সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
বাগযুদ্ধে মমতা কটাক্ষ করে বলেছেন, ভারতীয় সেনা নাকি এখন মোদি সেনা! সেনার রক্ত নিয়ে রাজনীতি! এয়ার স্ট্রাইককে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এবার হবে ভোটের স্ট্রাইক, জনগণের ভোটের স্ট্রাইক। মিথ্যাচারী, অপদার্থ, অকর্মণ্যকে ক্ষমতাছাড়া করুন। একটা করে ভোট দিন, জোড়াফুলে ভোট দিন, দিল্লিকে দেখিয়ে দিন, বিজেপি আর মোদিকে কবর দিন।
শিলিগুড়ির সভায় এদিন প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীকে ‘উন্নয়ন বিরোধী’ তকমায় বিঁধেছেন। তার জবাবে মমতা বলেন, রাজ্যে উন্নয়ন হয়নি, গরিব মানুষ খেতে পাচ্ছে না—এসব মিথ্যা কথা। প্রধানমন্ত্রী তাঁর শিষ্টাচার ভুলে, চৌকিদার হয়ে এখন ‘মিথ্যাচার’ করছেন। প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর প্রশ্ন, তোমার কী আছে মোদিবাবু? তোমার রাজত্বে আত্মঘাতী হয়েছেন ১২ হাজার কৃষক। শুধুমাত্র ১৭-’১৮ আর্থিক বছরে কাজ হারিয়েছেন প্রায় দু’কোটি মানুষ।
আবার অন্যদিকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জোড়া আক্রমণ করেন মোদি। মমতাকে উন্নয়নের ‘স্পিড ব্রেকার’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। এমনকী মুখ্যমন্ত্রীকে কার্যত দেশবিরোধী আখ্যা দিয়েছেন তিনি। মোদি বলেছেন, পাঁচ বছরে যে গতিতে উন্নয়নের কাজ করেছি, বাংলায় তা করতে পারিনি। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে স্পিড ব্রেকার আছে। আর এই স্পিড ব্রেকারের নাম ‘দিদি’। আবার কখনও বালাকোটে জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলার ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে রাজ্যের শাসকদলের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনায় মুখর হন মোদি। প্রধানমন্ত্রী এও বলেছেন, গরিবের টাকা দিদির নেতা-মন্ত্রীরা লুট করেছে। দিদি চান না গরিবি শেষ হয়ে যাক। কারণ, তিনি গরিবদের নিয়ে রাজনীতি করেন। মোদি প্রশ্ন তুলেছেন, বালাকোটে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রমাণ কে চেয়েছেন? জঙ্গিদের লাশ কে দেখতে চেয়েছেন? মিশন শক্তির মতো ঐতিহাসিক ঘটনাকে কে নাটক বলেছেন?
এই তোপ ও পাল্টা তোপের মূল সারমর্মটুকুই হল একটি দলের বিরুদ্ধে অন্য দলের নীতি-আদর্শগত লড়াই। বিশেষত মোদির ভাষণে এবার নতুন কোনও দিশাই খুঁজে পাননি অনেকে। আচ্ছে দিনের স্বপ্ন নেই। নেই কর্মসংস্থানের বিশেষ কোনও প্রতিশ্রুতি। দেশভক্তি ও জাতীয়তাবাদের মাহাত্ম্য প্রচারেই সময় খরচ করলেন তিনি। এমনকী তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে যে ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা, তারও জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেননি তিনি। এমনকী একদা ‘স্বপনোঁ কা সওদাগর’ মোদির মুখে ভবিষ্যৎ ভারত নিয়েও কোনও উচ্চবাচ্য শোনা গেল না। তাঁর সময়কালে যে যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, শিল্প-কারখানা ইত্যাদির বেশ কিছুই তাঁর সরকার করতে ব্যর্থ হয়েছে, সে সম্পর্কেও দায় স্বীকার করতে বা আত্মসমালোচনা করতে দেখা যায়নি তাঁকে। কেবলমাত্র একচেটিয়া মমতা-আক্রমণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন নিজেকে।
বাংলায় তাঁর মূল প্রতিপক্ষ মমতা। শুধু বাংলা কেন, গোটা ভারত জুড়েই দিল্লিতে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সে কারণে সুকৌশলে বিভিন্ন প্রসঙ্গের অবতারণায় তাঁর মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলেন যেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে— দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজ্যের আমজনতা যে নতুন স্বপ্নের ভোর দেখার আশা করেছিলেন, তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শুধুমাত্র ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঘৃণা, কুৎসা ছাড়া এই বাগযুদ্ধে সাধারণ মানুষের স্বার্থবহনকারী কিছুই জোটেনি ঝুলিতে। কিন্তু, সাধারণ ভোটার অর্থাৎ আমরা তো বেশি কিছুর দাবিদার নই! আমরা চাই, আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে। তা জুটল কই?