সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ রুখতে এনআরসির দাবিকে ঘিরে গত প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে অসমের রাজনীতি বারবার অস্থির হয়েছে। বিতর্ক তৈরি করেছে বিদেশি বিতাড়নের উদ্যোগ। রাজ্যে জাতিগত, ভাষাগত বা সাংস্কৃতিক বিভাজন জটিল সংঘাতের রূপ নিয়েছে। গত বছর জুলাই মাসে এনআরসির দ্বিতীয় খসড়া তালিকা প্রকাশ হয়। সেখানে অসমে বসবাসকারী প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের নাগরিকত্বের পরিচয় নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। বাদ যাওয়া ব্যক্তিদের শুনানি চলছে। রাজ্য জুড়ে খোলা হয়েছে নাগরিক সেবা কেন্দ্র। স্বভাবতই নানা বাধা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে আগামী জুলাই মাসে চূড়ান্ত হতে চলেছে এনআরসি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং তদারকিতে এনআরসির কর্মকাণ্ড চললেও মুখ্যত বরাক উপত্যকার বাংলাভাষী মানুষের মনে বিদেশি তকমা দিয়ে বিতাড়নের আশঙ্কা দেখা দেয়। শুরু হয় প্রতিবাদ। বিরোধীদের অভিযোগ, এনআরসি আদতে অসমে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনকেই উস্কে দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজ্যে ও কেন্দ্রে বিজেপি সরকার এই এজেন্ডা নিয়েই লোকসভা ভোটের আবহ উত্তপ্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বাংলায় এনআরসি গঠন করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করার বিষয়ে সরব হতেই প্রতিবাদ করেছেন মমতা। বিজেপির এই ‘সাম্প্রদায়িক’ উদ্যোগের বিরোধিতাকে পুঁজি করেই এরাজ্যে ঘাস-ফুল প্রতীক নিয়ে লোকসভা নির্বাচনের ময়দানে নেমেছে তৃণমূল। ‘ক্ষমতা থাকলে করে দেখাক, বাংলায় এনআরসি করতে দেব না।’ নিজের রাজ্যে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক নিরঙ্কুশ আধিপত্যের অধিকারী মমতা আগাম হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন মোদি-অমিত শাহেদের।
অথচ এনআরসির আঁতুড় ঘর অসমে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের আসরে এখন এনআরসি গঠন ও আপডেটিং প্রক্রিয়ায় গতি আনার কৃতিত্ব কার, তা নিয়ে চলছে চাপানউতোর। স্বাভাবিক কারণেই বিজেপি এই ইস্যুকে ভোটের বাজারে হাতছাড়া করবে না। নির্বাচনী সভায় নিজেদের কৃতিত্ব জাহিরে পিছিয়ে নেই কংগ্রেসও।
প্রথম ইউপিএ জামানায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং অসম চুক্তি রূপায়ণের পর্যালোচনা বৈঠক করেছিলেন। সেখানেই এনআরসির আপডেটিং নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, তরুণ গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারও সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। প্রত্যাশিতভাবেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপান বোরার এই দাবি মানতে রাজি নয় বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি রূপম গোস্বামীর পাল্টা, অসমে সর্বানন্দ সোনেওয়াল সরকার ও কেন্দ্রের মোদি সরকারের মদতে এনআরসি আপডেটিং প্রক্রিয়া গতি পায়। এই সুবাদে রাজ্যে ও কেন্দ্রে এক দলের সরকার থাকার উপকারিতার ব্যাখ্যায় এই এনআরসিকেই দৃষ্টান্ত করছেন বিজেপির রাজ্য নেতা।
যদিও আসুর মতে, দুই যুযুধান রাজনৈতিক দল ভোটারদের যাই বোঝাক না কেন, আটের দশক থেকে তাদের ছাত্র আন্দোলনই এই কৃতিত্বের অধিকারী। সংগঠনের উপদেষ্টা সমুজ্জল ভট্টাচার্য মনে করেন, বর্তমানে এনআরসির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছনোর নেপথ্যে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের অবদান। ভোটের বাজারে কোনও রাজনৈতিক দলের তা অস্বীকার করলেও তাতে ইতিহাস বদলাবে না।