সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
নীতিনের ওই বক্তব্য অত্যন্ত স্বাভাবিক ও সংগত হলেও বর্তমান ঘোলাজলের রাজনীতির বাজারে যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য বলেই মনে হয়। কারণ, ইদানীং রাজনীতির লোকেদের মুখে এমন সত্যি কথা খুব একটা শোনা যায় না। দু-একজন ব্যতিক্রমীকে বাদ দিলে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের কোনওরকম সমালোচনা তো দূরের কথা, কাজে যথাযথ পর্যালোচনাকেও বরদাস্ত করার মানসিকতা পোষণ করেন না। তিনি বা তাঁরা যা করেছেন তার তুল্যমূল্য বিচারের এক্তিয়ার একান্তভাবেই নিজেদের মুঠোয় রাখতে চান। অন্য কেউ, তা আবার সাধারণ নাগরিক তথা ভোটাররা নেতাদের কাজের বিচার করতে পারেন, এমনটা মেনে নিতে রাজি থাকেন না তাঁরা। তাই নির্বাচনী প্রচারসভাগুলিতে নেতাদের মুখনিঃসৃত বাণীগুলির প্রতি একটু সযত্নে কান পাতলেই বিষয়টির বাস্তবতা টের পাওয়া যায়। বিশেষ করে নীতিন গাদকারি নিজে যে মন্ত্রিসভার সদস্য তার প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দলের উচ্চতম স্তরের নেতাদের মুখে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটিই কথা, গত পাঁচ বছরে তাঁরা যা করেছেন, দেশের মানুষের কল্যাণে তাঁদের যা অবদান তার তার নজির মেলা কঠিন। তাঁরা ক্ষমতায় আসার আগের সত্তর বছর ভারতবাসী সীমাহীন বঞ্চিত, অবহেলিত, প্রবঞ্চিত ছিল। গত পাঁচ বছরে তাঁরা সেই অন্যায়, অবিচার, বঞ্চনা, লাঞ্ছনার অবসান তো ঘটিয়েইছেন, তার উপর দেশবাসীকে নতুন দিশা দেখিয়েছেন। নানা সমীক্ষায়, বহু বিশেষজ্ঞের বিবেচনায় গত পাঁচটি বছর নির্দিষ্ট দু-একটি ক্ষেত্রে দেশ সত্যিই কিছুটা উন্নতি করেছে। কিন্তু এর চেয়ে বড় সত্য হল, একশো পঁচিশ কোটি মানুষের বাসভূমি ভারত গত পাঁচ বছরে সামগ্রিক বিচারে এগিয়েছে যত, পিছিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। দেশে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, গত সাড়ে চার দশকের মধ্যে মোদির আমলেই বেকারত্বের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। প্রত্যাশামতো নতুন কর্মসংস্থান হয়নি, উল্টে সরকারের বিভিন্ন অবিবেচক পদক্ষেপের ধাক্কায় লক্ষ লক্ষ সকার মানুষ নতুন করে বেকার হয়েছে। রান্নার গ্যাস, জ্বালানি তেল থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে, চাষের লোকসানের ধাক্কা সামলাতে না পেরে কয়েক হাজার চাষি আত্মহত্যা করেছেন, নানা বাহানায় বহু নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচার কোথাও মাত্রাছাড়া আকার নিয়েছে, গণপ্রহার থেকে শুরু করে নির্মমভাবে খুন-জখম পর্যন্ত ঘটেছে। বহু অভিযুক্তই শাস্তি পায়নি। বরং কারও কারও জন্য পারিতোষিকের ব্যবস্থা হয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে বহু নাগরিক স্বদেশে নিরাপত্তাহীনতার মানসিকতায় আক্রান্ত হয়েছেন। হাজার হাজার নাগরিক নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কিত। কিন্তু নেতা-মন্ত্রীরা ওই বিষয়গুলি স্বীকার করার তো দূর অস্ত, উচ্চারণ পর্যন্ত করতে চান না। তাঁরা দিনরাত তারস্বরে একতরফাভাবে একটা কথাই বোঝাতে উদগ্রীব, এবারও ভোটটা তাঁদেরই দেওয়া হোক। তাঁদেরই দল ফের ক্ষমতায় আসুক।
এই অদ্ভুত আবহে শাসকদলের এক বিশিষ্ট নেতা নীতিন গাদকারির কণ্ঠস্বরটি একটিু অন্যরকম লাগে বইকি! ভোটাধিকার প্রয়োগের আগে তিনি বিচার বিবেচনার যে আহ্বান জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটাই কাম্য হওয়া উচিত। এটাই নীতির রাজনীতি।