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের ক্ষেত্রেও বিষয়টির পুনর্বিবেচনা হওয়া উচিত। তাঁদের মতোই পুনর্বিবেচনা করতে হবে পাকিস্তানি নাগরিক আমোর অ্যালবার্টের মামলাটিও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক মুখপাত্র এবিষয়ে বলেন, আদালতের রায় বিবেচনা করবে দপ্তর। সতর্কতার সঙ্গে তার জবাব দেওয়া হবে।
ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বহু মানুষ রয়েছেন যাঁরা এক দশকের বেশি সময় ধরে ব্রিটেনে কাটিয়েছেন। ব্রিটেনেই তাঁদের সন্তান হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে মাত্র ১৪ দিনের সময় দেওয়া হয় ব্রিটেন ছাড়ার জন্য। অন্য কোনও ক্যাটেগরিতে ভিসার আবেদন জানানোর অনুমতি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। যাঁরা ব্রিটেনে থেকে এর বিরুদ্ধে আবেদন জানিয়েছেন, তাঁদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের মধ্যে পড়তে হয়েছে। কাজের অধিকার, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স এমনকী বিনামূল্যের এনএইচএস চিকিৎসার সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রেও।
এরই মধ্যে এদিন ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) প্রকাশিত একটি রিপোর্টে ভয়াবহ তথ্য সামনে চলে এসেছে। এনএইচএস ব্যবস্থায় উচ্চ হারে চার্জ চাপার আশঙ্কায় বেশ কিছু গর্ভবতী অভিবাসী প্রিনাটাল ও পোস্টনাটাল চিকিৎসা থেকে দূরে থাকছেন। এমনকী ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগে আক্রান্ত অভিবাসীরাও ব্যাপক খরচ চাপার আশঙ্কায় চিকিৎসা এড়িয়ে যাচ্ছেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত এক অভিবাসী মহিলার ঠিক এই কারণে মৃত্যু হয়েছে বলেও খবর। এনএইচএস-এ অভিবাসীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চার্জ আরোপের এই বিষয়টি পুর্ণাঙ্গভাবে খতিয়ে দেখার দাবি জানানো হয়েছে বিএমএ-র তরফে।